কলকাতা টাইমস :
গো-মাংস নিয়ে সমগ্র ভারতে যখন নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে ঠিক তখন জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের গবেষক রুচিরা শর্মা শিবঠাকুরের বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন। তার মতে নিরামিশাষী নন, এককালে মাংসই প্রিয় ছিল শিবের কাছে।
শিব যে মাংসাশী ছিলেন তার উৎস সন্ধানে গবেষিকা তুলে এনেছেন পৌরাণিক এক কাহিনি। কথিত আছে, এক শিবভক্তকে স্বয়ং মহাদেব দেখা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক অতিথির ছদ্মবেশে। ওই ভক্তের বাড়ি শিব এসেছিলেন একটি মৃত বাছুরকে নিয়ে। ভক্তকে তিনি তা রান্না করতে বলেন। অতিথিকে তুষ্ট করতে ভক্তও তা করেন।
কিন্তু এ কথা জানাজানি হতেই গ্রামের ব্রাহ্মণদের রোষের মুখে পড়েন ওই ভক্ত। সকলে তাঁর উপর চড়াও হন। শেষমেশ পালিয়ে বাঁচেন তিনি। ওই ভক্ত ও তাঁর অতিথির পলায়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম থেকে সব শিবলিঙ্গ উধাও হয়ে যায়। গ্রামে নেমে আসে বিপর্যয়। ব্রাহ্মণরা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরিয়ে আনেন ওই ভক্তকে। আবার গ্রামে ফিরে আসে শিবলিঙ্গ ও সমৃদ্ধি।
বাসব পুরাণের এই কাহিনি যা ইঙ্গিত দেয় তা হল, এককালে শিবভক্তির সঙ্গে মাংসের কোনও বিরোধ ছিল না। ঋক বেদে শিবের প্রভাব ছিল সামান্যই। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে সে প্রভাব বেড়েছে। কালক্রমে শিব বা রুদ্র থেকে দেবাদিদেব মহাদেব হয়ে উঠেছেন শিব। ঠিক যেভাবে প্রান্তিক দেবতা থেকে উত্থান হয় কৃষ্ণের।
শিবের এই উত্থান পর্বে মাংসের সঙ্গে সংযোগের প্রমাণ বেদ ও পুরাণে বেশ ভালই মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই গবেষিকা। বরং শিবপুজোর সঙ্গে মদের যোগাযোগ আরও পরবর্তীকালে হয়েছে বলেই মত তাঁর। কিন্তু কালক্রমে নানা প্রভাব এসে জুড়ে বসায় শিব ক্রমশ মাংসপ্রিয় দেবতা থেকে নিরামিশাষীতে পরিণত হয়েছেন।
মূলত ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের প্রভাবই শিবকে এরকমভাবে তৈরি করেছে। তবে বিভিন্ন সময়ের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তামিল সাহিত্যে শিবের এই মাংসপ্রিয়তা কখনও উপেক্ষিত হয়নি। গবেষিকার দাবি, একজন শিবভক্ত হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ নিশ্চিতই তা জানবেন।
এই বিবর্তনের কথা মাথায় না রেখে শিবপুজোয় মাংস বিক্রি বন্ধকে ‘আইরনি’ বলেই অভিহিত করেছেন ওই গবেষিকা।