গলা ও বুক জ্বালাপোড়ার কারণ জানলেই নিরাময়

বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের ১৫ জন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগের প্রকোপ বেশি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই রোগের ব্যাপকতা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। প্রতিরোধ সম্পর্কে কম জানার কারণে অনেককে নানা জটিলতায় ভুগতে হয় এবং বেশি বেশি ওষুধ খেতে হয়। তাই এই সমস্যার উপসর্গ/লক্ষণ এবং কারণ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে জানানোর মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করাই বিশ্বজুড়ে এই সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্য।
গলা-বুক জ্বালাপোড়া কেন হয়?
গ্যাস্ট্রো বলতে আমরা পাকস্থলীকে বুঝে থাকি আর ইসোফেগাস হচ্ছে খাদ্যনালি। আমাদের খাবার গ্রহণের পদ্ধতিটি একমুখী। মানে খাবার খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলীতে যায়। কোনো কারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তখন খাবার নিচের দিকে না গিয়ে ওপরে উঠে আসে। আর তখনই পাচক রস বা এসিড পাকস্থলী থেকে উপরে চলে আসার কারণে গলা ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা তৈরি হয়। জীবনযাত্রার কিছু ভুল পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে এই রোগ সৃষ্টি হয় বা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিরোধের জন্য জেনে নেই কারা এই গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছেন-
(১) যারা ওজনাধিক্য বা স্থুলতায় ভুগছেন। (২) যারা ধূমপান করেন। (৩) যারা ঘন ঘন অধিক পরিমাণে খাবার খান। (৪) খাবার গ্রহণের পরপরই যারা শুয়ে পড়েন। (৫) যারা অধিক পরিমাণে পোড়া তেলে ভাজা খাবার খান (এখানে বলে রাখা দরকার আমরা বাঙালিরা প্রচুর তেলেভাজা ও মশলাযুক্ত খাবার খেতে ভালোবাসি)। (৬) যারা অধিক পরিমাণে কোমল পানীয় এবং অসময়ে কফি পান করে থাকেন। (৭) গর্ভবতী নারীরা।
তবে এখানে মনে রাখতে হবে পরিবারের বয়স্কদের ক্ষেত্রে গলা বা বুক জ্বালা পোড়াকে খুব হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ অনেক সময় হৃদরোগের কারণেও বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। রিফ্লাক্স ডিজিজ GERD এর কারণে হার্টবার্ন হলে রোগীর বুকে অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া অনুভূতি বা ব্যথা হবে, যা রোগীর গলা পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু অপরদিকে হার্ট অ্যাটাকের কারণে গলা-বুক জ্বালাপোড়া হলে এর সাথে বাম হাত, বাম ঘাড় এবং চোয়ালে ব্যথা হবে, সাথে শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি বমি ভাব, চরম ক্লান্তি, উদ্বেগ, ইত্যাদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।
গলা ও বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে কী করবেন?
> খিদে পেলে একবারে অনেকটা খেয়ে ফেলা আমাদের স্বভাব। একসঙ্গে অনেকখানি খেয়ে ফেলবেন না। সারা দিনে অল্প পরিমাণ করে খাবারকে ভাগ করে খাবেন।
> খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। তাড়াহুড়োয় ভালো করে না চিবনোর ফলে খাবার ভালো করে হজম হয় না। এতে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির প্রবণতা বাড়ে।
> রাতে শুতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগেই ডিনারের খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। তা না হলে যদি শোবার ঠিক আগে আগেই খাবার খান, তাহলে ভরপেট অম্লরসকে খাদ্যনালি দিয়ে ঠেলে উপরে তুলবে। এতে বুক জ্বালা করবে।
> মানসিক চাপে যেহেতু পাকস্থলীতে অম্লরস নিঃসরণ বাড়ে, তাই যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
> রাতে শুতে যাওয়ার সময় কোমরের বাঁধন শিথিল করে শোবেন মানে ঢিলেঢালা কাপড় পড়ে ঘুমাবেন।
> ভরা পেটে কখনই ব্যায়াম করবেন না, বিশেষত পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম। তবে শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে শরীরচর্চার বিকল্প নেই।
> কোনো কোনো ওষুধ বুক জ্বালার সমস্যাটা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন অ্যাসপিরিন/ব্যথানাশক। এগুলো কখন কিভাবে খেতে হবে, তা আপনার ডাক্তারের কাছে জেনে নিন।
> যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা খাবার পর শোবার সময় মাথার দিকটা পায়ের দিকের তুলনায় উঁচুতে রাখতে হবে। এজন্য মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ দিয়ে ঘুমাতে পারেন।
> শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ জল খান।
উপায়
যদি বারবার এই সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায় অথবা ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এই গলা এবং বুক জ্বালা পোড়ার সমস্যা কারো থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার ডাক্তার প্রয়োজনে মাত্রা অনুযায়ী ওষধ দিয়ে থাকবেন। এই ট্রিটমেন্ট প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) দেওয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ রোগের ট্রিটমেন্ট কিছু দিন নিতে হয়, এটা হতে পারে মাস অথবা বছর। GERD বা এই গলা-বুক জ্বালাপোড়া সাধারণত কোনো মারাত্মক জটিলতা করে না, তবে যদি কেউ সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে থাকেন তাহলে এ রোগ মারাত্মক ও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আতঙ্ক বা অবহেলা নয়, সুস্থ থাকার জন্যই দরকার সচেতনতা। ভালো থাকি-ভালো রাখি।