কেউ এভারেস্টে তো কেউ সাগর তলে শুরু করলেন সংসার
এভারেস্টে বিয়ে
ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টো শহরের এই যুগলের জন্য ঐতিহ্যগত ভাবে বিয়ে যথেষ্ট ছিল না। তারা চেয়েছিলেন অভিনব কিছু। তাই জেমস সিসম এবং আশলে স্কমিয়েডার ১৬ মার্চ ২০১৭ তারিখে, বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হোন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পে! তারা বিশ্বের প্রথম দম্পত্তি যারা নেপালে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে বিয়ে করেছেন। অ্যাডভেঞ্চার ফটোগ্রাফার চার্লিটন চার্চিল এই বিয়ে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করেন।
এই বিয়ের অসাধারণ ছবিগুলোর জন্য শুধু সাধুবাদ দিলেই চলে না, দম্পতির সঙ্গে এই ফটোগ্রাফারকেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অর্থাৎ ছবি তোলার জন্য এই দম্পতির সঙ্গে চার্লিটন চার্চিলকেও প্রায় এক বছর পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে এবং প্রায় তিন সপ্তাহ লেগেছে এভারেস্টের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে।
চলন্ত বিমানের ডানার ওপরে বিয়ে
২০০৮ সালের ৫ আগস্ট, যুক্তরাজ্যের এক দুঃসাহসী দম্পতি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ ফুট ওপরে তাদের বিয়ের কাজটি সারেন। এটা কোনো পাহাড়ের ওপর না বা কোনো উঁচু অট্টালিকার ওপরেও না। চলন্ত বিমানের ডানার ওপরে বিশেষ ব্যবস্থায় দাঁড়িয়েই তারা এই অভিনব বিয়ে সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনটি বিমান চলছিল। এর মধ্যে একটি বিমানের ডানার ওপর দাড়িয়ে ছিলেন ২৪ বছর বয়সি বর ড্যারেন ম্যাকওয়াল্টারস, আর তার পাশের আরেকটি বিমানের ডানার ওপর বিয়ের গাউন পরে দাড়িয়ে ছিল কনে ২৩ বছর বয়সি কেটি হজসন।
বিয়ের পাদ্রী ৬৭ বছর বয়সি রেভ জর্জ ব্রিংহাম তৃতীয় বিমানের ডানার ওপর থেকেই এয়ারবর্ন কমিউনিকেশন নামের একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দম্পতির বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাটি নিচে অপেক্ষমান অতিথিদের উদ্দেশ্যে আরএফসি রেন্ডকম্ব এয়ারফিল্ড থেকে লাউড স্পিকার দিয়ে প্রচার করা হয়।
কবরস্থানে বিয়ে
বিয়ের দিন মৃত বাবা মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাটা সাধারণ ঘটনা, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার এক যুগল ২০১২ সালের ১৯ মে তারিখে কবরস্থানে বিয়ের শপথ পাঠ করায় ব্যাপারটা আর মামুলি থাকেনি।
সবার কাছে বিয়ের শপথের জন্য এই জায়গাটা একটু বেমানান লাগলেও ডায়ান ওয়ালার এবং র্যান্ডি কিজারল্যান্ড তাদের মনের কথা এভাবে খোলাসা করেন যে, জীবনের এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিনে বাবা মাকে সঙ্গে রাখার এটাই সবচেয়ে উত্তম উপায় বলে তারা মনে করেন। তারা আরো বলেন, তাদের বাবা মা সবসময় তাদের দাম্পত্য জীবনের কামনা করেছিলেন।
অস্টিন শহরের ওয়াকউড কবরস্থানে তাদের এই বিয়ের আয়োজনকে সবাই ভালো চোখে দেখেনি, তারপরেও ৫০ থেকে ৬০ জন অতিথি বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন।
সেতুর ওপর বিয়ে
এটা ছিল প্রথম দেখায় প্রেম, যখন ওয়েটারার বারট্রান্ড রোডের সেতুর ওপর জেরার্ড ওয়ালেস এবং সামান্থার দেখা হয়েছিল। প্রথম দেখায় প্রেমের সেই জোয়ার শেষমেষ বিয়ের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত গড়ায়। তাই নিউজিল্যান্ডের এই যুগল উক্ত সেতুকেই তাদের বিয়ের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল।
স্বপ্নীল এই বিয়েতে সামান্থা তার বন্ধুদের সঙ্গে সেতুর ওপর বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়ে শপথ গ্রহণ করেছিল। প্রেমের সাক্ষী এই কাঠের সেতুকে সামান্থা তার বিয়ের সাক্ষীও করেছিল। সেতুর গোড়ায় প্রায় ১০০ জন অতিথি জমা হয়েছিল এবং নিয়ম অনুযায়ী বর সহ সবাই কনের আগমনের অপেক্ষায় ছিল।
জলের নিচে যিশু খ্রিস্টের ভাস্কর্যের সামনে বিয়ে
