পোস্টমর্টেম: মিগ-২১ !
কলকাতা টাইমসঃ
আরও একটি মিগ-২১ শুক্রবার রাজস্থানে ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এর পরই ‘মিগ’ বিমানের বারবার দুর্ঘটনায় পড়া নিয়ে শুরু হয়েছে পোস্টমর্টেম।
বিমানটি ভেঙ্গে পড়লেও পাইলট প্রাণে রক্ষা পান। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি মিগ-২১ সহ মোট তিনটি বিমান হারালো ভারত। এর মধ্যে একটি মিগ-২১ সহ দুটি বিমান ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সঙ্গে আকাশ যুদ্ধে ভেঙ্গে পরে। সূত্রের খবর, গত এক মাসে ৭ থেকে ৮ বিমান ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে ‘মিগ’ এর সংখ্যাই বেশি।
২০১২ সালে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সংসদে দেওয়া এক বিবৃতি সবাইকে হতবাক করে দেয়। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়া থেকে কেনা ৮৭২টি মিগ বিমানের মধ্যে অর্ধেক বিমান দুর্ঘটনার কবলে পরে ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২০০ জনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। মিগ-২১ মোটেও খারাপ বিমান নয়। এটি একটি যন্ত্র এবং সব যন্ত্রের মতো এরও একটি সুনির্দিষ্ট আয়ু আছে। গত অর্ধ শতক ধরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ‘মেরুদণ্ড হিসেবে’ কাজ করছে মিগ-২১। অর্থাৎ আয়ুসীমা অনেক আগে অতিক্রম করলেও এখনো মিগ-২১ বিমানের বহর ব্যবহার করছে ভারত। ভারতীয় বিমান বাহিনীর অনেক পাইলট মিগ-২১ কে ‘উড়ন্ত কফিন’ হিসেবে ডেকে থাকেন।
এই বিমান ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিনশ মাইল গতিতে রানওয়ে স্পর্শ করে। বিমানের এতো প্রচণ্ড গতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করে থাকেন। এছাড়া, বিমানের জানালা এমন ভাবে তৈরি যে অবতরণের সময়ে রানওয়ে ভালভাবে দেখা সম্ভব হয় না। এদিকে, ভারতের আবহাওয়া উষ্ণ হওয়ায় মিগের ইঞ্জিন থেকে আকাশে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বা থ্রাস্ট ১২ শতাংশ কম পাওয়া যায়। পাশাপাশি মিগের ডানারও ওড়ার শক্তি বা লিফট ১২ শতাংশ কমে যায়। মিগের ইজেকশন সিট বা জরুরি অবস্থায় বিমান থেকে পাইলটকে বের করে আনার ব্যবস্থাও আধুনিক নয়। বিশেষ করে নিচু দিয়ে ওড়ার সময় এই ব্যবস্থা সফল হয় না ফলে প্রাণ হারাতে পারেন হতভাগ্য মিগ-২১ চালকরা।
গত এক দশকে ভারতীয় বিমান বাহিনী ৮৫ জনেরও বেশি পাইলটকে হারিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই ছিলেন একেবারে তরুণ। বেশির ভাগ মিগ-২১ বিমানই কারিগরিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, পাইলটের ভুলের জন্য নয়। ভারতীয় অনেক মিগকে চালু রাখা হয়েছে ‘ক্যানিবলিজম’ এর মাধ্যমে। অর্থাৎ বাতিল মিগ-২১’এ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে এসব বিমানকে চালু রাখা হচ্ছে।