স্বপ্ন দেখলেই বিপদ অবধারিত
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
ঘুমনোর সময় স্বপ্ন দেখেন তো? কী বলছেন! সত্যিই ঘুমনোর সময় স্বপ্ন আসে না? তাহলে তো ভয়ের বিষয় মশাই! কারণ সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী যা বলা-কওয়া শুরু করছেন, তাতে রাতারাতি স্বপ্নের মূল্য গেছে বেড়ে। এই বিজ্ঞানীরা গত কয়েক দশক ধরে একটি পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তাতে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে যারা স্বপ্ন দেখেন না, তাদের বয়সকালে নানাবিধ মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সাধরণ মানুষদের তুলনায় বেশি থাকে। বিশেষত অ্যালঝাইমার বা ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
গবেষণার এ-টু-জেট: ইউ এস স্লিপ স্টাডি নামে খ্যাত এই গবেষণাটিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৩২১ জন। তাদের উপর গত ১২ বছর ধরে গবেষণা চালানোর পর বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছিলেন যাদের “আর ই এম” বা রেপিড আই মুভমেন্ট কম হচ্ছে তাদের স্বপ্ন দেখার হারও কম। কারণ ঘুমের এই সময়ই আমরা মূলত স্বপ্ন দেখে থাকি। প্রসঙ্গত, যাদের আর ই এম রেট ক্রমাগত কমে, তাদের ব্রেন ফাংশনও কমতে শুরু করে। আর এমনটা হওয়ার কারণে ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। এমনটা প্রমাণিত হওয়ার পরই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে ব্রেন ফাংশন এবং ব্রেন ডিজিজের সরাসরি যোগ রয়েছে।
তাহলে উপায়? ডিমেনশিয়া রোগ যে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে থাবা বসাতে শুরু করেছে, তা মূলত ঘুমের ধরণ দেখেই বোঝা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রথমেই ঘুম কমতে শুরু করবে। টানা ঘুমনোর অভ্য়াস যাবে কমে। সেই সঙ্গে ঘুমনোর সময় স্বপ্নও আর আসবে না। এমন সব লক্ষণ দেখা গেলে যত শীঘ্র সম্ভব একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করবেন, তত রোগের প্রকোপকে পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, অ্যালঝাইমারস বা ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন কাজকর্ম করাও আর সম্ভব হয়ে ওঠে না এমন রোগীদের পক্ষে। এক সময় গিয়ে তো নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্য়দের চেনার ক্ষমতাও চলে যায়। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াটা জরুরি, না হলে কিন্তু…!
এখানেই শেষ নয়: শুধু স্বপ্ন দেখতে বাঁধা পাওয়া নয়, ঘুমের সঙ্গে ব্রেন ডিজিজের সম্পর্ক যে আরও অনেকর গভীর, তা এই গবেষণাটি চলাকালীন সামনে এসেছিল। গবেষকরা খেয়াল করেছিলেন যারা দৈনিক ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমোন, তাদেরও ব্রেন টিস্যু সময়ের আগে শুকিয়ে গিয়ে অ্যালঝাইমারস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দিনে ৭-৮ ঘন্টার বেশি ঘুমনো চলবে না।
বর্তমান অবস্থা: সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডিমেনশিয়া রোগের উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা গেছে ২০২৫ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে বসবাস করা ৬০ বছর বয়সি প্রায় ১.২ বিলিয়ান মানুষের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হবেন। শুধু তাই নয়, মোট রোগীর সংখ্যা প্রতি ২০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। ২০২০ সালে যদি এই সংখ্যাটা ৪২.৩ মিলিয়ান হয়, তাহলে ২০৪০ সালে তা গিয়ে দাঁড়াবে ৮১.১ মিলিয়ানে। প্রসঙ্গত, হু-এর মতে আগামী দিনে যে দুটি দেশে এই রোগের প্রকোপ সবথেকে বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে, সেই দেশ দুটি হল ভারত এবং চিন। সেই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং অফ্রিকাতেও সংখ্যা বাড়বে ডিমেনশিয়া রোগীর। তাই স্বপ্নের দিকে নজর দেওয়ার সময় হয়তো এসে গেছে বন্ধুরা। কারণ ডিমেনসিয়া রোগের চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। কেবল ওষুধের মাধ্যমে রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তাই আগে থেকে সাবধান হবেন তো কষ্ট পাবেন কম।