November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

ভাবছেন ঘুমোচ্ছে, তবুও শুনতে পায় মস্তিষ্ক!

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

ঘুমিয়ে গেলেই যে মানুষ কিছু শুনতে পায় না তা কিন্তু নয়। ঘুমের মধ্যেও মানব মস্তিষ্ক কান দিয়ে প্রবেশ করা শব্দ গ্রহণ করে। তবে ঘুমের পর মস্তিষ্ক ঘুমের বিভিন্ন স্তর দিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই আর বাইরের দুনিয়ায় এতটা খেয়াল করে না।

নতুন এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব নিউরোসায়েন্স-এ। ঘুমের বিভিন্ন স্তরে মস্তিষ্ক কিভাবে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে তা দেখতে চেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণায় দেখা গেছে, তন্দ্রার সময় মানুষ কানে যা শোনে তা বুঝতে পারে। তবে ধীরে ধীরে ঘুম গভীর হলে সবকিছু বদলে যায়। এমনকি মাত্র যা বুঝেছেন তাও ভুলে যেতে পারেন।

প্যারিসের ইকোল নরমাল সুপিরিয়র-এর নিউরোসায়েন্টিস্ট থমাস অ্যান্ড্রিলন জানান, এ গবেষণার মাধ্যমে ঘুমের নানা বৈশিষ্ট্য দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। হালকা ঘুম, স্বপ্নের ঘুম এবং গভীর ঘুমের মধ্যে নানা বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে রয়েছে।

বহু দিন ধরে এ কথা প্রচলিত যে, গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে সচেতনতা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। দিনে যা দেখা হয়, তা মস্তিষ্কে জমা থাকে স্মৃতি আকারে। এ প্রক্রিয়াকে বলে মেমোরি কনসলিডেশন। কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়, এ কাজের জন্যে ঘুম অতি জরুরি।

কিন্তু মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয় না। এটা বিবর্তনের কারণে ঘটে গেছে। বাইরের দুনিয়ার বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্যে মস্তিষ্ক সহজাতভাবে কিছুটা সচেতন থাকে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়, ঘুমন্ত মস্তিষ্ক পরিচিত ও উচ্চমাত্রার শব্দগুলো গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে কারেন্ট বায়োলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক শব্দ গ্রহণ করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।

আগের ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেন, দুই ধরনের শব্দ দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম তালিকায় কুকুর বা বিড়ালের মতো পরিচিত প্রাণীর আওয়াজ বা তাদের নাম পড়া হয়। আর দ্বিতীয় তালিকায় অপরিচিত শব্দ শোনানো হয় যা অভিধানে পাওয়া যায়া না। পরীক্ষায় ঘুমন্ত অংশগ্রহণকারীদের এসব শব্দ রেকর্ডে বাজিয়ে শোনানো হয়। সে সময় ইইজি ইলেকট্রোডস স্থাপন করা হয় তাদের মস্তিষ্কে। যেসব শব্দ বাজানো হয় তা তারা পরে বলতে পারেন কিনা তা দেখা হয়েছে।

ঘুমের সময় শব্দ শুনিয়ে তা বন্ধ করা হয়। কিন্তু ইইজি মেশিন দেখায় যে, মস্তিষ্কে শ্রবণকৃত শব্দ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। মোটর কর্টেক্স অংশকে প্রতিক্রিয়াশীল দেখা যায়। শুধু তাই নয়, পরিচিত ও অপরিচিত শব্দের ভিত্তিতে মস্তিষ্ক এগুলো আলাদাভাবে সংরক্ষণ করেছে।

অ্যান্ড্রিলন জানান, গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্কে নিম্নমাত্রার তরঙ্গ ছড়াতে থাকে। এ সময়টা লাখ লাখ নিউরন ছন্দবদ্ধভাবে অবস্থান করে, কিন্তু প্রায় নিশ্চুপ হয়ে যায়। যখন এরা চুপ হয়ে যায়, তখন এটা তথ্য প্রসেস করতে পারে না।

যখন মানুষ গভীর ঘুমের স্তর থেকে স্বপ্নের স্তরে আসে (র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট), তখনও যে শব্দ কানে আসে তা প্রসেস করতে পারে না মস্তিষ্ক। এটা একটা অদ্ভুত বিষয়। কারণ এই স্তর অনেকটা সজাগ থাকার মতোই।

সব মিলিয়ে মস্তিষ্কা তার বিভিন্ন স্তরে বাইরে থেকে আসা শব্দ নিয়ে কারসাজি করতে থাকে। তবে অগভীর ঘুমে বেশ কাজ করে মগজ। তাহলে কি আমরা এমন ঘুমের সময় কিছু শিখতেই পারি?

শেখার ক্ষেত্রে দুর্বল প্রক্রিয়া হলেও হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় শিক্ষণের কাজটি সারতে পারে মানুষ। অগভীর ঘুমের সময় কোন শব্দ শুনেছে তা ঘুম থেকে উঠে মনে করতে পারে না মানুষ। তবে বিষয়টি মজার বলেই মনে করেন অ্যান্ড্রিলন। ঘুমের মধ্যে শিক্ষা অর্জন, মজা তো বটেই।

Related Posts

Leave a Reply