ইথিওপিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দেবতা হিসেবে দেখছেন সেদেশের মানুষ!
কলকাতা টাইমসঃ
এপ্রিলের ২ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আফ্রিকার সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ। জুলাইতে ৪২ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ২ লাখ ৫১ হাজার ইথিওপিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে যান। তারা জাতিগত কারণে হিংসার শিকার হয়ে নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে এসেছিলো। সেই সময় তাকে দেখার জন্য মানুষের ঢল নেমেছিল। তাকে দেখার জন্য লোকে লাইন দিয়ে টিকিট কাটে।
অ্যাবি ইথিওপিয়ার মানুষকে চমকে দেন উদার সংস্কারের কারণে, যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করে। অ্যাবি হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্ত করে দেন, সেন্সর হওয়া শত শত ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করে দেন এবং ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ২০ বছরের যুদ্ধেরও অবসান ঘটান। জরুরি অবস্থা তুলে নেন এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেন।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদিস আবাবাতে ট্যাক্সির বড় স্ক্রিন এখন তাদের নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যাবির স্টিকারে ঢাকা। সাধারণ নাগরিকরা তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার করছেন প্রো-অ্যাবি স্লোগান দিয়ে, টাকা খরচ করছেন অ্যাবি টি শার্ট কিনতে। একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক ইলিয়াস টেসফায়ে জানান, গত ছয় সপ্তাহে তিনি ২০ হাজার টি শার্ট বিক্রি করেছেন অ্যাবির মুখ আকা। যেগুলোর দাম ৩০০ বির বা ১০ ডলার। জুনে রাজধানীর মেসকেল স্কয়ারে আয়োজিত এক অ্যাবি র্যালিতে অংশ নেয় ৪০ লাখ মানুষ।
বিষয়টা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অ্যাবি ইথিওপিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী যে সেদেশের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী অরোমোর সদস্য। ইথিওপিয়ার ৯০টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। জাত-পাতের রাজনীতি, তা থেকে টোরি হওয়া বিভেদের কারণে সবসময়েই গৃহযুদ্ধ লেগে থাকতো সেখানে। সাম্প্রতি ইথিওপিয়ায় আবারো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের মুখে ২০১৮ শুরুতে পদত্যাগ করেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাউদার্ন ইথিওপিয়ান পিপলস ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্টের হাইলে মারিয়াম ডিসালেন। এরপর ক্ষমতা গ্রহণ করেন অ্যাবি। অ্যাবি মোটেও তার আগের প্রধানমন্ত্রীদের মতো নয়।
তিনি রাজনীতিবিদদের প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরেছেন, ভক্তদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, তিনি শুধু ক্যামেরার সামনে হাসেন না বরং দীপ্তি ছড়ান। ইথিওপোয়ার জাতিগোষ্ঠীগুলোকে তিনি বার্তা দেন, দেয়ালটি ভেঙে দিন, বরং সেখানে সেতু তৈরি করুন। তিনি বলেন, একজন আরেজনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকো। যদি তুমি তোমার প্রজন্মের গর্ব হতে চাও। তারপর তোমাকে অবশ্যই মানতে হবে যে অরোমস, আমহারাস, ওলাইটাস, গুরেজেস এবং সিলটেস সবাই সমানভাবে ইথিওপিয়ান। বৈষম্যমূলক একটি রাষ্ট্রের জন্য এটি একটি বিপ্লবী ম্যাসেজ।
একই সঙ্গে অরোমো, আমহারিক, টিগরিনয়া এবং ইংলিশে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ অ্যাবি। মিনেসোটাতেও তিন ভাষাতেই সবাইকে সম্বোধন করেন তিনি। পাশাপাশি কিছু সোমালি ভাষাও বলেন ইথিওপিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের জন্য। তার পেশাগত জীবনও বেশ বর্নাঢ্য। ১৯৯০ এর দিকে অ্যাবি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে রুয়ান্ডাতে কাজ করতেন। তারপর ইথিওপিয়ান সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি ইনসার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন। ছিলেন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী। অরোমা এলাকার ডেপুটি প্রেসিডেন্টও হন তিনি।