আমেরিকার ফ্লোরিডার একটি দ্বীপ এলাকায় জলের নিচে স্থাপিত যিশু খ্রিস্টের ভাস্কর্যের সামনে ২০১৫ সালে মিয়ামির এক দম্পতি বিয়ের শপথ নেন। উপকূল থেকে ৫ মাইল দূরে ২৫ ফুট জলের নিচ অবস্থিত এই ভাস্কর্যের সামনে কিম্বার্লি ট্রিওলেট এবং জর্জ রদ্রিগেজ তাদের বিয়ে করার স্থান হিসেবে বেছে নেয়। বিয়ের শপথ বিনিময়ের জন্য নোটারি পাবলিকের জলরোধক স্লেট ব্যবহার করা হয়েছিল আর সাক্ষী হিসেবে ছিল বন্ধুবান্ধব এবং রিসোর্ট এলাকার ডুবুরিরা। ১৯৬৫ সালের ২৫ আগস্ট পানির নিচে স্থাপিত যিশু খ্রিষ্টের এই ভাস্কর্যটির ৫০তম বার্ষিকীতে এই দম্পতি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিয়ে
সাইবেরিয়ান শহর ক্রাসনয়ারস্কে এনিসেই নদীর তীরে খোলা জায়গায় মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভীষন ঠান্ডায় ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি, সার্গেই কাউনোভ এবং তার বাগদত্তা ইরিনা কুজমেনকো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যারা বরফে গা ভাসাতে পছন্দ করে সেরকম একটা লোকাল ক্লাবের সদস্য ছিল সার্গেই। এরকম একটা ক্লাবের সদস্য হওয়ায় প্রতিকূল বরফের পরিবেশে বিয়ে করার মতো অদ্ভুত একটা স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, তবে তার বাগদত্তা এই নিম্নচাপের আবহাওয়া কখনোই পছন্দ করত না। সার্গেইয়ের প্রতি তার ভালোবাসার কারণেই সে এই অভিনব প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।
গরম জলে ভালো করে স্নান করে ইরিনা সেই তুষারাবৃত পরিবেশে সার্গেই এর সঙ্গে অপেক্ষমান শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে পোঁছায়। এই যুগলের বিয়ে নিয়ে সবাই উচ্ছ্বসিত ছিল তবে কোনো পাদ্রীই মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবহাওয়ায় তাদের বিয়ে পড়ানোর সাহস করতে পারেনি। সার্গেই সব কিছু উপেক্ষা ইরিনার হাতে বিয়ের আংটি পরানোর মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। পরে সকল আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একটা উষ্ণ ঘরে তাদের বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছে।
অ্যাপল স্টোরে বিয়ে
অ্যাপল পণ্যের দারুন ভক্ত জোশ এবং টিং লি নামের এক আমেরিকান যুগল। এ কারণে অ্যাপল স্টোরেই তারা তারা তাদের বিয়ের কাজ সেরে ফেলেন। নিউ ইয়র্কের এই কাপল শহরের ফিফথ এভিনিউতে অবস্থিত অ্যাপল স্টোরে ২০১০ সালে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’তে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন।
অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস তার বিয়েতে যেমন পোশাক পড়েছিলেন, সে ধরনের পোশাকে অ্যাপল স্টোরে আসেন তারা। আইফোন ব্যবহার করে তারা তাদের শপথ পাঠ করে এবং আংটি বদলের কাজটিও সারে অ্যাপলের আইপড আটকানো আংটি দিয়ে। অ্যাপলের এই স্টোরেই পরস্পরের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়েছিল তারা।
প্রথম দেখার স্থানে বিয়ে
রবার্ট এবং মেরিডিথ বনিলা নামের ক্যালিফোর্নিয়ার এক প্রেমিক যুগলের ইচ্ছা হয়েছিল যে, তাদের প্রথম যেখানে দেখা হয়েছিল স্থানীয় কোস্টকোর সেই রিটেইল শপে তারা বিয়ের শপথ গ্রহণ করবে। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহাধুমধামে তারা সেখানে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কোস্টকো রিটেইল শপ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছিল সেখানে তাদের বিয়ে আয়োজনে। শপ বন্ধের পর আয়োজন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের এবং তাদের সকল আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবরা সেখানে শপে উপস্থিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে এই শপ থেকে কেনাকাটার সময় পরিচয় হয়েছিল রবার্ট এবং মেরিডিথের।
ইতিহাসের প্রথম জেটপ্যাক বিয়ে
বেশিরভাগ কনেই চায় বিয়ের দিন সে তার বাবার হাত ধরে হেঁটে হেঁটে বিয়ের আসরে যাবে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার আমান্দা ভোলফ নামের ২৫ বছর বয়সি এই নারী চাইলেন যে, জেটপ্যাকে করে পানির ওপর দিয়ে নিউপোর্টের বিচে বিয়ের আসরে আসবে।
তার বর গ্রান্ট এংলারও একই ভাবে বিয়ের আসরে উড়ে আসেন এবং ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট এমন অভিনব উপায়ে তারা বিয়ের দিনটি স্মরণীয় করে তোলেন। বিয়ের ড্রেসের পরিবর্তে কনে পরেছিল সাদা শর্টস এবং রাশ গার্ড শার্ট আর এংলার পরেছিলেন ওয়েটস্যুট। তবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য ভোলফ মাথায় বিয়ের স্কার্ফ এবং এংলার গলায় বো টাই পরেছিল।