রোজ চুল ধুতে ভালোবাসেন ? এই লেখাটি অবশ্যই পড়ুন
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
অনেকের স্বভাব রোজ পরিষ্কার করার থাকে, অনবেকের আবার ভাবেন রোজ ধুলে চুল নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু ধোয়া বা না ধোয়া নির্ভর করে চুলের প্রকারভেদে। ক্ষতি বা লাভও নির্ভর করে তার ওপরেই। কি কি কারণে আমাদের চুল পরিষ্কার করার প্রয়োজন পরে?
১.তেল: আমরা সবাই সপ্তাহে এক বা দুইদিন চুলে তেল দিই। এতে আমাদের চুলের গোঁড়া মজবুত হয়। যদিও এই তেলের কারণে আমাদের চুলে এবং মাথায় সবথেকে বেশি নোংরাও হয়। আসলে চুলে নোংরা হওয়ার কারণ যে শুধুই মাথায় তেল দেওয়া তা কিন্তু নয়। আসলে একটা বয়সে আমাদের মাথার ত্বকের ভিতর থেকে তেল নিঃসরণ হতে থাকে, যা চুলের গোঁড়ায় আটকে থাকে। মূলত, ২০-৩০ বছর বয়সে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এই সময় চুলের গোঁড়া সহ চুল খুব ঘনঘন নোংরা হয়ে যায় এবং চুল পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এছাড়াও লিঙ্গভেদে, বয়সের তারতম্যে এবং পরিবেশ অনুযায়ী চুল নোংরা হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে।
২.চুলের ভেদাভেদ অনুযায়ী: যাদের চুল সোজা এবং পাতলা, তাদের চুল পরিষ্কার করার প্রয়োজন অন্যান্যদের থেকে সবথেকে বেশি। এর কারণ সবথেকে বেশি তেল এবং নোংরা জমা হয় এই ধরণের চুলে। এমনকি খুব তাড়াতাড়ি চিটচিটে হয়ে যায় এই ধরণের চুল। অন্যদিকে যাদের চুলের গোছ বেশি এবং কোঁকড়ানো বা ঢেউ খেলানো, তাদের চুলে নোংরা এবং তেল সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এছাড়াও, মাথার ত্বকের ভেতর থেকে যে তেল বার হয়, তা এই ধরণের চুলের জন্য খুবই ভাল। কারণ, এতে চুল প্রয়োজনীয় আদ্রতা পেতে পারে এবং সহজে জট পড়ে না।
৩.ঘাম: অনেকেই আছে, যারা প্রচণ্ড ঘামেন। আবার অনেকে আছেন যাদের ঘাম হওয়ার প্রবণতা খুবই কম। সেক্ষেত্রে যাদের ঘাম বেশি পরিমাণে হয়, তাদের চুল পরিষ্কার ঘন ঘন করতে হয়। ঘামের কারণে চুলের মধ্যে তেল বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে যায়। এর ফলে চুল আরও নোংরা হয়ে যায়। এছাড়াও যারা মাথায় হেলমেট বা রুমাল ব্যবহার করে, তাদেরও মাথার ত্বক তাড়াতাড়ি ঘেমে গিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করে।
৪.শরীরের নোংড়া: আমরা যখন ঘরের কাজ করি বা বাইরে বেরোই, সেই সময় ধুলো ময়লা আমাদের চুলের ভেতর এসে জমা হয়। যার ফলে তা অতিরিক্ত তেলের সঙ্গে মিশে গিয়ে আরও সমস্যার সৃষ্টি করে। এরফলে চুলের গোঁড়ায় বা সারা শরীরে অ্যালার্জিও হতে পারে। ৫.প্রসাধনী সামগ্রী: চুলের যত্নে হোক বা শুধুই স্টাইলের জন্য, আমরা অনেক সময় নানারকম প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি। এরমধ্যে অনেক প্রসাধনী থেকে আমাদের নানারকম সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন- হেয়ার স্প্রে এবং ক্রিম। এতে চুল তাড়াতাড়ি আঠা হয়ে যায় এবং আমাদের চুল ঘনঘন পরিষ্কার করতে হয়।
আপনি কি চুল ঘনঘন পরিষ্কার করেন?
