স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন- তাই ‘টাটা’ এখনও ১০ টাকাতেই…!
কলকাতা টাইমস :
তামিলনাড়ুর এই ঘটনা খুবই আগ্রহোদ্দীপক। ১৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে মাদুরাই শহরে আসে রামু নামের এক কিশোর। অচেনা শহরে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।
১৯৬৭ সালে রামুর বয়স ২০ বছর, বিবাহিত। সাধারণ শ্রমিক রামু খেয়াল করে দেখলেন, মাদুরাইয়ের মঠে প্রচুর গরীব লোকজন আসা-যাওয়া করে দৈনিক, কিন্তু তাদের খাওয়া-দাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই, খাবারের জন্য তাদের টাকা-পয়সাও থাকতো না সঙ্গে। এসময় স্বল্প পুঁজিকে সম্বল করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে শুরু করলেন একটি খাবারের দোকান।
তাদের সেই হোটেলের প্রধান আইটেম ছিল দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার ইডলি, ডোসা, পোঙ্গল ইত্যাদি। তবে খাবার সুস্বাদু হবার পাশাপাশি আরেকটি বিষয় ছিল সেখানে- খুব সস্তায় যে কোনো আইটেম খাওয়া যেত। সত্যিকারে ‘গরীব মানুষদের’ এই হোটেলে এখন ১০ টাকাতে তিনটি ইডলি মেলে।
রামুর হোটেল জনপ্রিয় হয়ে যায় খোলার কয়দিনের মাঝেই। এর আরও বিশেষত্ব হল- ২০০৫ সালে এখানে সব খাবারের মূল্য মাত্র ১০ রুপি ছিল, সেই চল এখনো আছে। এছাড়া সকালের নাস্তাও মেলে ১০ টাকাতে আবার দুপুরের খাবার খেতে গেলেও ১০ টাকাই দিতে হয়।
১৪ বছরে বাড়ি পালানো রামুর বয়স এখন ৭০ বছর। স্ত্রী মারা গেছেন ২০০৫ সালে। মৃত্যুর আগে স্বামীকে বলে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের সেবা করতে। এ কারণে রামু এখনো শত সমস্যার মাঝেও ১০ টাকাতে মানুষকে খাওয়ানোর সুবিধা চালু রেখেছেন। প্রতিদিন তার ছোট হোটেলটিতে প্রায় ৩০০ মানুষ খেতে আসে। কোনোদিন যদি খাবার শেষ হয়ে যায় কিন্তু কাস্টমার থেকে যায়- তখন রামু ওইসব কাস্টমারদের অতিরিক্ত টাকা দেন অন্য হোটেলে গিয়ে খেয়ে নেওয়ার জন্য।
এছাড়া কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার পাশাপাশি তার আয়ও তাদের সঙ্গে শেয়ার করেন আলাদাভাবে।
এতসব ‘অস্বাভাকি আচরণের’ কারণে এই হোটেল বাবদে রামুর আয় রোজগার বরাবরই কম। কিন্তু তাতে কখনো মনস্তাপ নেই তার। এলাকার লোকজন তাকে সম্মান করে ‘রামু টাটা’ নামে ডাকে। অনেকেই তার হোটেলের এই জনকল্যাণমূলক কাজকে চালু রাখতে আর্থিক সহায়তাও দিয়ে থাকেন।