পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম হলে তাড়াতাড়ি বিয়ে নয়!
কলকাতা টাইমস :
বহু তরুণীর অভিভাবকদের একটি ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে বিয়ের পর পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমের সমস্যা কেটে যাবে। আরও স্পষ্ট কথায় বললে, অনেকেই ভাবেন মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে দিলে পলিসিস্টিকের জন্য আর কোনো টেনশন থাকবে না। কেন একটা সামান্য কারণে সদ্য যৌবনে পা রাখা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা একটি মেয়ের বিয়ের কথা ভাববেন? মানসিকভাবে প্রস্তুত নয় এমন মেয়েকে বিয়ের পরই মা হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হবে কেন?
লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য শহরের কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে এই সিনড্রমে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে ঠিকই। তা বলে মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে পিসিওএস প্রতিরোধ করা যাবে এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যুগ বদলেছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে অহেতুক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। পলিসিস্টিকের জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে করে গর্ভধারণ করার দরকার নেই। তবে ৩০ বছরের মধ্যে মা হয়ে যাওয়াই ভালো। তা না হলে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে।
শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে ডিম্বাণু নিঃসরণ ঠিকমতো হয় না। এটা এমন কিছু সমস্যার বিষয় নয়। তা ছাড়া, পলিসিস্টিক ওভারি হলেই যে অপারেশন করতে হবে- এমন কোনো দরকার নেই।
সাবধান :
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা হলে ও অতিরিক্ত মোটা হলেই সতর্ক হোন তরুণীরা। এখন কম খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য কমবয়সীদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাই নির্ধারিত সময়ে পিরিয়ড না হলে, দু-তিন মাস ধরে না হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বেড়ে গেলেই সাবধান হোন। আপনি ওবেসিটি আক্রান্ত কি না কিংবা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমে ভুগছেন কি না তা আন্দাজ করতে পারবেন নিজেই।
চেক করে নিন বিএমআই : মোট ওজন (কিলোগ্রাম)/ উচ্চতা২ (মিটার) = বিএমআই। বিএমআই ১৮.৫-র কম = স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন, ১৮.৫-২৪.৯ = স্বাভাবিক ওজন, ২৫-২৯.৯ = অতিরিক্ত ওজন (সতর্ক হতে হবে), ৩০-এর বেশি = ওবেসিটি আক্রান্ত।
উপসর্গ :
অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া, চিবুক-ঠোঁটের ওপরের অংশে অবাঞ্ছিত লোম, মোটা হয়ে যাওয়া, ওবেসিটি আক্রান্ত হওয়া, থাইরয়েডের সমস্যা হওয়া।
ওজন কমান :
প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত শরীরচর্চা আর সুষম খাদ্য খেয়েই পিসিওএস মোকাবিলা করা যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। রোগীর অতিরিক্ত ওজন বাড়লে প্রথমেই তা কমাতে হবে। কোন ধরনের খাবার খাবেন ও কী কী খাবেন না, তা জানার জন্য অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। এক্সারসাইজ, ডায়েটিং ও জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করার ছ’মাস পর ফের গাইনোকলজিস্টের কাছে যান। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে ডাক্তার যদি দেখেন পিসিওএস-এর সমস্যা কমেছে, ঋতুচক্র স্বাভাবিক হয়েছে তাহলে এই পদ্ধতিই রোগীকে চালিয়ে যেতে হবে। সমস্যা থেকে গেলে কিছু ওরাল মেডিসিন, মূলত পিল দেওয়া হয়। এই পিল ঋতুচক্রকে নিয়মিত করে। ফলে ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হতে শুরু হয়।
কুমারী-বিবাহিত যাই হোন না কেন ওরাল পিল সেবন করুন :
অনিয়মিত ঋতুচক্রকে নিয়মিত করতে ডাক্তাররা বেশ কিছু পিল দেন। ২৪ দিন পিল খাওয়ার পর চার দিন গ্যাপ দিয়ে ফের ২৪ দিন পিল খাওয়া যায়। এমন কিছু নতুন পিল পাওয়া যাচ্ছে যা এই চিকিৎসায় বেশ উপকারী। এছাড়া ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে Desogestrel, Gestodene, Drospirenone, Cyproterone যৌগযুক্ত কম ডোজের পিল ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ব্যবহার করা যায়। কুমারী মেয়েরাও এইসব পিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন। পিসিওএস-এ আক্রান্ত বিবাহিত মেয়েরাও এই পিল নিতে পারেন। এগুলি গর্ভনিরোধক হিসাবেও কাজ করে। তাই বিয়ের পরও এই ওরাল মেডিসিন দিয়ে দিব্যি চিকিৎসা চলে। ঋতুচক্র নিয়মিত হলে মহিলারা অনেকটাই মানসিক চাপমুক্ত থাকেন। তবে ছ’মাস অন্তর ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর গতিবিধি জেনে রাখা জরুরি।
মা হতে চাইলে :
প্রেগন্যান্সি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওরাল মেডিসিন নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এরপর যদি অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনো অসুবিধা হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে। অনিয়মিত ডিম্বাণু বেরনোকে নিয়মিত করে দিলেই ভবিষ্যতে মা হতে আর কোনও অসুবিধা থাকবে না। তবে পলিসিস্টিকের সঙ্গে ওবেসিটি থাকলে বিষয়টি জটিল হতে পারে। তাই মা হতে চাইলে আগে ওজন কমাতে হবে। এই রোগীদের প্রেগন্যান্সির সময় ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সিস্টগুলিকে পাংচার (ড্রিলিং) করে দেওয়া হয়। তাতে সাময়িকভাবে ডিম্বাণু নিঃসৃত হতে পারে। তবে এখন এত আধুনিক ওষুধ বেরিয়েছে যে ড্রিলিং করার দরকার হয় না।
সন্তানের জন্মের পর :
সন্তানের জন্মের পর অনেকেই পিসিওএস-এর চিকিৎসা ছেড়ে দেন। তখন অনেক ক্ষেত্রেই ফের পলিসিস্টিক ওভারি ফেরত আসে। অনেকে মোটা হয়ে যান, ব্লাড সুগার লেভেল বর্ডার লাইনে এসে যায়। সে রকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ব্লাড সুগারের জন্য মেটাফরমিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
৪০-এর পর ডায়াবেটিস :
নিয়মিত চিকিৎসা করালে এর কোনো সমস্যাই হয় না। কিন্তু এটাও ঠিক, রোগীর ৪০ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থাকে। ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশারে ভোগার প্রবণতাও থাকে। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে এগুলো এড়ানো সম্ভব।