শরীরে হরেক পদের ব্যথা: এই রোগে আক্রান্ত নন তো!
ঘুম থেকে উঠেই কারও কারও শরীরের কোনো কোনো অংশে ব্যথা-বেদনা দেখা দেয়। দিনের কাজ শুরুর আগে পিঠে, কোমড়ে, কাঁধে দেখা দেয় অনঢ় স্টিফ ভাব। আপনার এরকম অভিজ্ঞতা হলে ধরে নিতে পারেন এটা ফাইব্রোমিয়ালজিয়ার লক্ষণ।
ফাইব্রোমিয়ালজিয়া (Fibromyalgia) হচ্ছে মাংশপেশীতে দেখা দেওয়া ধারাবাহিক ব্যথা, ক্লান্তির আবেশ বা ব্যথাকাতরতা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে ভোগাদের সংখ্যা কম নয়। তবে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয় থাকেন।
ফাইব্রোমিয়ালজিয়া এমন এক অজ্ঞাত কারণে সৃষ্ট রোগ যার ফলে শরীরে ব্যথাভাব দেখা দেয়। ভারতের মুম্বাইর ডা. এল এইচ হিরানন্দানি হাসপাতালের রিউমাটোলজিস্ট ডা. শালিনি সুরেন্দ্র সুরালকার বলেন, এ রোগে আক্রান্তদের ঘাড়, পিঠ, নিতম্ব, বাহু কিংবা পায়ে সমস্যা দেখা দেয়।
এ ধরেনের ব্যথা মনস্তাত্ত্বিক কারণেও ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করেন অপর বিশেষজ্ঞ ডা. জগদীশ। কাজের সূত্রে এক শহর থেকে আরেক শহরে স্থানান্তর, একাকীত্ব, মানসিক চাপ- এ ধরনের বাস্তবতায় জীবনযাপনে হঠাৎ পরিবর্তনের শিকার ব্যক্তিদের এই সমস্যা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
এই রোগের খুবই সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে মাংসপেশীতে ব্যথা। শরীরের আলাদা আলাদা জায়গায় দেখা দেয় ‘অকারণ’ ব্যথা। সাধারণত ঘাড় অথবা কাঁধ থেকে শুরু হয় এটা- পরে ক্রমশ দিন দিন শররের অন্যান্য অংশেও দেখা দেয়। এসময় দেখা দেওয়া অপরাপর সমস্যাগুলো হচ্ছে- কোনোকিছু মনে করতে কষ্ট হওয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতা, ঘুমে সমস্যা, মাথা ব্যথা, মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিককালে অসহনীয় ব্যথা, শরীরে শূন্য শূন্য ভাব দেখা দেওয়া প্রভৃতি।
এই রোগে আক্রান্তদের বিরাট অংশ জানতেই পারেন না তাদের রোগের কারণটা কি। কারণ, সাধারণত অনেক চিকিৎসকও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তবে ফাইব্রোমিয়ালজিয়া আক্রান্ত কি না তা না জানলেও এ কারণে সৃষ্ট ব্যথা আর ক্লান্তির ভাব ঠিকই কাবু করে ফেলে আক্রান্তকে। সমস্যা হচ্ছে- এ ধরনের উপসর্গগুলো অন্য অনেকগুলো রোগেরও সাধারণ লক্ষণ। তাই, ভুল চিকিৎসার ঝুঁকিও কম না।
তবে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে আপনি এই রোগের প্রকোপটা কমাতে পারেন। এর মধ্যে আছে রুটিন মেনে নিয়মিত ব্যায়ম করা, কাজে কর্মে সদা সর্বদা শান্ত থাকার চেষ্টা করা, অন্যান্য দৈনন্দিন বিষয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে পর্যাপ্ত নিদ্রা যাওয়া ও বিহেভিয়েরিয়াল থেরাপি (মনোবিদের কাউন্সেলিং)।
মোট কথা ফাইব্রোমিয়ালজিয়ার উপসর্গ যেহেতু অন্যান্য রোগের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায় তাই প্রথমদিকে ওষুধবিহীন এই কায়দাগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এতে ভুল ডায়াগনসিসে ক্ষতি হওয়ার শংকা থাকবে না। আপনি যদি ফাইব্রোমিয়ালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে এসব চর্চা আপনার কষ্টকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে, হয়তো একেবারেই দূর করে দিতেও পারে।