November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali শিল্প ও সাহিত্য

টুকলি-র চুটকুলির একছটাক 

[kodex_post_like_buttons]

ভাবুক বাবুর ভাবনা

পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল, সিমেন্ট তৈরির একটি উপাদান লেখ। প্রায় সব ছাত্রই লিখল, বাঁদরের গু। পরীক্ষক তো হতভম্ব। রহস্য ফাঁস হল পরে। এক ভাল ছাত্র তার বন্ধুকে বলেছিল, লেখ, পাথরের গুঁড়ো। কানে কানে সে কথা যেতে যেতে হয়ে গেল বাঁদরের গু। এ হল টুকলির প্রথম ধাপ– হল কালেকশন বা হুইস্পারিং ক্যাম্পেনের সাইড এফেক্ট। কোন স্কুলের ঘটনা, এটা তা বলা যাবে না, বারণ আছে।

রসায়নের প্রশ্নপত্রে জানতে চাওয়া হয়েছে জলের আণবিক সংকেত। সহজ প্রশ্ন, উত্তরও জানা, কিন্তু টুকলিবাজরা কখনও পরীক্ষার হলে নিজেদের জানা জ্ঞান ফলাতে পারে না, ফলে অনেকের খাতাতেই উত্তর এল, জলের আণবিক সংকেত 1120। রসায়নে ডক্টরেট মাস্টারমশাই তো হতবাক। তবে কি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জলের আণবিক সংকেতও বদলে গেল? স্টাফ রুমের মাস্টারমশাইরাও এ ব্যাপারে কোনও আলোকপাত করতে পারলেন না। তদন্তের পর অবশেষে জানা গেল, ফার্স্ট গার্ল লিখেছিল ঠিকই H2O, টুকলি হতে হতে সেটা দাঁড়িয়ে যায় 1120।

তবে হ্যাঁ, টুকলিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল সাতের দশকের আইনস্টাইন, নিউটনেরা (ভাবতে ভাল লাগে, আমিও তাদের একজন)। পরীক্ষা এলেই আমাদের মধ্যে সে কী উত্তেজনা, কী উন্মাদনা! টোকার নিত্য নতুন টেকনিক আবিষ্কারের নেশায় নাওয়া–খাওয়া ভুলে আমরা মত্ত থাকতাম কী করে মাস্টারমশাইদের ভক্কি দেওয়া যায়। টুকলির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ১৯৭৫ সাল। বাংলা পরীক্ষা চলছে। আমি ভুলে গেছি, কী করে ‘ধ’ লিখতে হয়। ‘‌ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’‌ আমার খাতায় হয়ে গেল ‘‌বন বান্যে পুষ্পে ভরা’‌। লিখেই কেমন সন্দেহ হল। পাশে বসা বাচ্চুকে বললাম, ‘‌ধ’‌ কি করে লিখতে হয় দেখিয়ে দিবি? বাচ্চু কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, আমি ‘‌দু’‌ লিখতে পারছি না, আগে তুই ‘‌দু’‌ লেখা শেখা, তারপর আমি ‘‌ধ’‌ দেখাব। ঠিক হল বাথরুমে গিয়ে ‘‌দু’‌ আর ‘‌ধ’‌ আদানপ্রদান হবে। কিন্তু ভয়ঙ্কর গার্ড মনুদা আমাদের দু’‌জনকে একসঙ্গে বাথরুমে যেতে দেবেন না। তাই ঠিক হল, আমি আগে যাব, তার পর বাচ্চু, আবার পয়তাল্লিশ মিনিট পর আমি। বাথরুমের দেয়ালে তিনটে কলমের নিব ভেঙে খোদাই করে এলাম ‘‌দু’‌। আমি ফিরলাম, বাচ্চু গেল। খাতায় ‘‌ধ’‌ বাদ রেখে লিখলাম ‘‌ন ন্যে পুষ্পে ভরা’। মনে মনে ভাবলাম, পরের বার বাথরুম থেকে ফিরে জায়গায় জায়গায় ‘‌ধ’‌ বসিয়ে দেব। এদিকে বাচ্চু গেল তো গেলই, আর ফেরে না। মনুদার সন্দেহ হল, ছুটলেন বাথরুমে। গিয়ে দেখলেন বাচ্চু বাথরুমের সারা দেয়ালে ‘‌দু’‌ লেখা প্র্যাকটিস করছে। ব্যাস, কট রেড হ্যান্ডেড। অনেক অনুনয় বিনয়ের পর পাড়ার লোক মনুদা একটু নরম হলেন, বললেন, সারা খাতায় কোথাও ‘‌দু’‌ লিখতে পারবি না।

