গাড়ি-বাড়ি-সম্পত্তি নয়, এবার দখল আইসিইউ!
আগে নিশ্চই বাড়ি, গাড়ি, খেয়াঘাট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পর্যন্ত দখল করার ঘটনা শুনেছেন। কিন্তু তাই বলে জরুরি মুহূর্তে জীবনরক্ষাকারী নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) দখল করার কথা শুনেছেন কখনো ? মনে হয় শোনেন নি কখনো। কিন্তু এবার শুনুন। এমনই ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আইসিইউ শয্যাগুলো দখল করা হয়েছে। যাঁরা আছেন, তাঁদের আদৌ আইসিইউ প্রয়োজন কি?’ আইসিইউবঞ্চিতদের দাবি, যদি রোগীর অবস্থা মুমূর্ষ হতো, তাহলে ৭২ ঘণ্টায় আইসিইউ শয্যায় কোনো না কোনো রোগী মারা যেতেন। কিন্তু শেবাচিম হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, ৭২ ঘণ্টায় আইসিইউ শয্যায় চিকিৎসাধীন কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেবাচিম হাসপাতালের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) রোগী ভর্তি হলে, তাঁদের প্রয়োজন না হলেও আইসিইউ দিতে হয়। শুধু তাই না, জরুরি মুহূর্তে আইসিইউ নিলেও একসময় এই রোগীদের তা আর দরকার পড়ে না, তারপরও তাঁরা অনেকটা জোর করে শয্যা দখল করে রাখেন। গড়ে প্রতিদিন দুটি শয্যা ভিআইপিদের দখলে থাকে। গত মঙ্গলবার চারটি শয্যা বিনা প্রয়োজনে ভিআইপিদের দখলে ছিল। এই ভিআইপিদের মধ্যে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সরকারি দলের নেতারা। ফলে এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও শেবাচিম কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০-১২ জন নতুন রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু ১২টি শয্যাই রোগীতে ভরা থাকায় কাউকে তা দেওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া যাঁদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন নেই তাঁরাও শয্যা ছাড়ছেন না। ফলে শয্যা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।’
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম আইসোলেশন ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এই ছয়জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফল পেতে স্বজনদের অন্তত আরো ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যাওয়া ছয়জন করোনায় আক্রান্ত ছিল বলে ফল এসেছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে কেউ ভর্তি হয়নি।