বেঁচে থাকার অস্তিত্ব কিন্তু ভয়ে, জানেন কিভাবে ?
‘ভয়’ শব্দটি আমাদের অনুভূতির একটি অংশ। অনেক সময় ভয় এমন কিছু বস্তুকে ঘিরে হয় যার কোনো অস্তিত্ব নেই। যেমন ভুতের ভয়।
আবার অনেক সময় জীবিত জিনিসেও ভয় হতে পারে। যেমন তেলাপোকার ভয়। যারা হীনমন্যতায় ভোগেন তারা মানুষেও ভয় পান। বাড়ির বড়রা এজন্য সব সময়ই বলে থাকেন যে, ভয় পাওয়া ভালো নয়।
কথাটি পুরোপুরি সত্যি না। অনেক ক্ষেত্রে ভয় মানুষের জন্য ভালো। আর অবশ্যই সেটি মনস্তাত্বিক ব্যাপারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভয়ের ভালো দিকগুলো সম্পর্কে।
* ভৌতিক গল্প বা লোম শিউরে ওঠা সিনেমা দেখতে পারেন না শুধু ভয়ের কারণে? বেশি বেশি করে দেখা শুরু করুন ভৌতিক সিনেমা। এগুলোকে আর নেতিবাচক সংজ্ঞায় ফেলবেন না। ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্ট স্টিভ অরমা বলেন, দুঃখ, আনন্দ বা রাগের মতোই ভয় একটি অনুভূতির ব্যাপার। রাতে ভয়ের কারণে যারা ঘুমাতে পারেন না তাদের ক্ষেত্রে জীবনের বিভিন্ন সংকটে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
* ভয় পাওয়া ব্যক্তিরা বেশি সচেতন হন। যেসব ব্যক্তিদের মধ্যে ভয় নামক অনুভূতির উপস্থিতি বেশি তারা অন্যদের তুলনায় বেশি সচাতন হয়ে থাকেন। ডক্টর অরমা বলেন, ভয় আমাদের মনের ভেতরের সতর্কতার বাঁশি যা বিপদ দেখেই বাজতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ভয় পাওয়ার অনুভূতি না থাকলে আমরা বেশিদিন টিকে থাকতে পারতাম না। কারণ ভয় পাই দেখে আমরা নিজেদের যত্ন নিই। কারণ আমাদের হুমকিগুলো আমাদের চারপাশেই আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ভয় পেলে তা আমাদেরকে শারীরিকভাবেও জানান দেয় এবং শরীরে শক্তি সঞ্চার করে। ফলে আমরা যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম হই।
* ভয় আমাদের সামনে নতুন রাস্তা উন্মোচন করে। যখন আমরা নির্দিষ্ট কোনো কিছুকে ভয় পাই, তখন তা আমাদের কাছে এক প্রকার বাজির মতো হয়ে যায়। এই বাজি জেতার জন্য ভয়ই আবার আমাদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে। যেমন কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ব্যাপারে কেউ যদি ভয়ে থাকেন তাহলে তার এই ভয় তাকে নিখাত ভালোবাসা খুঁজে পেতে সাহায্য করে, বলেন ডক্টর অরমা। সাইক্লোজিস্ট মেয়ার এবং জন বলেন, মনোবিদ্যাগত প্রভাবে ভয় পাওয়াকে চিত্র অঙ্কনের দর্শন বলা হয়। ভীতিকর কোনো কিছু দেখা আমাদের জীবনের বেঁচে থাকার এক অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করে।
* ভয় আপনার ভবিষ্যত অগ্রগতির জন্য সুবিধাজনক। অনেকে আছেন যারা শেষ মুহূর্তে কাজ সম্পন্ন করে থাকেন কিন্তু যাদের ভিতরে ভয় জিনিসটি কাজ করে তারা কাজ সব সময় সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন করে রাখেন, বলেন ড্যাবি ম্যান্ডেল (স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট)। তিনি আরো বলেন যে, এটি আপনাকে একটি দলের প্রতিনিধি হতে সহায়তা করে। ড্যাবি বেশ জোর দিয়েই বলেন যে, ভয় পাওয়া ভালো। কারণ এটি আপনাকে আপনার বিপদ থেকে সজাগ রাখে। সকালে জাগিয়ে তোলে যাতে আপনি গত দিনের তুলনায় আরো ভালো করে দিন অতিবাহিত করতে পারেন।
* ডক্টর অরমা বলেন, আপনি যে বেঁচে আছেন তার অস্তিত্ব টের পান ভয়ের মাধ্যমে। তাই ভয়কে খারাপভাবে না নিয়ে যেসব জিনিসে আপনার ভয় কাজ করে সেগুলো বেশি বেশি করে করতে থাকুন। ভয় এমন এক ধরনের অনুভূতি যখন এটি আপনার ভেতর কাজ করে তখন আপনার ভেতরে আর কোনো অনুভূতির অস্তিত্ব থাকে না। যেমন দুশ্চিন্তা, আপনি যখন ভয় পান তখন দুশ্চিন্তা আপনার থেকে দূরে থাকে। অর্থাৎ ভয় আপনাকে অন্যান্য খারাপ অনুভূতি থেকে দূরে রাখে, বলেন ডাক্তার মায়ের।
ডাক্তার মায়ের আরো বলেন, ভয় মানুষকে সামাজিকতা শেখায়। আগে বলা হতো থিয়েটারে বসে ভয়ের সিনেমা দেখা আর গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকা এক ব্যাপার। কিন্তু আসলে তা নয়। মানুষ ভয় পেলে তার শরীরে অক্সিটোসিন তৈরি হয়। যা মানুষকে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া এবং বন্ধুত্ব তৈরিতে সাহায্য করে।