ফোন (গল্প)
[kodex_post_like_buttons]
অমৃতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
“মা আমার ক্ষিদে পাচ্ছে বড্ড, ঘুমটাও ….”
পাশের ঘর থেকে ছোট্ট পিটুলির ঘুমধরা গলা আসছে যখন, উজ্জয়িনী, ওর মা, কাঁধে সেল ফোন চেপে কাত্ হয়ে পায়ের নখে নেলপলিশ রিমুভার লাগাতে লাগাতে অনর্গল কথা বলতে ব্যস্ত!
“-আঃ বড্ড বিরক্ত করতো তুমি, দেখছো না কথা বলছি তোমার আঙ্কেলের সাথে! প্লিজ, এখন ঘুমুতে যাও,
কথাশেষে উঠিয়ে খাইয়ে দেবোখন।…হ্যা বিনু বল। না বাবা আমার অত আদিখ্যেতা নেই… (খিলখিল্ হাসির মাঝে ধমক!)
আঃ পিটু নাকে কাঁদছো কেন? য়্যাই চুপ্,
বলছিতো ঘুমুতে।
(এক লহমা নীরবতা)
…হ্যা সানি বল।
আরে ধুর্ মেয়েটা বড্ড জ্বালাচ্ছে তখন থেকে !
না না তোমার দাদার এখনো আসার সময় হয়নি,
…আরে না না আজ শনিবার না?
ক্লাব হয়ে বাবু মস্তি টস্তি করে ফিরবেন।…আরে ধ্যুর্,
তুমি অত ব্যস্ত হয়োনা তো…
ও পিটুকে পরে খাইয়ে দেবো খন।…তার আগে তুমি বল দেখি নটিবয়, অফিস ট্যুরে গিয়ে মিসেস সেনের সাথে কি লটরপটরটা করে এলে?(ফের উজ্জয়িনীর কুলকুচি হাসিটা ডোর বেলের আওয়াজে থামে।)
“এই লক্ষ্মীটি- কে যেন ডোর বেল বাজাচ্ছে, এক মিনিট…ধরে থাকবে কিন্তু, ছেড়না যেন। তাহলে এমন চিমটি দেব না…! ইস্…, বড্ড হ্যাংলা হয়ে উঠছো কিন্ত! (কপট ব্যস্ততা উজ্জয়িনীর)
যাচ্ছিইই…এই ধর তো,
কে এলো দেখে আসি।…কেএএ?
ওমা! পিটু…তুই দরজা খুললি নাকি ? কে কে এলো রে?”
” দাদু উ উ”(পিটুর আহ্লাদি গলা)
“কোন দাদু? তোর?” (স্বগতোক্তি উজ্জয়িনীর)
ওঃ, এত রাতে আবার কোন ধান্ধায় যে এলো বুড়ো কে জানে? (গলায় সতর্কতা)
একি বাবা! আপনি?এত রাতে? কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তো? আপনার ছেলের তো আজ আসতে দেরী হবে,বলে গেছে।…আমি একটু ব্যস্ত আছি বাবা, পিটুর কাল একটা ক্লাস টেস্ট আছে তো, একটু পড়াচ্ছি।
(এবার হুংকার) এই পিটু,রাইমস্ টা পড়তে বললাম না? অমনি বই গুটিয়ে ফেললি? কি যে করি…হ্যা বাবা বলুন, (তার হাত থেকে একটা কাগজ নিয়ে) ওঃ, এই পরচাটা দিতে এলেন?
এত রাতে? ও গিয়েই তো নিয়ে আসতে পারতো কাল।
ঠিক আছে বাবা,ও এলে ওকে নয় ফোন করতে- বলবো। গুডনাইট বাবা,সাবধানে যাবেন।একটু দেখে!
…এই পিটু হাঁ করে তাকিয়ে আছিস যে? চড় খাবার ইচ্ছে হয়েছে না?
এই এই এই পিটু ,দাঁড়া বলছি,দরজা খুলে দাদুর পিছন পিছন কোথায় যাচ্ছিস? সিঁড়িটা অন্ধকারতো, দাঁড়াতে বলছি কিন্তু …নইলে…”
উজ্জয়িনী কে থামিয়ে একটা শিশুর গলার কান্না বাড়িময় ঘুর পাক খায়।
“দাদু-উ-উ, তুমি যেওনা প্লিজ্, আমি তোমার সাথে যাবো…”