করোনা নিয়ে ঢুকলেই গুলি করে মারবে এই দেশ
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সীমান্ত পেরিয়ে চীন থেকে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়াদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়োজিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমান্ডার রবার্ট আব্রামস এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাসের বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব দারিদ্রপীড়িত উত্তর কোরিয়ার জন্য। গত বছরের ডিসেম্বরে মিত্র ও প্রতিবেশি চীন থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি এবং বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব চললেও উত্তর কোরিয়া এখন পর্যন্ত একজন রোগী পাওয়ার তথ্যও নিশ্চিত করেনি।
সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় পিয়ংইয়ং। জুলাইয়ে দেশটির সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, করোনার বিস্তার প্রতিরোধে দেশে জরুরি অবস্থা সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।
কোরিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমান্ডার রবার্ট আব্রামস বলেছেন, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার কারণে চোরাই পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কর্তৃপক্ষ সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করতে বাধ্য হয়।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) আয়োজিত এক অনলাইনে সম্মেলনে অংশ নিয়ে আব্রামস বলেন, চীনা সীমান্তের এক অথবা দুই কিলোমিটার এলাকায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে উত্তর কোরিয়া। সেখানে উত্তর কোরিয়ার বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। করোনা প্রতিরোধে সীমান্তে অবৈধভাবে ঢুকে পড়াদের গুলি করে হত্যার অনুমতি পায় এই বাহিনী।
পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানতে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব আরও ত্বরান্বিত হতে থাকে। চীন থেকে উত্তর কোরিয়ার আমদানি কমে যায় ৮৫ শতাংশ।
এরমাঝেই বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এই দেশটিতে টাইফুন মেয়সাকের আঘাত এসেছে। দেশটির সরকারি গণমাধ্যম বলছে, টাইফুনের আঘাতে উত্তর কোরিয়ায় দুই হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস অথবা পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব কারণে অদূর ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে বড় ধরনের তেমন কোনও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা নাও যেতে পারে বলে প্রত্যাশা করেছেন আব্রামস। তবে তিনি বলেছেন, আগামী মাসে কিম জং উনের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন করতে পারে উত্তর কোরিয়া।
কোরীয় দ্বীপের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অচলাবস্থা ও উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। উভয় দেশ পারমাণবিক হামলা চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছে অতীতে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির অবসানের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে কিম জং উন ও ট্রাম্প বৈঠকে বসেন।
সেই সময় কোরীয় দ্বীপের উত্তেজনার অবসানের ব্যাপারে অনেকেই আশা দেখতে শুরু করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে ভিয়েতনামে চিরবৈরী এ দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। মার্কিন ক্ষমতাসীন কোনও প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি উত্তর কোরিয়ার এই নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।