সত্যিই ক্যান্সার নাকি ফাঁদ…
কলকাতা টাইমস :
ক্যান্সার হলো মূলত ভিটামিন বি ১৭ এর ঘাটতি। ঠিক যেভাবে স্কার্ভি কোনো রোগ নয় বরং ভিটামিন সি এর ঘাটতি। অথচ স্কার্ভি রোগ নিয়েও জল কম ঘোলা হয়নি। একটা সময়ে স্কার্ভি রোগ নিয়েও প্রচুর ব্যবসা করা হয়। পরে প্রমাণিত হয় স্কার্ভি কোনো রোগ নয়। ঠিক তেমনি ক্যান্সারও কোনো রোগ নয়। বরং দেহে একটি ভিটামিনের ঘাটতির কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
অথচ উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে, ক্যান্সার হলো এমন একটি রোগ যার ফলে দেহের কোনো কোষের অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি ঘটে। যা পরে দেহের অন্যান্য অংশেও আক্রমণ করতে পারে।
আধুনিক বিশ্বে ক্যান্সার এতটাই ব্যাপভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, বয়স্ক, যুবা, শিশু এবং প্রত্যেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ক্যান্সার নিয়ে ব্যবসা শুরু হয় ব্যাপক আকারে।
আর একে পুঁজি করে পশ্চিমের ওষুধ কম্পানিগুলো প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সুতরাং একে একটি ব্যবসার পুঁজিও বলা যায়। তবে একেবারে অন্ধভাবে একে ব্যবসা বলা হয়তো ঠিক হবে না। কেননা ওষুধ কম্পানিগুলো ব্যবসা করার পাশপাশি ক্যান্সারে আক্রান্তদেরকে ব্যথা থেকেও মুক্তি দিয়েছেন।
কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন বা সার্জারি সহ ক্যান্সারের সব চিকিৎসাই ক্যান্সারের তীব্রতা কমাতে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
তাই আধুনিক ওষুধের প্রতিনিধিত্বকারীরা বলেন, ক্যান্সার গবেষণায় যে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় তা করা হয় মূলত ক্যান্সারের চিকিৎসায় এবং ক্যান্সার নিরাময়ে। ব্যবসা করার জন্য নয়।
কিন্তু ক্যান্সার নিয়ে যে গোপন ব্যবসা করা হয় তা ধরা পড়বে, এই সত্যটি থেকে যে, যেসব ওষুধ কম্পানি ক্যান্সার গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করে তারা সেই অর্থ ক্যান্সারের ওষুধ বিক্রি করে তুলে নেয়। সঙ্গে তুলে নেয় বিশাল পরিমাণ মুনাফা।
আর ক্যান্সার রোগের জন্য বিনামূল্যের যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় তাও কিন্তু বিনামূল্যে নয়। বরং ওষুধ কম্পানিগুলোকে টাকা দিয়েই সেগুলো কিনে আনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দানকারী চ্যারিটি বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো।
আর সরকারগুলো ক্যান্সারের যে বিনামূল্যের চিকিৎসা সরবরাহ করে থাকে তাও করে ওষুধ কিনে এনে। জনগনের করের টাকায় ওষুধ কম্পানিগুলো থেকে ওষুধ কিনে আনে সরকার।
এ থেকেই বুঝা যায় ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফা করার জন্যই ক্যান্সারের ওষুধ বানায়। এমনকি তাদের ওষুধে রোগী ভালো হবে কি হবে না সে বিষয়েও তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। উদাহরণত, প্রচলিত কেমেথেরাপিতে শুধু ক্যান্সারের কোষই মারা যায় না অনেক ভালো কোষও মারা যায়। অর্থাৎ, এর খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে ব্যাপক।
ক্যান্সার নিয়ে লেখা জি. এডওয়ার্ড গ্রিফিন এর বই ‘ওয়ার্ল্ড উইদাউট ক্যান্সার’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও বইটি অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে দেওয়া হয়নি। কারণ বইটিতে তিনি ক্যান্সার নিয়ে ব্যবসা না করে বরং বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিকে উৎসাহিত করতে বলেছেন।
ড. হ্যারল্ড ডব্লিউ. ম্যানার তার বই ‘ডেথ অফ ক্যান্সার’-এ বলেছেন বিকল্প পদ্ধতিতে চিকিৎসায় ক্যান্সার ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে ভালো হয়।