অনেকেই আছেন, প্রতিদিন বা সপ্তাহে অধিকাংশ দিন শ্যাম্পু করেন। এক্ষেত্রে চুলের উপকারের থেকে অপকারই হয় বেশি। কারণ এটি চুলের নিজস্ব তৈলাক্ত উপাদানকে নষ্ট করে দেয়। ফলে চুলের গোঁড়া থেকে আগা অবধি শুষ্ক হয়ে ওঠে। তাই কতগুলি বিষয়ে জেনে নেওয়া উচিত। যেমন…
খুশকি আপনার চুলে কি খুশকি রয়েছে? এর কারণ হতে পারে আপনি স্নানের সময় প্রতিদিন শ্যাম্পু করেন। এর ফলে, আপনার চুলের গোঁড়া শুষ্ক হয়ে ওঠে, চুলকানি হয় এবং শুকনো চামড়া চুলের গোঁড়া থেকে উঠতে থাকে। তাই বলে চুলে শ্যাম্পু দেওয়া একদম বন্ধ করে দেবেন না। এতে চুলের গোঁড়ায় নোংরা জমে যেতে পারে এবং এতে চুলের ক্ষতি হতে পারে।
অন্য ধরনের শ্যাম্পু : ড্রাই শ্যাম্পু টেলিভিশনের পর্দায় ইদানিং দেখা যায় ড্রাই শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন। অনেকেই সময় বাছাতে ব্যবহার করছেন এই ধরণের শ্যাম্পু। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের শ্যাম্পু মোটেও চুলের যত্ন নেয় না। উল্টে ক্ষতি করে। এর কারণ, ড্রাই শ্যাম্পু চুলের গোঁড়ায় উপস্থিত তেলের সঙ্গে মিশে যায় এবং আটকে থাকে। ফলে চুল পরে যায়, চুলকানি হয় এবং আরও নানা সমস্যা হয়। কো- ওয়াশিং এই কথাটির সঙ্গে কি আপনার পরিচিতি আছে? মূলত, বাজারে এক ধরণের শ্যাম্পু পাওয়া যায়, যার মধ্যে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার উভয়েরই গুণ আছে। যদিও এই ধরণের শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ শ্যাম্পু আমাদের চুলের গোঁড়া এবং চুলকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে কন্ডিশনার চুলকে রুক্ষ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
কন্ডিশনার যুক্ত শ্যাম্পু ভাল কাজ করে : কোঁকড়ানো, ঢেউ খেলানো এবং শুষ্ক চুলে। যদিও সবথেকে ভাল উপায় হল শ্যাম্পু দিয়ে চুলে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া। এরপর এক দুই মিনিট বাদে চুল ধুয়ে ফেলা। আবার যখন কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন, তখন খেয়াল রাখবেন তাতে যেন কোনও রকম সিলিকন না থাকে। সিলিকন চুলকে নরম এবং চকচকে করতে সাহায্য করে। কিন্তু একইভাবে এই সিলিকন চুলের গোঁড়ায় থেকে গিয়ে নানাভাবে ক্ষতিও করে। তাই শুধুই কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধোয়া কখনোই উচিত নয়।
কিভাবে চুল পরিষ্কার করা যায়?
কিভাবে, কখন, কতবার, কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন, তা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার ওপর। আপনার জীবনধারা, ত্বকের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ এগুলির ওপর নির্ভর করে আপনাকে চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। যদি মনে হয় চুল খুব বেশিবার ধোয়ার জন্য আপনার চুল এবং মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাহলে চুল ধোয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। এতে চুল তার নিজের অবস্থা ফিরে পাবে। আর যদি ক-ওয়াশিং শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুতে চান, তাহলে তাতে খারাপের কিছু নেই। শুধু সিলিকনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এছাড়াও বেশি ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে না চাইলে চুলে মাত্র একবার করে শ্যাম্পু করুন।
চুলের ডগা কিভাবে পরিষ্কার করবেন?
চুলের ডগা হল, আপনার সবথেকে পুরনো চুল। তাই চুলের ডগা সবসময় যত্নের মধ্যে রাখা উচিত। চুলের গোড়ায় শ্যাম্পু করলেও, চুলের ডগাতে শ্যাম্পু আলাদা করে লাগাতে যাবেন না। এতে চুলের ডগা ফেটে যেতে পারে। কন্ডিশনার চুলের জন্য খুবই দরকারি। প্রত্যেকবার চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল ভাল থাকে। যদিও সিলিকন জাতীয় কন্ডিশনারের থেকে চুলকে দূরে রাখবেন। যাদের চুলের গোড়া বা মাথার ত্বক খুবই শুষ্ক, তারা কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে পারেন। তবে মাথায় রাখতে হবে চুল পরিষ্কার রাখা এবং উজ্জ্বল রাখা দুইই প্রয়োজনীয়।