ইনজেকশন নয় এই পাম্পেই কাবু ডায়াবেটিস

কলকাতা টাইমস :
বর্তমানে অতিপরিচিত রোগের নাম ডায়াবেটিস। আর এ রোগের চিকিৎসায় নানা ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন সংযোজন হল ইনফিউশন পাম্প।
সুস্থ শরীরে অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস থেকে ২৪ ঘণ্টায় কিছু কিছু ইনসুলিন নির্গত হতে থাকে যাকে বলা হয় বেজাল ইনসুলিন। এছাড়া প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের পর রক্তশর্করার যে বৃদ্ধি ঘটে তার জন্য যা নির্গত হয় তা হল বোলাস ইনসুলিন। খালি পেটে, খেতে দেরি হলে ও মাঝরাতে রক্তশর্করা যে বৃদ্ধি হয় তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন।
কৃত্রিমভাবে বাইরে থেকে দিনে ৩-৪ বার ইনসুলিন দিয়ে ও সুস্থ শরীরে অগ্ন্যাশয়ের মতো কিছুতেই এ ধরনের কাজ পাওয়া সম্ভব নয়। ইনসুলিন পাম্প এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করতে সাহায্য করেছে। ইনসুলিন পাম্পের সাহায্যে রোগী নিজে খাওয়ার পরিমাণ অনুযায়ী বোলাস ইনসুলিন ডোজ মেশিনে নির্দিষ্ট করে দিলে ঠিক ওই পরিমাপেই ইনসুলিন শরীরে পৌঁছে যাবে।
পরবর্তী খাওয়ার মাঝে অতিরিক্ত ইনসুলিন প্রয়োজন হলে তাও দেওয়া যাবে। আবার ওই পাম্পের মাধ্যমে বেজাল ইনসুলিনের ডোজ নির্দিষ্ট করে দিলে ২৪ ঘণ্টা ধরে অল্প অল্প ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করবে ও বিপাকীয় পদ্ধতি নিয়ন্ত্রিত রাখবে। এতে খালি পেটে ডায়াবেটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস ও প্রতিরোধ করা যাবে।
এটি ছোট দেশলাই বাক্সের মতো। এর ওজন মাত্র ১২০ গ্রাম ও সহজেই প্যান্টের পকেটে বেল্টের সঙ্গে অথবা মোজা বা মহিলাদের ব্রেসিয়ারের মধ্যে রাখা যায়। পাম্পের মধ্যে চালিত ইনসুলিন সিরিঞ্জ ইনসুলিনকে শরীরে প্রবেশ করায়। এ সিরিঞ্জের মাপ ৩ মিলি ও ৩০০ ইউনিট ইনসুলিন বহন করে।
পাম্প থেকে লম্বা টিউবের শেষ প্রান্তে, নমনীয় ক্যাথেটার থাকে যা তলায় প্রবেশ করিয়ে রাখা হয়। পেটের ওপরে বা উরুদেশে বা হাতের ওপরে অংশে (ট্রাইসেপ অঞ্চলে) এ ক্যাথেটার লাগানো যেতে পারে। প্রতিদিন থেকে ছয়দিন পর সিরিঞ্জ ও ইনফিউশন সেট বদল করতে হয়।
মেশিনের ব্যাটারি ৫-৮ সপ্তাহ পর বদল করতে হয়। মেশিনে কোনোরকম গোলমাল দেখা গেলে মেশিনের অ্যালার্ম সতর্ক করে দেয়। গোসল করা, সাঁতার কাটার সময় ক্যাথেটার চামড়ায় তলায় অক্ষত রেখে খুব সহজেই পাম্প ও টিউব খুলে নেওয়া যায় ও আবার লাগিয়ে দেওয়া যায়।
পাম্প ব্যবহার করার জন্য সলিউবল হিউমান ইনসুলিন বা র্যাপিড অ্যাকটিৎ অ্যানালগ যেমন অ্যাসপার্ট লিসপ্রো বা গ্লুলিসিন ইনসুলিনের প্রয়োজন। অ্যানালগ ইনসুলিন পাম্পের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়।
এ ছাড়া ইনসুলিনের ডোজ ঠিক করার জন্য প্রতিবার খাওয়ার আগে ও খাওয়ার পরে এবং শোওয়ার সময় ও ভোর তিনটায় গ্লুকোমিটার সাহায্য ব্লাডসুগার পরীক্ষা করতে হবে। বর্তমানে গবেষণা চলছে ইনসুলিন পাম্পের সঙ্গে অটোমেটিক গ্লুকোজ সেন্সর জুড়ে দেওয়ার। এই যন্ত্র নিজে নিজে ব্লাডসুগার পরীক্ষা করে নিজে থেকে ইনসুলিন ডোজ নির্ধারণ করে বেজাল ও বোলাস ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করাবে।
পাম্প চালু করার সময় রোগী সিরিঞ্জে যে ইনসুলিন ডোজ নিচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে ডোজ ঠিক করতে হবে। বোলাস ডোজ ইনসুলিন পাম্প বিভিন্নভাবে দিতে পারে। যেমন স্ট্যান্ডার্ড বোলাস, স্কয়ারওয়েভ বোলাস ও ডুয়াল ওয়েভ বোলাস। এই নির্বাচন নির্ভর করে পাম্প ব্যবহারকারী একবার খাবেন, না বেশ কয়েকবার অল্প অল্প খাবেন, মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাদ্য খাচ্ছেন কিনা তার ওপর। সাধারণত মোট ইনসুলিনের ৬০ শতাংশ বোলাস ডোজ হিসেবে দিতে হয়।
ইনসুলিন পাম্পের সুবিধাগুলো হলো- কঠোরভাবে ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পথ; খাওয়ার, কাজকর্ম ও দৈনন্দিন অভ্যাস বজায় রেখে ইনসুলিন সময় ঠিক করে নেওয়া যায়; প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ বাদ দিয়ে বা পিছিয়ে দিয়েও সুগার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব; প্রতিদিন ৪ বার সূচ না ফুটিয়ে ৩-৬ দিন ছাড়া ১ বার ফোটালেও চলে এবং বিদেশে (অন্য মাহাদেশে) বেড়াতে গেলে সময় পরিবর্তন জন্য সুগার নিয়ন্ত্রণ যে সমস্যা হয় তা পাম্পের ক্ষেত্রে হয় না।