আইটি শহরে রাজকীয় সৌন্দর্য
কলকাতা টাইমস :
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুর কথা বললে বেশির ভাগ মানুষের মনেই ভেসে ওঠে বিভিন্ন আইটি কোম্পানি ও টেক পার্কের দৃশ্য। কিন্তু এটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনারও শহর। আর এসবের মাঝে অন্যতম হলো ব্যাঙ্গালোর প্যালেস। যারা দক্ষিণ ভারতীয় শহরটির রাজকীয় সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতা নিতে চান, তারা সুন্দর সব বাগানে ঘেরা জাঁকালো দুর্গের এই জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন।
ইংল্যান্ডের মধ্যযুগীয় নির্মাণ কৌশলের চূড়ান্ত পর্যায় টিউডার স্থাপত্যরীতির এ প্রাসাদ তৈরি করেন সেন্ট্রাল হাইস্কুলের (বর্তমানে সেন্ট্রাল কলেজ) প্রথম অধ্যক্ষ রিভ জে গ্যারেট। প্রাসাদের নির্মাণ শুরু হয় ১৮৬২ সালে। সে সময় মহীশূর রাজ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীন এবং তরুণ দশম চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ারকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার ১৮৮৪ সালে প্রাসাদটি কিনে নেন এবং সাজসজ্জা ও অভ্যন্তরীণ নকশায় পরিবর্তন আনাসহ অনেক সংস্কার করেন।
বর্তমানে এই রাজকীয় প্রাসাদের মালিকানায় রয়েছেন মহীশূর রাজপরিবারের বংশধর শ্রীকান্ত দত্ত নারাসিমহারাজা ওয়াদিয়ার। তিনি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ২০০৫ সালে প্রাসাদের দরজা খুলে দেন। দর্শনার্থীরা প্রাসাদে প্রবেশ করেই এর সুরক্ষিত টাওয়ার, কৌণিক শীর্ষদেশ ও চূড়া দেখে অভিভূত হয়ে যাবেন। প্রথম তলাতেই তাদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে আছে দশম চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার মূর্তি।
ছাদ সাজানো হয়েছে উৎকীর্ণ অলঙ্করণে। আর দেয়ালগুলো ঘিরে আছে পুষ্পশোভিত নব্য ধ্রুপদী কারুকাজ। ওয়াদিয়ার যে দক্ষ শিকারি ছিলেন তার প্রমাণ হিসেবে প্রাসাদে রয়েছে হাতির পায়ের তৈরি চৌকি, হাতির শুঁড়ের পাত্র, হাতি শিকারের স্মৃতিচিহ্ন আর আছে হাতি শিকার করার নানা ছবি।
দ্বিতলবিশিষ্ট প্রাসাদে রয়েছে মোট ৩৫টি কক্ষ। নিচতলায় আছে একাটি খোলা প্রাঙ্গণ, যেখানে গ্রানাইটের আসনগুলো নীল টাইলসে ঢাকা। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের জন্য আছে একটি বলরুম।
কালো কাঠের কারুকার্যময় সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে গেলেই দর্শনার্থীরা পৌঁছে যাবেন ওপরের তলায়। সেখানেই রয়েছে প্রাসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ দরবার হল। এই হলেই জনসমাবেশে ভাষণ দিতেন রাজা।
হলুদ দেয়াল ও সোফাসমৃদ্ধ উজ্জ্বল সাজসজ্জার হলটিকে রাজকীয় সুরভি দিয়েছে বিশাল আকৃতির থাম, ঝাড়বাতি ও শোভাবর্ধক আয়না। হলের এক পাশে রয়েছে গথিকশৈলীর রঙিন কাচের জানালা। অপর পাশে একটি পর্দা দিয়ে জায়গাটি ভাগ করা রয়েছে, সেখানে বসে নারীরা রাজকীয় অধিবেশন প্রত্যক্ষ করতেন।
ব্যাঙ্গালোর প্যালেসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর অনেক বিখ্যাত চিত্রকর্মের দেখা পাওয়া। সেখানে ভারতের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রাজা রবি ভার্মার কাজও রয়েছে। দর্শনার্থীদের অভিভূত করতে চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে কয়েকটি গ্রিক ও ডাচ ছবিও আছে।
প্রাসাদের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো বারান্দায় সজ্জিত প্রতিকৃতিগুলো। শক্তিশালী ওয়াদিয়ার রাজবংশের বিভিন্ন প্রজন্মের উপাখ্যান উঠে এসেছে এসব ছবিতে। কয়েক দশক ধরে ব্যাঙ্গালোরে যে বিবর্তন এসেছে তারও ঝলক মিলে এসব ছবিতে।
নিচতলায় নামার সিঁড়ি ধরার আগে ঘুরে দেখা যায় শিল্পকর্ম ভর্তি কক্ষ, ছবি ভর্তি বারান্দা, একসময় প্রাসাদের নারীদের ব্যবহার করা ড্রেসিং টেবিল, ভাস্কর্য, রাজপরিবারের ব্যবহৃত সামগ্রী, আরও অনেক কিছু।
দর্শনার্থীদের ৪০ মিনিটের প্রাসাদ পরিদর্শনে সাহায্য করার জন্য রয়েছে একটি অডিও গাইড, যা প্রাসাদ ও এর ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরে খাঁটি তথ্য। দর্শনার্থীদের পছন্দমতো ভাষায় অডিও গাইডটি শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রাসাদ থেকে বের হয়ে চাইলে দর্শনার্থীরা ৪৫৪ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা আকর্ষণীয় বাগানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। ভাসান্তনগর রেলওয়ে সেতুর কাছে অবস্থিত ব্যাঙ্গালোর প্যালেস প্রতিদিন খোলা থাকে। নির্দিষ্ট প্রবেশ ফি দিয়ে যে কেউ প্রাসাদটি ঘুরে দেখতে পারেন।