দাউদ ইব্রাহিম সম্পর্কে বিশ্বয়কর কিছু তথ্য
কলকাতা টাইমসঃ
দাউদ ইব্রাহিম আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের ত্রাস। এই মোস্ট ওয়ান্টেড মাফিয়াকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের পারদ যেন গগনচুম্বী। তাকে ঘিরে যে কোনও খবর মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। তাকে নিয়ে তৈরী হয়েছে একাধিক সিনেমা। যদিও বর্তমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনেই রয়েছেন মুম্বাইয়ের অন্ধকার জগতের এই ডন। চলুন জেনে নেওয়া যাক দাউদ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
১. দাউদ ইব্রাহিমের জন্ম :
১৯৫৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরিতে জন্ম হয় দাউদ ইব্রাহিমের। ঘটনাচক্রে দাউদের বাবা ইব্রাহিম কাসকর বম্বে পুলিশের হেড কনস্টেবল ছিলেন। দাউদের ১১ জন ভাইবোন ছিল। দাউদের পুরো নাম দাউদ ইব্রাহিম কাসকর। মা আমিনা গৃহবধূ ছিলেন।
২.দাউদের ছোটবেলা:
ডোংরি এলাকার তেমকার মহল্লায় দাউদের ছোটবেলা কেটেছে। আহমেদ সেলর হাই স্কুলে পড়াশোনা করা। কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয় দাউদ। স্কুলে পড়ার সময়ই খারাপ সঙ্গতে পড়ে চুরি ডাকাতি শুরু করে দেয় সে। দাউদের ভাই ইকবাল কাসকর -সহ পরিবারের অনেক সদস্য এখনও মুম্বাইয়ে বসবাস করেন। সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করা দিয়ে শুরু হয়েছিল ছোট রাজনের সঙ্গে অপরাধ দুনিয়ায় পথ চলা!
৩.দাউদের পরিবার:
গোয়েন্দদের খবর অনুযায়ী করাচিতে দাউদের সঙ্গে তার স্ত্রী মবজবীন ওরফে জুবিনা জরিন থাকে। একমাত্র ছেলে মোইন নওয়াজ থাকে। এছাড়াও দাউডের দুই মেয়ে রয়েছে মাহরুখ ও মারহীন। তৃতীয় কন্যা মারিয়া ১৯৯৮ সালে মারা যায়। মাহরুখের স্বামী জুনেদ ও মাহরিনের স্বামীর নাম আয়ুব। মোইনের স্ত্রী সানিয়াও পাকিস্তানেই থাকেন।
৪. ক্রিকেটে দাউদ ইব্রাহিম:
মাহরুখের স্বামী জুনেদ পাকিস্তানের জনপ্রিয় প্রাক্তন ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলে। এই বিয়ের কারণে মিয়াদাদকে ভারতে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
৫. দাউদের শখ:
বলিউডের বহু ঝলমলে পার্টির উদ্যোক্তা ছিলেন দাউদ। সেখান থেকেই বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মন্দাকিমিকে নিজের জন্য বেছে নেন দাউদ। ঘোড়া এবং দামি ও পুরনো ওয়াইন নিয়ে খুব শৌখিন দাউদ।
৬. দাউদের অপরাধে হাতে খড়ি:
শোনা যায় দাউদ নিজের অপরাধ জগতের কাজ শুরু করে করিম লালা গ্যাংয়ের হাত ধরে। সেই সময় মুম্বইয়ের কুখ্যাত ডন ছিল এই করিম লালা। মুম্বইয়ে তখন করিম লালারই রাজ চলত। আশির দশকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুখ্যাত নাম হয়ে যায় দাউদ। এছাড়াও বেটিং ও বলিউডের ছবি প্রযোজনা করত দাউদ। বেটিংয়ের সময়ই ছোটা রাজনের সঙ্গে আলাপ হয় দাউদের। হাওলা থেকে তারপর অস্ত্র পাচারের কারবার শুরু করে দাউড। ভারত ছেড়ে দুবাই চলে যাওয়ার পর সেখাে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরাধ সিন্ডিকেট ডি কোম্পানি গড়ে তোলেন দাউদ। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের ধারাবাহিক মামলায় দাউদের হাত রয়েছে জানার পরই তাকে ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করা হয়।
৭. নানা নাম নানা বেশ:
এস হুসেন জেডির লেখা “ডোংরি সে মুম্বই তক” বইতে দাউদের ১৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধ জগতের শুরুতে দাউদের ঘন কালো গোঁফের জন্য তাকে ‘মুচ্ছড়’ বলে ডাকা হত। ভারত থেকে পালানোর পর একাধিরবার নিজের নাম পরিবর্তন করে দাউদ। শোনা যায় চেহারায় বদল আনতে একাধিকবার মুখের প্লাস্টিক সার্জারিও করেছে দাউদ।
দাউদের ১৩টি ছদ্মনামের মধ্যে একটি শেখ দাউদ হাসান। এছাড়াও ডেভিড নামেও ডাকা হত তাকে। ভারতে কাউকে ফোন করলে নিজেকে হাজি সাহাব কিংবা আমির সাহাব নামে পরিচয় দিত।
৮.দাউদের পাসপোর্ট:
দাউদ ইব্রাহিমের চারটি পাসপোর্ট আছে। যার মধ্যে একটি ১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই করাচি থেকে ইস্যু করা হয়। এই পাসপোর্টে দাউদের তখনকার সাম্প্রতিক ছবি ছিল। পাসপোর্টের নম্বর ছিল c267185। বাকি তিনটি ইয়েমেন, আবু ধাবি ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইস্যু করা হয়েছিল।
৯.বলিউডে দাউদ:
দাউদ একটা রহস্য। আর এই রহস্য নিয়ে মানুষের মনে কৌতুহলও অনেক। আর সেই কারণেই এই কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে নিয়ে বলিউডে একাধিক ছবি তৈরি করেছেন পরিচালকরা। কোম্পানি (২০০২), ডি (২০০৫), ব্ল্যাক ফ্রাইডে (২০০৭), শুটআউট অ্যট লোখন্ডওয়ালা (২০০৭), ডি ডে (২০১৩) প্রভৃতি। এছাড়াও আন্ডারওয়ার্ল্ডের বহু ছবিতেও দাউদের চরিত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। দাউদের বোন হাসিনাকে নিয়েও সম্প্রতি একটি সিনেমা হচ্ছে। এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্রদ্ধা কাপুর।
১০. আন্তর্জাতিক জঙ্গি: আল কায়দার সঙ্গে যোগ রয়েছে এই বিশ্বাসে ২০০৩ সালে দাউদকে ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’ ঘোষণা করা হয়।