ওঁমকার ভ্রমণ 4
ওঁমকার ভ্রমণ 4
বিপ্লব মজুমদার
ক্লান্তির আবেশে একটু তন্দ্রা এসেছিলো কিন্তু মনের মধ্যে বাবা ওমকারেশ্বর কে দর্শন করার যে তীব্র আকুতি ছিলো সেটা আধঘন্টার মধ্যে আমায় জাগিয়ে তুললো l তন্দ্রা থেকে চেতন জগতে ফেরার পর প্রথম যেটা মনে এলো বাবার কাছে পৌঁছে একটু চায়ের দোকানে আড্ডা মারার মতো আমি সময় ব্যয় করছি কেন ? এর কোনো মানে হয় না ….এটাই তো মা মহামায়ার মায়া l বলে উঠলাম মা ক্ষমা করো আমি যাই বাবার কাছে আর তুমি মা আমায় ভুলিয়ো না l মা আমায় কৃপা করো l মা তুমি দয়া না করলে আমি যাবো কি করে বাবার কাছে?
প্রার্থনা করে এবং প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে প্রথম আলো ফোঁটার আগেই পৌছে গেলাম ওমেকারেশ্বর বাস স্ট্যান্ড এ l
এখন ভোর পৌনে পাঁচটা l এই স্থান পশ্চিমে হবার কারণে সূর্যোদয় একটু দেরিতে হয় l এই সময় যথেষ্ট অন্ধকার l আমার কোনোদিকে নজর নেই l শুধু ভাবছি কতদিন হলো মা নর্মদা কে দেখিনি l কখন দেখবো ? কখন মা এর পবিত্র জল স্পর্শ করবো ? কখন দেখবো বাবা ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ যিনি জগৎ এর কল্যাণের জন্য ও কলিযুগের মুক্তিকামী মানুষের জন্য বৈবস্বত মনুর বংশধর সূর্যবংশের প্রতিষ্ঠাতা ঈক্ষবাকুর উত্তরাধিকার মহাত্মা মান্ধাতার তপোবলে উত্তিষ্ঠিত নর্মদা – কাবেরীর সঙ্গমে বৈদুর্য পর্বত অবস্থান করছেন l
এই সব ভাবতে ভাবতে হাটছি আর দেখছি রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলোতে মানুষেরা শুয়ে আছে পরম নিশ্চিন্তে l কুকুরেরা ঘুমিয়ে ছিলো আমার উপস্থিতি তাদের বিন্দুমাত্র বিচলিত করলো না l আমার মনে হলো বাবার আশ্রয়ে তারা যেন এই জীবন কর্মফল ক্ষয় করার জন্য কাটাচ্ছে ….কে গেলো কে এলো তাতে এদের কিছু যায় আসে না l
একসময় পৌঁছে গেলাম মা নর্মদার ঘাটে….আমি এখন নির্বাক !
এ আমি কি দেখছি ?
ছবিটা দেখলেই বুঝবেন যে আমার সামনে আমার আরাধ্যা মা নর্মদা যে কিনা তাঁর পিতার পদতল দিয়ে বয়ে চলেছেন আর তাঁর পিতা ভগবান শংকর বৈদুর্য পর্বতে বসে তাঁকে পালন করছেন আর যুগযুগান্ত ধরে মুক্তিকামী মানুষদের তিঁনি আত্মসাৎ করছেন l ধন্য এই তপোভূমি!
নিজের অজান্তেই আমি আজ পিতা-পুত্রীর সামনে বসে অঝোরে কাঁদছি আর বলছি প্রভু আমি কি অন্যায় করেছি যে তুমি আমায় এই সংসারে বেঁধে রেখেছো ? আমি কেন সর্বান্তকরণে তোমার আশ্রয় পাচ্ছি না?
ক্রমশঃ….