November 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

এরা কেন এখনও ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে?

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
প্রতিবছর টিকা দেওয়ার কারণে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান কমপক্ষে ২০-৩০ লাখ মানুষ। গত এক বছর ধরে পুরোবিশ্বে তান্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ মহামারিতে এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৬৫৫ জন। আর এতে মারা গেছেন ১৬ লাখ ১১ হাজার ৬৩৭ জন। এই করোনার তাণ্ডব শুধু হওয়ার পর থেকেও টিকার অপেক্ষায় দিন গুনছেন বিশ্ববাসী।

যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে ফাইজারের তৈরি টিকা অনুমোদন পেয়েছে। সারাবিশ্বে অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও কয়েকটি টিকা। তবে অনুতাপের বিষয়, আশ্চর্যজনকভাবে অনেক মানুষ টিকা নিতে ইচ্ছুক নন।

সাম্প্রতিক এক জরিপে তা স্পষ্ট হয়। এতে দেখা যায়, মাত্র ৬৩ শতাংশ আমেরিকান স্বেচ্ছায় টিকা গ্রহণ করবেন।অন্যান্য অনেক দেশের চিত্রও এমনই। অর্থাৎ টিকা সহলভ্য হওয়ার পরও টিকা না নেওয়ায় লাখ লাখ মানুষ ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। তবে টিকা গ্রহণের এ অনীহা নতুন বিষয় নয়, গত দশকগুলোতেও সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে প্রবল অনীহা ও অবিশ্বাস লক্ষ করা গেছে।

অবিশ্বাসের কারণ কী?

গবেষকদের মতে, সাধারণ মানুষদের মধ্যে টিকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে বেশকিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাস স্থাপনের কাজ করতে হয়; ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে এবং টিকাদান কর্মসূচি পরিচালক কর্তৃপক্ষের ওপরও। ইতিহাসে টিকাদান কর্মসূচির সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষের বিশেষত সংখ্যালঘু বর্ণ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বৈষম্যের উদাহরণও আছে।

এমোরি ইউনিভার্সিটির মহামারিবিদ আভনিকা আমিনের মতে, ‌কিছু মানুষের টিকার ওপর অনাস্থার কারণও বোধগম্য। অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ইতোপূর্বেও অবহেলার শিকার হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর তাদের অনেকের অনাস্তা তৈরি হয়েছে।

এ ধরনের অবিশ্বাসের অন্যতম একটি উদাহরণ তাসকিগি সিফিলিস এক্সপেরিমেন্ট। ১৯৩২ সালে ইউএস পাব্লিক হেলথ সার্ভিস ও তাসকিগি ইনস্টিটিউটের অধীনে এ অনৈতিক গবেষণাটি পরিচালিত হয়। চিকিৎসা বিহীন থাকলে সিফিলিস আক্রান্ত রোগীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়তে তা জানাই ছিল এ গবেষণার উদ্দেশ্য। গবেষণা চালানো ৬০০ জন ব্যক্তির  ৩৯৯ জনই ছিলেন সিফিলিস আক্রান্ত। ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলা হলেও আদতে তাদের কোনোরূপ চিকিৎসাই দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন চিকিৎসা বিহীন থাকলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে তা অনুসন্ধানের গবেষণা চলছিলো তাদের ওপর। পরবর্তীতে ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়া শুরু হলে ১৯৭২ সালে গবেষণাটি বন্ধ করা হয় ও ১৯৯৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।

ভ্যাকসিনের ওপর অনাস্তার আরেকটি কারণ হলো ১৯৯৮ সালে দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা। এমএমআর (হামস, মাপস,রুবেলা) ভ্যাকসিনের সাথে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক আছে এমনটা দেখানো হয় অ্যান্ড্রু ওয়াকফিল্ডের গবেষণায়। গবেষণার নমুনায়নে ত্রুটি রেখে ফলাফল প্রকাশের জন্য পরবর্তীতে ২০১০ সালে গবেষণাটি প্রত্যাহার করা হয়। সেসময় অ্যান্ড্রু ওয়াকফিল্ডের এ দাবির প্রভাবে এখনও অনেকেই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আশঙ্কায় ভোগেন।

মূল্যবোধের ভিত্তি ও ভিন্নতা

ভ্যাকসিন গ্রহণে অনীহার পেছনে তাসকিগি ও ওয়াকফিল্ড গবেষণার মতো ঘটনা ছাড়াও আরও কিছু কারণ কাজ করে বলে জানান মহামারিবিদ আমিন। তার ভ্যাকসিন গ্রহণে দ্বিধা সম্পর্কিত  গবেষণায় তিনি মোরাল ফাউন্ডেশন থিওরি ব্যবহার করেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে মানুষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণ ব্যখ্যা করতে মোরাল ফাউন্ডেশন থিওরির প্রবর্তন হয়। মূল্যবোধের ভিত্তি মানুষের অবচেতনে হলেও তার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। মূল্যবোধের যে ভিত্তি যার কাছে যতো গুরুত্বপূর্ণ, সে অনুযায়ীই তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

ড. আমিন জানান মানুষের ভ্যাকসিনের অনীহার প্রবণতাও মোরাল ফাউন্ডেশন থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। তার গবেষণাতেই এর ভিত্তিতেই ১২০০ পিতামাতার ওপর ৩টি ভাগে ভ্যাকসিন অনীহার মাত্রা যাচাই করেন।

ভ্যাকসিন অনীহায় চিকিৎসকদের করণীয় 

ভ্যাকসিন গ্রহণে অনীহা থাকলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে তাদের পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত বদলানোর সম্ভাবনা কমে যায় বলে জানান ড. আমিন। প্রত্যেকের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করলেও সিদ্ধান্ত বদলানোর সম্ভাবনা থাকায় এ পদ্ধতি অনুসরণ কার্যকর বলে জানান তিনি। ২০১৬ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সোশ্যাল সাইকোলজিতে এসম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। গবেষণায় দেখা যায়, তিনটি ভিন্ন উপায়ে উদারনৈতিক ও রক্ষণশীলদের জন্য পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে আলাদা লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর, রক্ষণশীলদের মধ্যে এসংক্রান্ত চিন্তার পরিবর্তন আসে। বিষয়টি তাদের কাছে কর্তৃপক্ষকে মেনে চলা, পবিত্রতা বা দেশপ্রেমের ধারণা দিয়ে ব্যাখা করার ফলেই এমন পরিবর্তন আসে, এমনটাই উঠে আসে গবেষণাটিতে।

ড. আমিন জানান, অনেকে ইতোমধ্যেই নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করেছে তারা ভ্যাকসিন নেবেন না। এক্ষেত্রে করার কিছু নেই। কিছু অনেকেই ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যাপারে দ্বিধায় ভোগেন। এটি আলাদা বিষয়। অনীহার পেছনে কাজ করা কারণের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে পারলেই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা থাকতে পারে, জানান তিনি।

Related Posts

Leave a Reply