গোড়ালিতে ব্যথা? সাবধান হোন এখনই!
কলকাতা টাইমস :
পায়ের চিন্তা মাথায় নেওয়ার কথা আমরা কেউ ভাবি না! অথচ, সে বেচারার ওপর দিয়েই কিন্তু যত ধকল যায়!
একবার নিজেই ভেবে দেখুন না, সারা শরীরের ভারটা ধরে রেখে যে আপনাকে হাঁটাচ্ছে, সে বেচারার ধকলটা কোথায়!
যার পরিণতি গোড়ালিতে ব্যথা।
আসলে মানুষের পায়ের ২৬টি হাড়ের মধ্যে গোড়ালির হাড় সবচেয়ে বড়৷ যা শরীরের ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, হাঁটা-দৌঁড়ানোর সময় পায়ের উপর যে চাপ পড়ে, সেই চাপের বেশিরভাগটাই বহন করে গোড়ালির হাড়৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাঁটার সময় পায়ের উপর শরীরের ওজনের ১.২৫ গুণ চাপ পড়ে৷ দৌঁড়ানোর সময় চাপ পড়ে ২.৭৫ গুণ৷ যার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গোড়ালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একটা সময়ের পর শুরু হয় ব্যথা৷
• গোড়ালি ব্যথার কারণ
১. গোড়ালির হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে প্লান্টার ফেসিয়াটিস লিগামেন্ট৷ এই লিগামেন্টে খুব বেশি চাপ পড়লে গোড়ালির সঙ্গে যুক্ত টিস্যুগুলি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। যার ফলে ব্যথা হয়৷ ফলে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরও বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথাটা বেশি টের পাওয়া যায়৷
২. পায়ের পাতা ফ্ল্যাট হলে গোড়ালিতে ব্যথার সম্ভাবনা বাড়ে৷
৩. গোড়ালির হাড় পূর্ণতা পায় না বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির আগে টিনএজারদের এই সমস্যা হয়৷ সেই সঙ্গে হাড় দ্রূত ক্ষয়ও হয়৷ যার ফলে ওই জায়গায় অনেক হাড় উৎপন্ন হতে থাকে যা থেকে ব্যথা হয়৷
৪. দীর্ঘদিন ধরে খুব শক্ত জুতো বা হাই হিল ব্যবহারেও গোড়ালিতে চাপ পড়ে৷ এতে গোড়ালির পিছন দিক থেকে অথবা গোড়ালির ভিতর থেকে ব্যথা অনুভূত হয়৷ পরে এই ব্যথা ক্রমশই বাড়তে থাকে৷
৫. পায়ের পিছনের দিকে নার্ভে বেশি চাপও গোড়ালিতে ব্যথার অন্যতম কারণ৷
৬. খুব বেশি ব্যায়াম, খেলাধুলো এবং হাঁটাচলা করে কাজ করলে গোড়ালির হাড়ে খুব চাপ পড়ে। যা থেকে হাড়ে চিড় ধরে৷ যাঁরা বেশি দৌড়াদৌড়ি করেন, তাঁদের এই কারণে গোড়ালিতে ব্যথা হয়৷ অস্টিওস্পোরোসিস থাকলেও গোড়ালিতে যন্ত্রণা হয়৷
৭. বিভিন্ন অসুখ থেকে হিল পেনের সমস্যা দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭-১৫ বছরের বাচ্চাদের এই কারণে গোড়ালিতে ব্যথা হয়৷
৮. হাঁটার সময় ঠিকভাবে পা না ফেললে, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকলে, ডায়াবেটিস থেকে নিউরোপ্যাথির সমস্যা হলে, হাড়ের মধ্যে সংক্রমণ বা রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে, কিংবা বোন সিস্ট থাকলেও হিল পেন হয়৷
• লক্ষণ
১. সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমে মাটিতে পা দিলেই যদি খুব ব্যথা হয় এবং তার পর কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করলে যদি ব্যথা কমে যায়৷
২. কাফ-মাসল পেনের ক্ষেত্রে ব্যথা সারা দিন থাকে না৷ কিন্তু রাত্রে ঘুমোনোর সময় এই ব্যথা বাড়ে৷
• কখন ডাক্তার দেখাবেন
১. গোড়ালি ফুলে গেলে৷
২. জ্বরের সঙ্গে গোড়ালিতে ব্যথা হলে৷ অনেক সময় জ্বরের মধ্যে গোড়ালি অসাড়ও হয়ে যেতে পারে।
