তখন ব্যথা উপশমে খাওয়া হতো চকলেট
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
চকলেট খেতে কে না ভালোবাসেন। ছোটরা তো বটেই বড়রাও চকলেটের পাগল। এটি বর্তমান সময়ের সেরা স্ট্রেস বুস্টার। ওজন কমাতে চকলেটের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও যে কোনো বিশেষ দিনে প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্যও দুর্দান্ত এক উপাদান চকলেট। ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে পালিত হয় চকলেট ডে। কাপলদের মধ্যে এই দিন নিয়ে আলাদা উত্তেজনা থাকলেও সবাই কমবেশি পালন করেন দিনটি। বন্ধু, পরিবার, প্রিয়জনকে নানান ধরনের চকলেট উপহার দেন।
যে চকলেট নিয়ে এত কিছু সেই চকলেট একসময় খাওয়া হত শরীরের ব্যথা কমাতে। স্পেনে চকলেটকে ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে চলুন স্পেনে কীভাবে চকলেট পৌঁছালো সে ইতিহাস আগে জেনে নেওয়া যাক। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, চকলেট শব্দটি মায়ান এবং অ্যাজটেক সভ্যতা থেকে এসেছে। অ্যাজটেক ভাষায় চকলেট মানে টক বা তিক্ত।
তাহলে মানতেই হবে চকলেটের ইতিহাস ৪ হাজার বছরের পুরোনো। এটি মেক্সিকোর লোকেরা আবিষ্কার করেছিল। তারাই প্রথম আমাজন বেসিনে চকলেট গাছ দেখতে পান এবং তা থেকে চকলেট তৈরি শুরু করেন। মূলত কোকো গাছ খুঁজে পেয়েছিল তারা। সেই গাছের বীজ শুকিয়ে পুড়িয়ে তারপর গুঁড়া করা হত। এরপর সেটি থেকে পানীয় তৈরি করে পান করত। এছাড়া এই বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার হতো একসময়।
মেক্সিকোতে চকলেট আবিষ্কারের পর তা বেশ অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এখনো বিশ্বের অন্য কোথাও চকলেটের হদিস ছিল না। ১৫২১ সালে স্প্যানিশ রাজা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন এবং মেক্সিকোকে তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
এরপর এটি নিউ স্পেন নামে পরিচিতি লাভ করে। এভাবেই মেক্সিকোর চকলেট পৌঁছে গেল স্পেনে। স্পেনের রাজা চকলেটের স্বাদ এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে তিনি কোকোর বীজ স্পেনে নিয়ে যান। এই স্বাদটি স্প্যানিয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে বেশি সময় নেয়নি।
তবে চকলেট যখন স্পেনে প্রবেশ করে, তখন এটির ঔষধি গুণ রয়েছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে স্প্যানিয়রা। জ্বর হলেই তা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকরা। এটি তখন ব্যবহার হতো ব্যথানাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হত এবং হজমের সমস্যা থাকলেও এটি খুব উপকারী বলে বিবেচিত হত।
চকলেট মেক্সিকো বা স্পেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেখান থেকে ইউরোপে ঢোকে চকলেট। কফি এবং চায়ের আগেই ইউরোপে পৌঁছে গিয়েছিল চকলেট। ১৮৫০ সালে একজন ব্যক্তি প্রথম পানীয় থেকে চকলেটকে কঠিন অবস্থায় আনেন। কোকো পাউডার এবং চিনি মিশিয়ে তৈরি করেন চকলেট। এরপর থেকে ইউরোপে এই শক্ত আর মিষ্টি স্বাদের চকলেটের চাহিদা বাড়তে থাকে। মূলত এখন আমরা যে চকলেট খাই সেটার জন্ম।
একসময় যে চকলেট ব্যবহার হত ওষুধ হিসেবে সেটি এখন ব্যবহার হয় উপহার দিতে। তবে একই কথা, তখন জ্বরের ওষুধ ছিল আর এখন মন ভালো করার। চকলেটের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও। ট্রেস দূর করতে চকলেটের জুড়ি মেলা ভার। এমনকি ডার্ক চকলেট ওজন কমাতে, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হার্ট সুস্থ রাখে। এটি উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক করে এবং হৃদ্যন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া চকলেট রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানসিক চাপ কমায়। ডার্ক চকলেট স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে।
জানেন কি? চকলেটের উপর বিশেষভাবে একটি বই লেখা হয়েছে। যার লেখক সোফি ও মাইকেল। বইটির নাম ‘ট্রু হিস্টোরি অব চকলেট’। যদিও এই বইয়ে চকলেটকে ঈশ্বরের খাদ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে চকলেটের জন্ম থেকে বর্তমান তুলে ধরেছেন দুই লেখক।