September 24, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular সফর

নিষিদ্ধ দ্বীপের নিষিদ্ধ হাতছানি, ভুলেও যেন সাড়া দেবেন না 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

ভ্রমণপিপাসু ও থ্রিলার প্রিয় মানুষেরা সব সময় নতুন, অজানা, রহস্যময় বা নিষিদ্ধ কোনা কিছুর নাম শুনলেই নড়েচড়ে বসেন। কারণ রহস্য তাঁদের টানে, অজানা জিনিস তাঁদেরকে জানার হাতছানি দেয়। এমনি একটি জায়গা হলো সেন্টিনেল দ্বীপ। আমাদের বঙ্গোপসাগরে বুকেই লুকিয়ে আছে এমনি একটি দ্বীপ; যার সন্ধান আমরা অনেকেই জানি না।

জানি না সেই দ্বীপের বাসিন্দাদের কথা। তারা দেখতে কেমন, কি ধরনের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত, বহির্বিশ্ব সম্পর্কে তারা কী ভাবে সে সম্পর্কেও কিছুই জানার সুযোগ নেই। এই পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে তাদের আদৌ কোনা ধারণা আছে বলেও মনে হয় না। এই পৃথিবীর অধিবাসী হয়েও তারা এই দীর্ঘ সময় ধরে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে টিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকের ছোট্ট এক নির্জন দ্বীপে। সত্যিই এটি একটি অপার রহস্য!

রহস্যময়ী এই দ্বীপের মানুষগুলোও খুব রহস্যময়। নিজেরাই চায় না বাইরের পৃথিবীর মানুষ তাদের রহস্য ভেদ করুক, তাদের জানুক, যোগাযোগ করুক তাদের সঙ্গে। তারা পৃথিবীর অন্য সব মানুষের চোখের আড়ালবর্তী হয়েই বাঁচতে চায়। হাজার হাজার বছর ধরে তারা বাইরের মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টি ও জানার আগ্রহকে অত্যন্ত কঠোরভাবে উপেক্ষা করে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলেছে। তাদের সীমানায়, তাদের জীবনে উঁকি দেওয়ার অধিকার আজও কোনা মানুষ, জাতি বা দেশ অর্জন করতে পারেনি। তাদেরও বিন্দুমাত্র কোনা আগ্রহ নেই অবশিষ্ট পৃথিবী বা পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে জানার।

রবিঠাকুরের সেই দারুচিনি দ্বীপের মতোই কৌতূহলী মানুষকে বারবার রহস্যের হাতছানি দিয়ে ডাকে এই দ্বীপ। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও সেই দ্বীপের জমিতে পা রাখতে বা দারুচিনি কন্যাদের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেনি কোনা মানুষ। এটি একটি নিষিদ্ধ দ্বীপ। ভারতীয় জলসীমায় হওয়ায় এবং ভৌগোলিক সীমারেখার মানদণ্ডে এই দ্বীপটি ভারতের। কিন্তু ভারত সরকার শত চেষ্টা করেও দ্বীপে তাদের নাক গলানোর সুযোগ করতে পারেনি। শেষমেশ ভারত বাধ্য হয়েই আইন করে দিয়েছে, ‘লেট দেম লিভ অ্যালোন’। তাই কেউ এখন আর তাদের নির্জনতা, গোপনীয়তা, রহস্যময়তা, স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা ভঙ্গ করার কোনা অধিকার রাখে না। দ্বীপের বাসিন্দারাও সেই অধিকার কাউকেই দিতে চায় না। তারা নিজেই রাজা তাদের সেই নিজের রাজত্বে।

আলোচিত এই দ্বীপটির নাম, সেন্টিনেল দ্বীপ। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে সাগরের তলদেশ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত সবখানেই বিজ্ঞানের জয়জয়কার। সবকিছুই মানুষের নখদর্পণে। সেখানে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা এই দ্বীপটি এখনো বলতে গেলে অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। দ্বীপের সন্ধান পাওয়া গেলেও, দ্বীপটি সম্পর্কে জানা যায়নি তেমন কোনো তথ্য। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, দ্বীপটির বয়স প্রায় ৬০ হাজার বছর। আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে এবং কাগজে কলমে দ্বীপটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দ্বীপের ওপর ভারতের আদৌ কোনো কর্তৃত্ব নেই। অনেকবার চেষ্টা করেও দ্বীপটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারেনি ভারত সরকার নিজেও। এমনকি বহুবার চেষ্টা করেও তারা এ দ্বীপটিতে ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছে। কেউ ঢুকতে গেলেই তারা সেখানকার অধিবাসীদের হিংস্রতার শিকার হয়। ভুল করে, দুর্ঘটনার কারণে, বা পথ হারিয়ে কেউ সেখানে প্রবেশ করলে তাদেরকে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে। এমনকি হেলিকপ্টারও সেখানে ল্যান্ড করতে সাহস পায় না।

জাতিতে এরা সেন্টিনেলি। সেন্টিনেলিরা বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত আদিবাসী আন্দামানি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। গ্রেট আন্দামানের উত্তর সেন্টিনেলি দ্বীপপুঞ্জে এই জনগোষ্ঠীর বাস; তাই তাদেরকে সেন্টিনেলি বলা হয়। ধারণা করা হয় প্রস্তর যুগ থেকে এই দ্বীপে তাদের বসবাস চলে আসছে। বহিরাগতদের ওপর আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য তারা বিশেষভাবে পরিচিত। দ্বীপে হেলিকপ্টার নামলে, নৌকা, জাহাজ ভিড়লে তারা দৌড়ে গিয়ে তীর-ধনুক দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। এ কারণে কেউ সফলভাবে এই দ্বীপে যেতে পারে না। বাইরের জগতের কারও নাক গলানো মোটেও সহ্য করে না এখানকার বাসিন্দারা।

এরা মূলত একটি শিকার-নির্ভর জাতি। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ শিকার, মাছ ধরা ও বন্য লতাপাতার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী ও দ্বীপের উদ্ভিদই সম্ভবত তাদের খাদ্য। এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে কৃষিকাজ করার কোনা প্রমাণ দেখা যায় না। এদের কুড়েঘরগুলোর কোনো দেয়াল নেই, শুধু মাথার ওপর ছাউনিটি মাটি পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। আশপাশে কুড়িয়ে পাওয়া ধাতব সামগ্রী দিয়ে অল্প কিছু জিনিস বানাতে পারলেও ধাতু দিয়ে তেমন কিছু বানাতে পারে বলে মনে হয় না। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আজও এরা হয়তো আগুন জ্বালাতে শেখেনি।

Related Posts

Leave a Reply