৪০-এ বয়েস চক্র থামিয়ে ৬০-এও ৩০
কলকাতা টাইমস :
৪০ পেরোলেই মানুষ দ্রুত বুড়ো হওয়ার দিকে এগোতে শুরু করে। মন সেই একই স্থানে স্থির থাকলেও শরীর এগোতে থাকে রকেট গতিতে। এ বিষয়ে গবেষণা কী বলছে? কিভাবে অনেকটাই মন্থর করে দিতে পারেন শরীরে পড়তে থাকা বয়েস চক্রের প্রভাব?
কথায় আছে ৪০ সে চালসে। অর্থাৎ বয়েস ৪০ পেরোলেই মানুষের বার্ধক্য বন্ধু হয়ে আপনার জীবনে জেঁকে বসলো বলে। এরপরই দেখা দিতে থাকে নানান সমস্যা। পরিশ্রমে দ্রুত হাঁফিয়ে যাওয়া, ঢিলে পড়তে থাকা ত্বক, চুলের রং পরিবর্তন, পেটের নানান সমস্যা সঙ্গে নানান ধরনের বাত। যদিও বহু মানুষ এমন আছেন যাঁরা নিজেদের যৌবন ৫০ পার করেও ধরে রাখতে পারেন। আসলে তাঁদের দেখে বোঝাই সম্ভব নয় তাঁরা ৫০ পেরিয়েছে। এই যেমন মালাইকা অরোরা বা আমাদের দাবাং ভাইজান সলমন খানকেই নিয়ে নিন। তবে বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু এই বয়েস চক্রের বাইরে যেতে পারেন না। সেই তত্বেই সিলমোহর দিয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাযও। যেখানে দেখা গেছে, মানুষের জীবনে ৪৪ ও ৬০ বছর বয়সে বিশেষভাবে বার্ধক্যের ধাক্কা অনুভূত হয়। স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায় ১০৮ জন ব্যক্তির আরএনএ, প্রোটিন, এবং মাইক্রোবায়োম পরিবর্তনের বিশ্লেষণ করা হয়।
এই গবেষণার জন্য ২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী বিভিন্ন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে নারীদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে, যেখানে মেনোপজের সাথে বার্ধক্য প্রক্রিয়া জড়িত থাকে, যা সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে ঘটে।
গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের বার্ধক্য একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নয়। বরং ৪৪ বছর এবং ৬০ বছর বয়সে দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। বিশেষত, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল হজম করার ক্ষমতা ৪০ বছরের পর থেকে কমতে শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়সে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। একটু বুঝিয়ে বলি। আমরা আমাদের ৪০-৪৬ বছর বয়স পর্যন্ত যা-যা খাই বিশেষ করে জাঙ্ক বা ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল সমৃদ্ধ খাবার যেমন কফি, চকলেট বা মদ তা একটা সময় পর্যন্ত শরীর যন্ত্রে হজম হলেও ৪০-৪৬ এর পর তা হজম হওয়া কমতে থাকে। যার ফলে তা জমা হতে থাকে শরীরের অন্দরে। শুধু জমেই না নিজের ক্ষমতা দেখতে থাকে হৃদপিণ্ড, ত্বক, চুল, হাড়ে। যার ফলেই বার্ধক্য।
গবেষণার সহকারী অধ্যাপক জিয়াওতাও শেন জানান, আমরা ক্রমাগত বুড়ো হই না, বরং জীবনের কিছু নির্দিষ্ট পর্যায় বার্ধক্য এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান সমস্যা হঠাৎ করেই জাঁকিয়ে বসে। স্টানফোর্ডের প্রফেসর মাইকেল স্নাইডারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, এই দুটি বয়সে মাংসপেশি ধরে রাখার প্রোটিনে পরিবর্তন আসে, যা ত্বক, হৃদপিণ্ড, এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ৬০ বছর বয়সের পর থেকে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এই বয়সে বেশি দেখা যায়। গবেষকরা বলছেন, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিরোধ ক্ষমতা চিহ্নিত করা সম্ভব হলে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে নতুন পথ উন্মোচিত হবে, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এই বিষয়ে হৃদয়রোগ বিশেষজ্ঞ তথা এমডি ডা. কৌশিক কুমার দাস জানালেন, ‘বয়েসের সব থেকে বেশি প্রভাব পরে হৃদয়ে। ক্যাফাইন, অ্যালকোহল, কলেস্টরোল সমৃদ্ধ খাবার আমাদের হৃদয়ে ধীরে-ধীরে একটা স্তরের মতো আবরণ সৃষ্টি করে যার ফলেই হার্ট ব্লকেজ, মাংসপেশির শিথিলতা। ৪০-৬০ বছর বয়েসে শরীর দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে। তাই ৪০ আসার আগেই সবার আগে নিজের খাবারে পরিবর্তন আনুন, ব্যায়াম করুন।’
পরিশেষে গবেষণা থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সবাই দিচ্ছেন সেই একই উপদেশ। যা আমার প্রত্যেকে কম-বেশি জানি বিশ্বাসও করি কিন্তু ব্যবহারের সময়- ‘একটু খেলে কি হবে’ গোছের মনোভাবেই সব শেষ। গবেষকরাও সেই একই কথা বলেছেন, জীবনধারায় পরিবর্তন এনে বার্ধক্যের এই ধাক্কা কিছুটা কমানো সম্ভব। বিশেষ করে, অ্যালকোহল পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, ৬০ বছরের পর কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ‘জল ই জীবন’ চোখ-কান বন্ধ করে বিশ্বাস করুন আর পর্যাপ্ত জল পান করা শুরু করুন।
গবেষক শেন আরও জানিয়েছে, ৪০ বছর বয়সকে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করুন। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করলে বাকি জীবন সুস্থ-সবল থাকাটা আপনাআপনিই আসবে আপনার জীবনে।