৩. হাঁটার সময় সমস্যা হলে, পা ভাঁজ করতে অসুবিধা হলে, পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হলে৷
৪. এক সপ্তাহের বেশি গোড়ালিতে ব্যথা থাকলে, চলাফেরা ছাড়াও ব্যথা করলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
৫. কাফ মাসল পেন হলে যে পায়ে ব্যথা হবে, তাতে ভর করে হাঁটতে অসুবিধা হবে৷ কাফ পেনের জায়গা ফুলে থাকবে৷ মানে, ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
• কাফ মাসল পেন
১. আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে রক্ত জমাট বেঁধে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে পা ফুলে যায় ও ব্যথা হয়৷ কখনও কখনও আঘাতজনিত কারণেও কাফ মাসল পেন হয়৷
২. লেগ ক্রাম্প থেকেও কাফ পেন হতে পারে।
• উপশম
১. হিল পেনের ব্যথা থেকে বাঁচতে সব সময়ে নরম জুতো ব্যবহার করুন৷ সিলিকন হিল প্যাড দেওয়া জুতো পরা সব থেকে ভাল৷
২. অসমতল জায়গায় বেশি হাঁটা চলবে না৷
৩. মাসল পেন থাকলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত৷
৪. শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে তার দিকে নজরদারি প্রয়োজন৷ কাফ মাসল পেন, গোড়ালিতে ব্যথা থাকলে শরীরে ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-ই-এর পরিমাণ বাড়ানো দরকার৷ তাই বেশি করে সবুজ শাক-সবজি, ফল খাওয়া আবশ্যক৷ এছাড়া ব্যথা এড়াতে কর্ড লিভার অয়েল বিশেষ উপকারি৷ বেশি করে সামুদ্রিক মাছ খেলেও উপকার পাওয়া যায়৷
৫. বদ হজম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বেশি করে জল খেতে হবে৷ তেল-ঝাল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া চলবে না৷ ডাবের জল ও ফল খেলে ভাল ফল মিলবে৷
৬. ব্যথা হলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ ব্যথার পিছনে অন্য রোগ থাকলে সেই রোগ নির্মূল করা আগে প্রয়োজন৷
• গোড়ালির ব্যথা কমাতে স্ট্রেচিং
শুধু ডাক্তারবাবুর পরামর্শ, ওষুধ, জুতো আর খাওয়া-দাওয়া ঠিক রাখলেই চলবে না। তার সঙ্গে কিছু নিয়মিত ব্যায়ামও প্রয়োজনীয়। কী ভাবে করবেন সেই এক্সারসাইজ, জেনে নিন ধাপে ধাপে।
১. চেয়ারে বসে যে পায়ে ব্যথা, সেই পা গোড়ালির অংশ থেকে ধরে অন্য পায়ের ঊরুর উপর ক্রস করে রাখুন৷
২. যে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, সেই দিকের হাত দিয়ে ওই পায়ের পাতাটা টেনে ধরতে হবে হাঁটুর দিকে৷ তাতে পায়ে একটা চাপ তৈরি হবে৷
৩. তারপর অন্য দিকের হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ব্যথা-ধরা পায়ের পাতার মাঝখানে গোড়ালির দিক থেকে উপরের দিকে ঘষতে হবে৷ গোড়ালির হাড়ে শিরশিরে ব্যথা অনুভূত হবে৷
৪. এইভাবে পা টেনে রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে পাতা ঘষতে ঘষতে ১০ গুনতে থাকুন৷ এরকম দিনে ১০ বার করতে হবে৷ সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে পা ফেলার আগে এই এক্সারসাইজ করলে তাড়াতাড়ি সুফল পাবেন৷
• সোলিয়াস স্ট্রেচ
এক হাঁটু মুড়ে বসতে হবে৷ হাত দুটি পাশে মাটি স্পর্শ করে থাকবে৷ যে পায়ে কাফ মাসল পেন হচ্ছে, সেই পায়ের পাতা মাটিতে রেখে গোড়ালি উঁচু করে বসতে হবে, যাতে পিছনের অংশের চাপ ওই পায়ের উপরে পড়ে৷ ৩০ সেকেন্ড এভাবে থেকে আস্তে আস্তে পিছনের অংশ দিয়ে পায়ের উপর চাপ কমাতে হবে৷ এইভাবে এই ব্যায়াম পর পর তিনবার করতে হবে। তবে হাঁটু ও কোমরে ব্যথা লাগলে জোর করে এই ব্যায়াম করা উচিত নয়।