হাবুলের হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মত। প্রতিটি পরীক্ষার সম্ভাব্য উত্তরগুলো ও দশ আঙুলের নখের ডগায় লিখে রাখত। কোন আঙুলে কী লেখা, তার সূচিপত্র একটা সিগারেটের প্যাকেটের রাংতায় লিখে রোল করে নাকে ঢুকিয়ে রাখত। গার্ড স্যারের চোখ ঘুমে ঢুলে এলেই বেরিয়ে আসত সিকনি লাগা সূচিপত্র।

হায়ার সেকেন্ডারিতে অঙ্কে কম্পারটমেন্টাল পাব, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কোন্নগর হাই স্কুলে সিট পড়েছে। কিন্তু হল কী, স্কুলে ঢুকে দেখি কোনও অজ্ঞাত কারনে বেঞ্চে সিট নম্বর দেওয়া হয়নি। ব্যাস, কে কার পাশে বসবে, এই নিয়ে শুরু হয়ে গেল পানিপথের চতুর্থ যুদ্ধ। কুমারেশ ফার্স্ট বয়, কিন্তু বড্ড গম্ভীর, অতএব ওর পাশে বসে লাভ নেই। সেকেন্ড বয় তাপস চৌধুরী, অঙ্কে তুখোড় এবং আমাদের মতই আড্ডাবাজ। কিন্তু ওর পাশে বসার চান্স পেলাম না, বসতে হল ওর তিনটে বেঞ্চ পিছনে। হলের গার্ড সদাশয় ব্যক্তি, আমাদের খাতা আর প্রশ্নপত্র দিয়েই উনি চোখ বুজলেন, পরীক্ষা চলাকালীন আর খুললেন না। কঠোর শৃঙ্খলা মেনে রিলে পদ্ধতিতে তাপসের লেখা উত্তর হুবহু একেবারে শেষ বেঞ্চ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এমনকি সামনের বেঞ্চ থেকেও কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে তাপসের খাতা দেখে টুকতে লাগল। জানা গেল, ওরা তিনমাস মনসাতলা ব্যায়াম মন্দিরে ঘাড় ঘুরিয়ে মুণ্ডু পিছনে নেওয়া প্র্যাক্টিস করেছে। ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়! পরীক্ষা শেষ হতে আর আধ ঘন্টা বাকি, হঠাৎ মনে হল, আরে, রাফ তো টোকা হয়নি! রাফ না থাকলে তো সেই গোল্লা। আমার পাশে বসেছিল লুচি। লুচি লেখাপড়ায় ভাল। লুচি আমাকে একটু ভয়টয় পেত, কারন তখন চিনের চেয়ারম্যান আমার চেয়ারম্যান। আমার কাছে একদিন পাইপগান দেখেছে ও। আমি লুচিকে মোলায়েম করে বললাম, আমার খাতাটা কারেকশন করে দে, রাফটাও লিখে দিবি, তাহলে নিশ্চয়ই তুই বেঁচে থাকতে পারবি। লুচি চোখের জলে ভাসতে ভাসতে আমার খাতা ঠিক করে দিল। লুচি আর তাপস দু’‌জনেই ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। আমি যে ওই পরীক্ষায় পাস করেছিলাম, তার জন্য এই দুই বন্ধুর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

টুকতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে মুশকিল। আবার ফুটুর ডুম। যেমন সিপিএম–কে টুকে ক্ষমতায় এল তৃণমূল। এল তো বটে কিন্তু সেই বাঁদরের গু আর নর্দমার আণবিক সংকেত 1120 হয়ে গেল। এবার আবার তৃণমূলকে টুকছে বিজেপি। একসময় সিপিএমের চোর চোট্টারা তৃণভূল হয় গেছিল, সেই চোরেরাই আবার এখন বিজেপির গোয়ালে নাম লিখিয়েছে। লোকে বলছে, এবারের ভোট নাকি তৃণমূল বনাম তৃণভূলের লড়াই। ঠিকই তো, লড়াই চোরে চোরে মাসতুত ভাইদের মধ্যে, আমি কেন তার মধ্যে নাক গলাই? গলাই একটাই কারণে ভাই, পাছে আবার প্লাস্টিক সার্জারি করে আমাদের মাথা কেটে গরুর মাথা না বসিয়ে দেয়। কে আর সাধ করে গরু হতে চায় বলুন? তাহলে কি আদিতেই ফিরে যাওয়া উচিত? ঘরে আগুন লাগলে জল ঢালতে হয়, তা সে নর্দমাই হোক বা ডিস্টিল ওয়াটার। আদিতে ফেরার আগে, আগুন নেভাতে একবার নর্দমার জল ট্রাই করে দেখা যাক, পরের বার খাঁটি ডিস্টিল ওয়াটার, আগা মার্কা সিপিএম, কী বলেন?

Related Posts

Leave a Reply