স্নানের সময় তেল, শিশুর কতটা কার্যকর

সাধারণত শিশুর নরম ত্বকে একজিমার মতো চর্মরোগ দেখা দিলে তা সারিয়ে তুলতে অনেকেই শিশুর গোসলের পানিতে স্নানের তেল ব্যবহার করেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর ত্বক ঠিক করে তুলতে এই তেল তেমন কাজে আসেনা। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটি জানা গেছে । এখানে একজিমার চিকিৎসা করাতে যে খরচ হয় তার আনুমানিক তিনভাগের একভাগ খরচ হয় ইমোলিয়েন্টযুক্ত বাথ অ্যাডিটিভস ব্যবহার করলে।
তবে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বা বিএমজে-তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে, এই চর্মরোগের চিকিৎসায় বাথ ওয়েল ব্যবহারের কোন ক্লিনিক্যাল সুবিধার, প্রমাণ মেলেনি। এ অবস্থায় জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর এই অ্যাডিটিভ বাবদ যে ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করছে সেটা এখন অন্য খাতে ব্যয় করা উচিত হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। একজিমা শিশু থেকে শুরু করে বড়দের একটি সাধারণ চর্মরোগ বা ত্বকের প্রদাহ। যা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর চিকিৎসায় অনেকেই ইমোলিয়েন্ট ব্যবহার করেন।
এই ইমোলিয়েন্ট মূলত তিনটি রূপে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- লিভ অন ইমোলিয়েন্ট, সাবানের বিকল্প পণ্য এবং বাথ এডিটিভসে। একজিমার চিকিৎসায় এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সমন্বয় করে ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। একজিমা সারাতে লিভ অন ইমোলিয়েন্ট ও সাবানের বিকল্প পণ্যের কার্যকারিতার প্রমান পাওয়া গেলেও বাথ ওয়েলের এডিটিভ কতোটা ভালো কাজ করে সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোন গবেষণা হয়নি। এমনটাই জানান বিএমজে সম্পাদক।
এ বিষয়ে পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ড ও ওয়েলস থেকে একজিমায় আক্রান্ত ১ থেকে ১১ বছর বয়সী ৪৮২জন শিশুকে বাছাই করা হয়। এবং তাদের ভাগ করা হয় দুটি দলে এরমধ্যে একটি দলকে বাথ ইমোলিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেয়া হয়। যেটা অন্য দলকে দেয়া হয়নি। তারা একজিমা চিকিৎসার জন্য নিজেদের স্বাভাবিক রুটিন মেনে চলছিলো। প্রদাহ ও চুলকানি প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যবহার করছিলো লিভ অন ইমোলিয়েন্ট এবং স্টেরোয়েডযুক্ত মলম।
টানা ১৬ সপ্তাহের ওই পরীক্ষায় দুটি দলের মধ্যে উল্লেখ করার মতো কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। এক বছরের মাথায় একজিমা কতোটা তীব্র হয়েছে, সেটা কতোখানি ছড়িয়েছে এবং এতে জীবনমানে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা, সেইসঙ্গে কাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কতোটা সাশ্রয়ী এই মানদণ্ডগুলোতেও দুই দলের মধ্যে বড় কোন পার্থক্য পাওয়া যায়নি। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমারি কেয়ার গবেষণার সহযোগী অধ্যাপক ড. মারিয়াম সান্টের এই জরিপটি পরিচালনা করেছেন। তিনি সবাইকে লিভ অন ইমোলিয়েন্ট এবং বিকল্প সাবানের ব্যবহার চালিয়ে যেতে বললেও বাথ এডিটিভসকে অপচয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, একজিমার ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর এবং কোন উপাদান ভালো কাজ করে এটা জানতে পারলে পরিবারগুলোর বাড়তি ঝামেলা এড়াতে পারবে। এছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থারও টাকা বেঁচে যাবে। আসলে বাথ এডিটিভস পানিতে ফেলে অপচয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। নিউক্যাসেলের রয়েল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. মার্টিন ওয়ার্ড প্লাট এই জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তবে তিনিও মনে করেন, পরীক্ষায় যে যৌক্তিক ফলাফল বেরিয়ে এসেছে তা আমলে নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার উচিত হবে তাদের অর্থ অন্য চিকিৎসা খাতে ব্যয় করা।
তিনি বলেন, গবেষণার মানে এই নয় যে, বাথ এডিটিভস বাজারে রাখাই যাবেনা। যারা এটি নিজের ইচ্ছায় একবার ব্যবহার করে দেখতে চান তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে হবে তবে সেটা যেন অবশ্যই প্রেসক্রাইব করা থাকে। এতে এই অকার্যকর উপাদানের পেছনে অর্থ খরচ করার প্রবণতা কমে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে প্রেসক্রিপশনে এই উপাদানটি না লিখতে এবং এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোথাও খরচ করার ব্যাপারে আরেকটি মামলা চলায় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন।