স্বামীকে পেলেন ৭০ বছর পর, কিন্তু….
কলকাতা টাইমস :
এই গল্পের শুরু ১৯৪৪ সালে, যখন পেগি নামের উচ্ছল এক তরুণী প্রথমবার বিলি নামের এক তরুণকে দেখেছিলেন। বিলি হ্যারিস ছিলেন ২২ বছরের সুদর্শন তরুণ। পেশায় তিনি যুদ্ধবিমানের পাইলট। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেন। দেরি না করে বিয়েটাও সেরে নিলেন তারা। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন চারদিকে।
বিয়ের মাত্র ছয় সপ্তাহ পর বিলিকে ইউরোপে পাঠানো হলো। পেগি জানতেন যুদ্ধবিমানের পাইলটকে বিয়ে করেছেন তিনি, যুদ্ধের এ বিক্ষুব্ধ সময়ে তার স্বামী যে ঘরে বসে থাকবেন না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বামীকে যখন চলে যেতে দেখলেন তখন কি পেগি জানতেন তার আর খোঁজ পাবেন কি না।
চলে যাওয়ার পরপরই পেগি ও বিলির মধ্যকার সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহ কেটে মাস যায়, কিন্তু আটলান্টিকের অপর প্রান্ত থেকে কোনো খবর আসে না। সেনাবাহিনীও তার কোনো খবর দিতে পারছিল না। অনেকটা সময় পার হওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো। কিন্তু পেগি জীবনে আর কখনো বিয়ে করেননি।
একে একে পার হয়ে গেছে ৭০টি বছর। বিলির এক আত্মীয় ঠিক করলেন যে বিলির গায়েব হওয়ার রহস্য খুঁজে বের করবেন। শেষবারের মতো খবর নিয়ে দেখবেন কী হয়েছিল বিলির। সামরিক বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করলেন তিনি। মেলা খুঁজে-পেতে বিলির ফাইল বের করলেন। জানলেন কোন যুদ্ধে বিলি শেষবারের মতো অংশ নেন। সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী বিলি তার বিয়ের ছয় সপ্তাহ পর ১৯৪৪ সালে একটি যুদ্ধে অংশ নেন ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে। বিলির বিমানকে নরম্যান্ডির কাছাকাছি লে ভেন্তেস নামের একটি গ্রামে শেষবার দেখার রেকর্ড তাদের কাছে রয়েছে। ফ্রান্সের অখ্যাত একটি গ্রাম এটি।
এরপর বিলির সেই আত্মীয় আরও একটু খোঁজ-খবর করে জানতে পারলেন লে ভেন্তেস গ্রামের কাছে একটি বিমান আছড়ে পড়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তিনি আর দেরি না করে পেগিকে জানালেন পুরো অনুসন্ধানের বিষয়টা।
পেগি তার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে কষ্ট পেলেন। কিন্তু সেই সাথে এটাও ঠিক করলেন একবার হলেও তিনি যাবেন ফ্রান্সে স্বামীর কবর দেখতে। লে ভেন্তেস গ্রামে পৌঁছানোর পর পেগি জানলেন বিলি হ্যারিস শুধু এক শহীদ যোদ্ধাই নন, রীতিমতো একজন বীরের সম্মান পাওয়া বৈমানিক তিনি। তিনি এতটাই সম্মানিত যে তারা বিলি হ্যারিসের নামে একটি সড়কের নামকরণ করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, শহরের লোকজন বছরে তিনবার উৎসব পালন করে বিলির নামে এবং তাকে স্মরণ করে তারা সাহসিকতার জন্য।
একজন ৯১ বছর বয়সী বৃদ্ধ পুরো ঘটনাটা দেখেছিলেন। তিনি দেখেছেন কী হয়েছিল বিলির সঙ্গে। শত্রুর গুলির আঘাতে বিলির যুদ্ধবিমানে যখন আগুন ধরে যায়, তখন সেটা অবস্থান করছিল লে ভেন্তেস গ্রামের জনবহুল অঞ্চলের আকাশে। বিলি চাইলেই সেই বিমান থেকে বের হয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে পারতেন। তাতে করে তার প্রাণ হয়তো বাঁচত, কিন্তু শত শত গ্রামবাসী মারা যেত বিধ্বস্ত বিমানের বিস্ফোরণে। বিলি হ্যারিস শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বিমানে থেকে সেটিকে জনবিরল একটি জায়গায় নিয়ে আসেন। আনতে গিয়েই আর বের হওয়া হয়নি তার। বিলি বিধ্বস্ত বিমানের সঙ্গে নিজের জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে দেন লে ভেন্তেস গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন। তার এই আত্মত্যাগকেই তারা এখনো স্মরণ করে শ্রদ্ধার সঙ্গে।
৭০ বছর পেগি যখন সেই গ্রামে গিয়ে তার পরিচয় দেন, গ্রামের লোকজন তাকে স্বাদরে অভিনন্দন জানায় এমন একজন বীরের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে জীবন পার করে দেয়ার জন্য। পেগিও লে ভেন্তেস গ্রামের সবাইকে ধন্যবাদ জানান এতদিন ধরে তার স্বামীর কবর সংরক্ষণ করার জন্য। লে ভেন্তেসের লোকজন পেগিকে নিয়ে বিলি হ্যারিসের কবরের কাছে যায়। তাদের দুজনকেই সম্মান দেয় তারা।