দাদা ও চিকু – সাফল্যের রসায়ন
।। রজত পাল।।
Cricket যে বিশেষজ্ঞর মতো বুঝি, তা তো নয় ( যদিও বাঙালি সব বিষয়েই বিশ্বজ্ঞানী হয়, এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ আমিও বাঙালি ), স্বভাবদোষে সব কিছুতেই জীবনদর্শন খুঁজে বেড়াই ।
এই দুই সফল নেতার কাছে থেকে কি শিখলাম, সেটাই share করি বরং ।
1. সাফল্যের কোনও শর্টকাট পথ নেই । পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং প্রচুর পরিশ্রম । এর কোনও বিকল্প নেই । একই রকম দিনের পর দিন একঘেয়ে পরিশ্রমের কথা আমরা শচীন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, কুম্বলে, কপিল, গাভাসকর সকলের জীবনেই দেখতে পাব ।
2। প্রাথমিক সাফল্যের পর যদি পরিশ্রম করা বন্ধ করে দিই, আর মনে করি আমি একজন কেউকেটা এবং নিজেকে ঘষেমেজে আরও উন্নত ( কারণ বিপক্ষ আমার খুঁত গুলো ধরে ফেলেছে ) না করি তাহলে দ্রুত পতন অনিবার্য। প্রকৃষ্ট উদাহরণ বিনোদ কাম্বলি ।
3। যখন আমি ময়দানে নামছি তখন সেটা যুদ্ধ ( কারণ এটা amateur sports নয় ), সেই যুদ্ধে সংঘর্ষ অনিবার্য। মারাদোনা, রোনাল্ডো বা ফেডেরার বা সেরেনারা মাঠে বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়ে না । বহুবার রেফারির কাছে জরিমানা হয়, লাল কার্ড দেখে । মাঠের লড়াই দেখে একজন মানুষকে বিচার করলে হয়তো ভুল করতে পারি ।
এগুলি হল ব্যক্তিগত সাফল্যের রসায়ন । এরপরে আসে দলনেতার quality র কথা । আমরা জানি সকলেই দলনেতা হয় না । অনেক class player ততো ভালো captain নয় । অনেক মাঝারি খেলোয়াড় সফল Captain । আবার অনেক class player আবার class captain ও বটে ।
ব্রিয়ারলি শুধু captainship এর জন্য একবার man of the match হয়েছিলেন । captain হিসেবে শচীন, দ্রাবিড়, লারা সফল নয় । কিন্তু দুদিকেই সফল হলেন Ricky Ponting । এই দলের হলেন সৌরভ । এই দিকেই চলেছে কোহলি ।
ভালো বা সফল captain এর গুণ কি ? একটা ভালো দল পেয়ে গেলাম, সবাই ভালো খেলল ও জিতলাম, এটা খুব ভালো কথা । কিন্তু একজন দারুণ Captain এর একটা vision থাকে, একটা দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য থাকে ।
বেটিং জর্জরিত ভারতীয় cricket কে দাড় করিয়ে ছিলেন সৌরভ । অনেক নামী খেলোয়াড়দের বদলে একঝাঁক নতুন ছেলে তুলে এনেছিলেন । সেহবাগ, হরভজন, যুবরাজ, জাহির, পাঠান, কাইফ ….এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি সফল, কেউ কেউ নয় । কিন্তু আগুন চিনেছিলেন । দুর্ধর্ষ বিপক্ষকে চোখে চোখ রেখে লড়াই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । বিতর্কে বিতর্কে জর্জরিত ছিলেন । কিন্তু লক্ষ্য একটাই ছিল, জিতব, যেভাবেই হোক জিতব, এবং সৎ ভাবে লড়ে জিতব । যখন একনম্বর বোলার কুম্বলে কে বসিয়ে বিশ্বকাপে হরভজনকে খেলিয়েছেন, দ্রাবিড়কে দিয়ে কিপিং করিয়েছেন, আমরা সবাই কি খুশি হয়েছিলাম? যখন Lords এ খালি গায়ে শার্ট উড়িয়েছিলেন তখন মনে পরেনি কদিন আগে সাহেবের বাচ্চা Flintoff বম্বেতে একই কাজ করেছিল !! কেউ কেউ বলেছিলাম Cricket হল ভদ্রলোকের খেলা, এসব কি হচ্ছে !! স্টিভ ওয় এর অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়েছিলেন । বলবেন, সে তো দ্রাবিড় – লক্ষণের ঐতিহাসিক লড়াই । ঠিক ! তবে 5 নম্বরে নেমে সৌরভের একটা ছোট লড়াইও ছিলো । আর ঐ সিরিজের আবিস্কার হল হরভজন । ভালো player দের কে motivate করে সেরাটা বার করে আনাটাও Captain এর quality ।( একই ভাবে বিরাট পূজারা পন্থের থেকে বার করে আনছে । বিজয় – রাহুলের থেকে পারছে না, অনেক সুযোগ দিয়েও। politics বললে ভুল হবে, পৃথ্বী চোট পেল, ধাওয়ান অনেক সুযোগ পেয়েছে । মায়াঙ্ক পারল । আর opener কোথায়? করুন নায়ার ভালো player, কিন্তু রাহানেকে বাদ দিতে হয় । রোহিত নিয়ে অনেক অশ্রুপাত হল, এখন এটা মেনে নিতে হবে যে Test খেলার mindset নেই । এই মঞ্চ ছেড়ে কেউ দেশে ফিরে আসে !! )। সমকাল দাদাকে প্রকৃত মর্যাদা না দিলেও ( গ্রেগ যখন বাদ দেয় বাঙালি ছাড়া কেউ কিছু বলেনি । কোনও প্রাক্তনকে শুনিনি এর প্রতিবাদ করতে ) ইতিহাস তাকে মনে রেখেছে বা রাখবে ভারতীয় cricket এর mindset change করে দেবার জন্য । তার তৈরি পথে সফল হয়েছেন আর এক যোগ্য নেতা ধোনি ।
এবং সফল হচ্ছেন বিরাট কোহলি । সফল হতে গেলে বিতর্ক তাড়া করবেই । বিরাটকেও করছে । কেন x বা Y বাদ । কেন ওকে নিচ্ছে । politics হচ্ছে । আমরা ভুলে যাই দলের একটা philosophy থাকে । সেই ভাবনার সাথে ফিট হতে হয় । এই যে কুলদীপ, চাহল, পন্থ, বুমরা রা উঠে এলো এটার পেছনে আগুন খুঁজে নেওয়া গুণ আছে । জাডেজা বাদ পরে নিজেকে তৈরি করে আবার ফিরে আসে । কিছুই ব্যক্তিগত নয় । লক্ষ্য এবং একমাত্র লক্ষ্য লড়তে হবে, জিততে হবে । এতে কে কি বলল, সেটা না ভেবে আমি আমার কাজ করে যাব ।
সৌরভ ও কোহলির এই গুণ মুগ্ধ করে । ভয় একটাই যে captaincy তাদের খেলাতে যেন প্রভাব না ফেলে । শুধু নিজের খেলায় মন দিতে পারলে সৌরভের record আরও ভালো হতো । তবে আমরা একজন বড় নেতাকে হারাতাম । এটাও ঠিক বড় রণক্ষেত্র এ ধরনের মানুষকে motivate করে । challenge এদের adrenaline ক্ষরণ ঘটায় ।
আশাকরি কোহলি দুদিক সামলাতে পারবে । মাথা অনেক ঠান্ডা হয়েছে । আরও ভালো কিছুর অপেক্ষায় থাকব।