September 24, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা শিল্প ও সাহিত্য

ও লড়কি বহুত ফালতু হ্যায় ! ক্যায়সে চম্বল কি রাণী বন গিয়া কৌন জানে ?  

[kodex_post_like_buttons]

আবার চম্বল কাহিনী, এবার মিশন ‘ফুলন’ !!! (পর্ব ৯)

সৌগত রায়বর্মন : 

ঘুম থেকে উঠলেন মালখান সিং। খাতির করে আমাদের মাটিতেই বসতে দিলেন। জেলে তো আর সোফা সেট বা ডিভান থাকে না ! অবশ্য থাকলেও অবাক হতাম না। আফটার অল সামনে বসে আছেন চম্বলের এক বেতাজ বাদশা। খুঁখার ডাকাত বাগী মালখান সিং। ডাকু বললে যদি খেপে যায় তাই বাগীজী বলেই সম্বোধন করতে হল।

মনে মনে ঠাকুরের নাম নিয়ে কাতর স্বরে বলে উঠলাম, ঠাকুর, চারদিকে এত ডাকাতের ভীড়, একটু পাতলা করো মা। আমাকে ডাকাত করে দাও না গো। পুলিশ যাদের সামনে যেতে প্যান্ট ভিজিয়ে দেয় , তাদের থেকে ভাগ্যবান আর কে আছে?

থিতু হতে যতক্ষণ সময়, তারপর শুরু হল কথাবার্তা। মালখান যে দেহাতি টোনে হিন্দি বলছে তার এক বিন্দুও আমাদের বোধগম্য হচ্ছিল না।

মালখান নিজেও বুন্দেলখন্ড লাগোয়া অঞ্চলের বসিন্দা। জাতিতে গুর্জর। উচ্চবর্ণ। কেনো সে ডাকাত হল, তার কোনও সদুত্তর আমরা পাইনি। আসলে তার ভাষা বোঝার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। তখন সহায় পাশের পুলিশবাবুটি।

তাকে অনুরোধ করলাম সে যেন সহজ হিন্দিতে আমাদের কথোপকথন বুঝিয়ে বলে। কিন্তু আমরা কে? ওর বস মালখানজী অনুমতি না দিলে সে কি করে বলে?

তাই হল, আমরা কি বলতে চাইছি সেটা আন্দাজ করে মালখান নিজেই তাকে অনুবাদকের কাজ দিল। পুলিশবাবুটি অত্যন্ত খুশি হলেন।

মালখানের কথা অনুযায়ী তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল তার গ্রামের সরপঞ্চ । উনিশ বছর বয়েসে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল প্রায় বারো বছর।

১৯৬৪ সালে সে ফিরে আসে গ্রামে এবং সেই গ্রামপ্রধানকে খুনের চেষ্টা করে। কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় সেই প্রধান। ফলত পুলিশের ভয়ে মালখান আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় বেহড়ে ।

শুরু হলো তার ডাকাতদের জীবন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মালখান ছিল ডাকাত রাজা। এই দীর্ঘ জীবন ডাকাতি করে বেড়ালেও তার বিরুদ্ধে কোনো খুনের অভিযোগ ওঠেনি। এই দাবী করেছিল মালখান স্বয়ং।

ফুলনের বিরুদ্ধে তার এটাই অভিযোগ। বেহমাই হত্যাকাণ্ড সে মেনে নিতে পারেনি। যেমন পারেনি ছবিরাম পথির সাতজন মালহাকে গুলি করে মারা।

কিন্তু মালখান সিং-এর পর এত জনপ্রিয়তা আর কোনো ডাকাতের ভাগ্যে জোটেনি। কারণ সেই রবিনহুড সিনড্রোম।

মালখান ডাকাতি করেছে মাত্র ৯৪ টি। কিন্তু সে সব ডাকাতির অধিকাংশই বিলিয়ে দিয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে।

এক সময় তার সম্পর্কে পুলিশের ধারণা ছিল, মালখানের অস্ত্র ভাণ্ডারে না কি স্টেন গান, রকেট লঞ্চার বা মেশিন গান ছিল, সে কথা সে আমাদের কাছে অস্বীকার করেছিল। কেননা আত্মসমর্পণ করার সময় সে জমা দিয়েছিল মামুলি কিছু গাদা বন্দুক।

১৯৮২ সালের জুন মাসে মালখান আত্মসমর্পণ করে  ভিন্দ শহরে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন সিং এর কাছে । সেই সময় তাকে শুধু চোখের দেখা দেখতে ৩০ হাজার মানুষের জমায়েত দেখেছিল ভিন্দ শহর।

এই হিরোগিরির জন্যই।

শুধু মালখান কেনো সামান্য কারণেই সাধারণ মানুষ ডাকাতির জীবন বেছে নিতে ভালোবাসতো।

মালখানের জনপ্রিয়তা বাড়ার আরো একটা কারন ছিল। পুলিশের সঙ্গে তার মোট তেরো বারের এনকাউন্টারে মালখানের টিকিও ছুঁতে পারেনি  পুলিশ । প্রতিবারই তার গৌরবজনক পশ্চাদপসরণ ঘটেছিল। ‘জোর যার মুল্লুক তার’। পুলিশকে যে মুখের ওপর জবাব দিতে পারে সেই তো আসলি হিরো নাম্বার ওয়ান।

এই মনোভাব থেকেই বোঝা যায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ওই অঞ্চলের মানুষের কতটা প্রবল।

ফুলন কিন্তু বেহমায় হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে মালখানের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিল। মালখান কিন্তু তাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

কেনো? এই প্রশ্ন শুনে হো হো করে হেসে উঠল। সে হাসির কী দাপট! যেন মেশিনগানের অনর্গল বুলেট।

হাসি থামাতে বলল, ও লেরকি বহুত ফালতু হ্যায় ! ক্যায়সে চম্বল কি রাণী বন গিয়া কৌন জানে ?

 – ক্রমশ ….. 

Related Posts

Leave a Reply