প্রচলিত ওষুধের বাইরে কীভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায়:
যাদের ক্যান্সার হয়েছে তাদের আতঙ্কিত না হয়ে বরং ক্যান্সার কী তা বুঝা উচিত। ক্যান্সার যেহেতু ভিটামিন বি ১৭ এর ঘাটতির কারণেই হয় সুতরাং এই পুষ্টি উপাদানটি আছে এমন খাবার খেতে হবে।
প্রতিদিন গমের কুঁড়ি খেতে হবে। কারণ এতে আছে তরল অক্সিজেন এবং ভিটামিন বি ১৭ এর নির্যাস রুপ ল্যায়েট্রাইল। যা সবচেয়ে সক্রিয় ক্যান্সাররোধী উপাদান।
এছাড়া আপেল এবং অ্যাপ্রিকোট-এও আছে ভিটামিন বি ১৭ এর নির্যাস। যাকে অ্যামিগডালিনও বলা হয়।
এছাড়াও আরো যেসব খাবারে অ্যামিগডালিন বা ভিটামিন বি ১৭৮ আছে সেসব হলো:
আপেল, অ্যাপ্রিকোট, পিচ, পিয়ার্স, প্রুন বা শুকনো বরইতে আছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভিটামিন বি ১৭।
শীম, ডালের অঙ্কুর, লিমা শীম এবং ছোলাতেও আছে ভিটামিন বি ১৭।
তিতা কাজুবাদাম এবং ভারতীয় কাজুবাদামের শাঁসেও ভিটামিন বি ১৭ আছে।
ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, র্যাস্পবেরি এবং স্ট্রবেরিতেও আছে ভিটামিন বি ১৭।
লিলেন বা ফ্ল্যাক্স সীড।
ওটস, বার্লি, ব্রাউন রাইস, গম, লিনসীড এবং রাই এর ছাতু।
এছাড়া অ্যাপ্রিকোট বীজ, ছত্রাক, আকাঁড়া চাল, ধান এবং কুমড়োতেও ভিটামিন বি ১৭ পাওয়া যায়।
এসব খাবার নিয়মিতভাবে খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনও করতে হবে। ফাস্টফুড ও প্যাকটজাত খাবার না খাওয়া, সময়মতো খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা, মোটা না হওয়া এবং মানসিক চাপ সামলানো।
একুশ শতকে ক্যান্সার এত বেশি বেড়ে গেছে কেন? অথচ ৫০ বছর আগেও এমন ছিল না। আসলে আমাদের জীবন যাত্রার পরিস্থিতি এবং খাদ্য বদলে গেছে।
আমাদের পূর্বসুরিরা প্রকৃতির কোলে আরো শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। তারা নিজেরাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতেন। তারা কখনোই খাবারে রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার করতেন না। তারা একেবারে প্রাকৃতিক উৎস থেকে খাবার খেতেন। তারা কখনোই তাদের চাষাবাদের মাঠ বিষাক্ত করতেন না। আশে-পাশের পানির উৎস ও নদী দূষিত করতেন না।
কিন্তু এখন আমরা চরম ব্যস্ত জীবন-যাপন করি। ২৪ ঘন্টাও যেন কারো কারো জন্য যথেষ্ট নয়। সময় মতো আমরা খাবার খাই না। সারাক্ষণই শুধু কী করে আরেকটি টাকা বেশি কামানো যায় সেই চিন্তায় থাকি। আমরা এতটাই হুড়োহুড়ির মধ্যে থাকি যে নিজের স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখার সময় পাই না।
তীব্র মানসিক চাপ সম্পন্ন জীবন-যাত্রার ধরন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই এখনকার রোগ-বালাইয়ের সবচেয়ে বড় দুটি উৎস।
তবে যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে-র বিজ্ঞানীদের মতে, এই দাবি ঠিক নয়। তাদের মতে, ল্যায়েট্রাইল নামের যে পুষ্টি উপাদানটিকে ভিটামিন বি ১৭ বলা হয় তাও ঠিক নয়। কারণ এটি কোনো ভিটামিন নয়।
অবশ্য, ১৯৭০ এর দশক থেকেই এই উপাদানটি ক্যান্সারের বিকল্প ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এটি ক্যান্সার ভালো করতে পারে সে ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। তথাপি এখনো এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে এর মতে, আধুনিক কালে ক্যান্সার রোগ বেশি হওয়ার কারণ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আর ক্যান্সার রোগ মূলত বয়স্ক লোকদের মধ্যেই বেশি হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশেরই বয়স ৬০ এর ওপরে।
অথচ শিল্প বিপ্লবের আগে প্রাচীন ও মধ্য যুগে মানুষের গড় বয়স ছিল মাত্র ৪০ এর মতো। ফলে সেসময় ক্যান্সারও কম হতো। সুতরাং আধুনিক যুগে ব্যবসার উদ্দেশে ক্যান্সারকে ব্যবহার করা হচ্ছে না।