November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

স্বামীর মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে ঘুমাতেন এই রানি, একবছর পর …

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

বিশ্ব শাসন করা শাসকদের নিয়ে চর্চার শেষ নেই। তবে শুধু রাজ্য পরিচালনা করার জন্যই নয়, নানান কারণে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। ক্যাস্টিল রাজ্যের রানি জোয়ান্না তার স্বামীর মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে ঘুমাতেন। সম্রাট শাহজাহানের আগেই ভালোবাসার এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন রানি জোয়ান্না।

প্রিয়তমকে স্বামীকে ‘দ্য হ্যান্ডসাম’ নামে ডাকতেন জোয়ান্না। রানি জোয়ান্না তার স্বামী বার্গান্ডির ডিউক ফিলিপের পচা মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন, ঘুমাতেনও। সবাইকে বলতে রাজা এখন ঘুমাচ্ছে। তার ঘুমের যেন কোনো অসুবিধা না হয়। এজন্য কাউকে কোনো শব্দও করতে দিতেন না রাজপ্রাসাদে। এমনকি প্রতিদিন রাজা ফিলিপের মৃতদেহ পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরানো হতো।
দেহ পচন শুরু করার পরও জোয়ান্না এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার স্বামীর দেহ তার ঘরে রাখার বিষয়ে অনড় ছিল। এই পুরো সময় জুড়ে, তিনি ভান করেছিলেন যে তার স্বামী এখনও জীবিত এবং ভালো আছেন। আর তাই তিনি প্রসাদের সকল কে সতর্ক করে বলেন, তারা যেন রাজাকে সম্মান করে এবং তার ঘুমের কোনো বিঘ্ন না ঘটায়।
The Tragic Story of Joanna the Mad - Medievalists.net
আসলে রানির এমন কাজের পেছনে ছিল অন্য কারণ। রাজ পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই রাজনৈতিক কারণে বিয়ে করতেন এবং তাদের বেশিরভাগই বিয়ে করে প্রেমহীন জীবনযাপন করতেন। খুব কমই স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ভালবাসতো। তবে রানি জোয়ান্নাও তার স্বামী ফিলিপকে খুব ভালোবাসলেও ফিলিপ তাকে ভালোবাসেনি কখনোই।
রাজ্যের মানুষের কাছে ভালোবাসার উদাহরণ হয়ে ওঠেন রানি জোয়ান্না। তবে রাজা ফিলিপ ছিলেন অন্য নারীতে আসক্ত। জোয়ান্নার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করেছনে শুধু সিংহাসন পাওয়ার জন্য। এই নিয়ে ফিলিপের সঙ্গে ঝামেলাও হত জোয়ান্নার। একবার এক দাসীর চুল কেটে দিয়েছিলেন জোয়ান্না। আরেক নারীর মুখে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলেন। এরা সবাই ছিল ফিলিপের উপপত্নী।
রানি জোয়ান্নার জন্ম টলেডো শহরে ১৪৭৯ সালের ৬ নভেম্বর। আরাগনের ফার্ডিনান্ড দ্বিতীয় এবং ক্যাস্টিলের রানি ইসাবেলা প্রথমের তৃতীয় সন্তান জোয়ান্না। ঐতিহাসিকরা জোয়ান্নাকে বর্ণনা করেছেন স্বর্ণকেশী চুলের এক নারী হিসেবে। তার গায়ের রং ছিল ধবধবে সাদা ও নীল চোখ।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে জোয়ান্নার সঙ্গে বার্গান্ডির ডিউক ফিলিপের বিয়ে হয়। ধূসর-নীল চোখের ফিলিপ ছিলেন খুবই সুদর্শন। জোয়ান্না ফিলিপকে এতোই পছন্দ করতেন যে তাকে ডাকতেন দ্য হ্যান্ডসাম নামে। তবে জোয়ান্নার বিয়ের পর ক্যাস্টেল রাজপরিবারে একের পর এক দুঃসংবাদ আস্তে থাকে। ক্যাস্টিলের রানি ইসাবেলা প্রথমের মৃত্যুর পর তার একমাত্র পুত্র সিংহাসনে বসেন। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান তিনি। তখন তার বয়স মাত্র ১৮ বছর। তার মৃত্যুর দুইমাস পর তার স্ত্রী একটি মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।
এরপর রানির প্রথম মেয়ে ও জোয়ান্নার বোন সিংহাসনে বসেন। তবে কয়েক মাসের মাথায় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনিও মারা যান। দুই বছর পর তার সেই পুত্রও মারা যান অসুস্থ হয়ে। এবার আসে জোয়ান্নার পালা। তবে সবাই ভয়ে ছিলেন শপথ নেওয়ার পর জোয়ান্নার ভাগ্যেও একই ঘটনা না ঘটে।
এদিকে জোয়ান্নাও পরিবার ও স্বজন হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সেই সুযোগই নেন ফিলিপ। জোয়ান্নার অনুপস্থিতিতে অন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৫০৪ সালে সিংহাসনে বসেন। ফিলিপ বেশ কয়েকবার জোয়ান্নার রাজ্য দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হন।
সবকিছুর মাঝে জোয়ান্না অস্ট্রিয়ার মেরি ও ক্যাথরিন নামে দুটি কন্যা ও চার্লস পঞ্চম নামের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ১৫০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনের জ্বরে মারা যান ফিলিপ। জোয়ান্না প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে তখন পাগলপ্রায়। ফিলিপকে ছাড়া তিনি কিছুই বুঝতেন না। এজন্য তাকে সমাধিও দিতে দেননি। নিজ ঘরে শুইয়ে রেখেছেন। খাবার টেবিলেও বসিয়ে রাখতেন ফিলিপের মৃতদেহকে। কোথাও ঘুরতে গেলেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন ফিলিপের মৃতদেহ। ফিলিপ বেঁচে থাকতে তার সঙ্গ যতটা না পেয়েছেন মারা যাওয়ার পর তার থেকে বেশি পেয়েছেন জোয়ান্না।
এসব কর্মকান্ডের জন্য অনেক ইতিহাসবিদ জোয়ান্নার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ইতিহাসবিদরা অনুমান করেন যে ক্যাস্টিলের জোয়ান্না সাইকোসিস, সিজোফ্রেনিয়া এবং ম্যানিক ডিপ্রেশন সহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত জোয়ান্না তার স্বামীকে সমাধি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তাও বছরখানিক পর। ফিলিপের পায়ে চুম্বন করে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন প্রিয়তম স্বামীকে।
ফিলিপের মৃত্যুর ৪৯ বছর পর জোয়ানা মারা যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামী ফিলিপের শোকে কালো পোশাক পরেছিলেন সবসময়। তার মানসিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং তার বাবা ফার্ডিনান্ড দ্বিতীয়ের মৃত্যুর পর, জোয়ানার পুত্র চার্লস পঞ্চম সিংহাসনে আরোহণ করেন। তবে চার্লস পঞ্চম সিংহাসনে আরোহণের পর জোয়ান্নাকে পুরোপুরি গৃহবন্দি করে রাখেন। সেখানেই ১৫৫৫ সালে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় জোয়ান্নার।

Related Posts

Leave a Reply