রাগ করেছেন তো মরেছেন! তাই …
রাগ কোনো ভাবেই উপকারে লাগে না, বরং শরীর এবং মনের এত মাত্রায় ক্ষতি করে যে অনেক সময়ই সেই ক্ষতি সামলানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই তো রাগ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
রাগের মতো শক্তিশালী ইমোশানকে যদি ঠিক মতো সামলানো না যায়, তাহলে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। রাগের সময় আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে কর্টিজল এবং অ্যাড্রিনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মন খারাপ হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্ট রেট এবং রক্তচাপও মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে যে কোনও সময় মারাত্মক কোনও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে একাধিক মারণ রোগের খপ্পরে পরার সম্ভাবনাও যায় বেড়ে।
মানসিক অবসাদ : মানুষ তখনই খুব রেগে যায় যখন মন খুব খারাপ হয়। ফলে একদিকে মন খারাপ, তার উপর স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়া। এই দুয়ে মিলে মনকে এত মাত্রায় ঝাঁঝরা করে দেয় যে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের মতো রোগ মাথায় চেপে বসে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে যে যে রোগের প্রকোপ মারাত্মক বৃদ্ধি পয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই পিছনে হাত রয়েছে মানসিক অবসাদের। এবার বুঝেছেন তো রাগের সঙ্গে শরীরের ভাল-মন্দের কতটা যোগ রয়েছে।
মাথা যন্ত্রণা : রাগের সময় শরীরে এমন নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে যে দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হেডেক এত ক্রণিক আকার ধারণ করে যে কষ্ট কমতেই চায় না।
উচ্চ রক্তচাপ : রাগের পাড়া যখন চড়তে শুরু করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপও বাড়তে থাকে। আর হঠাৎ করে এমনভাবে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া বয়স্ক মানুষদের পক্ষে একেবারেই ভা নয়। কারণ এমন ক্ষেত্রে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, অনিয়ন্ত্রিত জীবন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে এমনিতেই যুব সমাজের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়, তার উপর যদি তারা কথায় কথায় রাগ দেখাতে শুরু করেন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
হজম ক্ষমতা কমে যায় : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে রাগের মাত্রা বাড়তে থাকলে শরীরে হরমোনাল চেঞ্জ হতে থাকে। সেই সঙ্গে পাচক রসের ক্ষরণও কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস-অম্বল এবং বদ-হজমের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অনেকক সময় রাগের কারণে ক্রণিক অ্যাবডমিনাল পেন হওয়ার মতো সমস্যাও হয়ে থাকে। তাই সাবধান!
ইনসমনিয়া : যেমনটা আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে রাগের সময় মস্তিষ্কের অন্দরে স্ট্রেস হরমেনের ক্ষরণ মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম উড়ে যায়। আর ঘুম ঠিক মতো না হাওয়া মানে শরীরে একাধিক রোগের আক্রমণ বেড়ে যাওয়া। তাই তো দীর্ঘকাল যদি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখুন।
রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কিভাবে?
মাথা গরম হতে থাকলে এবার থেকে সঙ্গে সঙ্গে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেবেন। দেখবেন শরীর এবং মন ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা হবে মাথাও। এক্ষেত্রে আরেকটা পদ্ধতিকেও কাজে লাগাতে পারেন। রাগ হলেই জিভটা পাইপের মতো করে শ্বাস টানতে শুরু করুন। এমনটা করলে দেখবেন মুখের ভিতরটা ঠাণ্ডা হতে শুরু করছে। এইভাবে ১২ বার করলেই দেখবেন রাগের টিকিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে এই ভিটামিনটির ঘাটতি দেখা দিলে স্ট্রেস লেভেল বাড়তে শুরু করে, যা রেগে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। তাই যদি দেখেন যে অল্প কথাতেই রাগ হতে শুরু করেছে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ভিটামিন বি ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে পারেন। এমনটা করলে দেখবেন দারুন উপকার মিলবে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে : গবেষণা বলছে শরীরে এই খনিজটির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে স্ট্রেস লেভেল ধীরে ধীরে কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে রাগের মাত্রাও। তাই তো আপনার মাথা যদি কথায় কথায় গরম হতে থাকে, তাহলে বিনস, বাদাম, হোল গ্রেন, বিশেষত ব্রাউন রাইস এবং হোল গ্রেন ব্রেড বেশি মাত্রায় খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এই খাবারগুলি ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সবুজ শাক-সবজিতেও প্রচুর মাত্রায় মজুত থাকে এই খনিজটি। তাই ইচ্ছা হলে প্রতিদিন পছন্দ মতো কোনও সবজিও খেতে পারেন।
হার্বাল চা : এক কাপ আঙুরের রসের সঙ্গে হাফ চামচ জিরা এবং মৌরি মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করে সেটি যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে রাগ দূরে পালাতে সময়ই লাগে না। কারণ এই পানীয়টি বানাতে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদগুলি নার্ভকে স্টিমুলেট করে, সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন করে যে রাগ কমতে একেবারেই সময় লাগে না।