তিন মিসাইল বোটের নামে আজও কাঁপে পাকিস্তান
কলকাতা টাইমস :
25 Missile Boat Squadron, এই নামটা যতবার মনে করে পাকিস্তান, ততবার তাদের বুকে কাঁপন ধরে। এই কিলার মিসাইল বোট স্কোয়াড্রনটি ভারতীয় নেভির একটি দারুণ শক্তি। ১৯৭১-এর যুদ্ধে এই কিলার স্কোয়াড্রনের মাত্র 245 টনের তিনটি বিদ্যুৎ ক্লাস মিসাইল বোট পাকিস্তান নৌবাহিনীকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। পুরো ঘটনাটিকে অপারেশন ট্রাইডেন্ট নামে আখ্যা দেওয়া হয়। আর পাকিস্তান নেভির ইজ্জত লুণ্ঠনের এই চটকদার কিন্তু ভয়াবহ আইডিয়াটি মাথায় আনেন তৎকালীন এডমিরাল সর্দারীলাল মাথুরদাস নন্দা।
১৯৭১ এর ভারত পাক-যুদ্ধ চলছে। ভারতীয় নৌবাহিনী পুরো করাচী বন্দর কে বিচ্ছিন্ন করার প্ল্যান করে। প্ল্যান মাফিক ৪ ডিসেম্বর, তিনটি বিদ্যুৎ ক্লাস মিসাইল বোট- নিপাত, নির্ঘাত এবং বীর পাকিস্তানের দিকে যায়। সেইসঙ্গে এদের এসকর্ট করার জন্য ছিল দুটি আর্নালা ক্লাস অ্যান্টিসাবমেরিন ওয়ারফেয়ার করভেট এবং একটি অয়েল ট্যাংকার। পাকিস্থানের দিকে অগ্রসর হয় এই বাহিনী। করাচী বন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দূরে এই ফ্লিট পৌঁছে যায় সন্ধের আগেই এবং সেখানে দাঁড়িয়ে পরে। এত দূরে নোঙর করার কারণ ছিল, যাতে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের নাগালের বাইরে থাকা যায় এবং তারা রাতের অপেক্ষা করছিল। অপারেশনটা রাতে করার মূল কারণ ছিল, রাতে স্ট্রাইক করার মত কোনও বিমান তখন পাকিস্তানের কাছে ছিল না। তাই ভারতীয় ফ্লিটকে লক্ষ্য করে এয়ার অ্যাটাকের কোনও ভয় ছিল না।
তারপর রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে, নিপাত,নির্ঘাত আর বীর পাকিস্তানের করাচী বন্দরের দিকে এগোতে থাকে। আলাদা আলাদা পথে প্ল্যান মাফিক। তিনটি বোটেই চারটি করে অ্যান্টিশিপ মিসাইল SS-N-2 ছিল। প্রথম শিকারটি করে নির্ঘাত, করাচী হতে ১৩০ কিলোমিটার দূরে সে পেয়ে যায় তার প্রথম শিকার পাকিস্তান নেভির ডেসট্রয়ার খাইবার। তার পর একটি SS-N-2 খাইবারের দিকে ছুটে যায় নির্ঘাত থেকে। খাইবারের র্যাডার কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে নি। জাহাজের র্যাডারে মিসাইলকে ভুল করে বিমান বলে ধরে নেওয়া হয়। আর খাইবারের অফিসাররা, অ্যান্টি এয়ার ক্রাফট গান বোফোর্স দিয়ে মিসাইল নামাতে যায়। তার পর যা হওয়ার তাই হল SS-N-2 এসে লাগে খাইবারের গায়ে। এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তলিয়ে গেল পাক ডেসট্রয়ার। এরপরের শিকার টি করে নিপাত। করাচী বন্দর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে তার টার্গেট ছিল সে পেয়ে যায় বেসামরিক জাহাজ ভেনাস এবং ডেসট্রয়ার শাহজাহান। ভারতীয় গোয়েন্দাদের খবর ছিল, ভেনাসে করে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্র পাকিস্তানে যাচ্ছে এবং এটিকে রক্ষা করছে ডেস্ট্রয়ার শাহজাহান। তবে শেষ রক্ষা আর হল না। নিপাতের নজরে পড়ে যায় ওই দুই জাহাজ। আর সঙ্গে দুটি SS-N-2 ছুটে যায় দুই জাহাজ লক্ষ্য করে। ভেনাসে অ্যান্টি-শিপ মিসাইল লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ডুবতে শুরু করে। অন্য মিসাইলটি শাহজাহানে লাগে , তবে সেটি ডোবেন , মারাত্মক ভাবে আঘাত পেয়ে সেটি ওই অঞ্চল ছেড়ে পালায়। এর পরের টার্গেটে আঘাত হানে বীর। পাকিস্তানি মাইন-সুইপার মুহাফিজকে দেখেই ,একটা SS-N-2 উপহার পাঠায় আর এক ধাক্কায় মাইনসুইপার জলের তলায়।
অন্যদিকে, করাচী বন্দরের যে বিশাল অয়েল ট্যাংকার ছিল , সেটিতে একটি মিসাইল মারা হলে পুরো বন্দরে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এই অপারেশনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে প্রথম অ্যান্টিশিপ মিসাইলের সফল প্রয়োগ হয়। পাকিস্তানি বন্দর ও জাহাজ গুলি ধ্বংসের পর ১০০ জনের ওপর পাক নাবিক মারা যায়। এদিকে ভারতীয় ফ্লিটের একটি জাহাজ বা একজন অফিসারের গায়ে ,একটা আচড় ও লাগেনি ,তারা অপারেশন শেষে নিরাপদে ভারতীয় সীমায় পৌঁছে যায়।