November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

মেয়েদের হাড়ের ক্ষয় রোধে টক দই

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

মেনোপজের পর বেশির ভাগ মহিলার দ্রুত হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায়শই ব্যথা অনুভূত হয়। এমনকী সামান্য আঘাতেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে দারুণ কাজ করে প্রাত্যহিক খাবারের সঙ্গে এক কাপ করে টক দই। টানা তিন বছর গবেষণার পর এই তথ্য দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী।

আমেরিকান সোসাইটি অব বোন অ্যান্ড মিনারেল রিসার্চ (এএসবিএমআর) এর বার্ষিক অধিবেশনে জেনেভা ইউনিভার্সিটি হসপিটালের একদল গবেষকের উপস্থাপিত গবেষণাপত্রটি নিয়ে এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা খুবই আশাবাদী।

কী ভাবে দই হাড়ের পুষ্টি জোগান দেয়?
এএসবিএমআর এর অধিবেশনে উপস্থাপন করা গবেষণাপত্রে সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, যখন মহিলাদের মেনোপজ হয়, তখন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হাড় দ্রুত ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। বহু ক্ষেত্রে এমনই ভঙ্গুর অবস্থা হয় যে, সামান্য ঠোকা লাগলেও হাড় ভেঙে যায়। খাবারের সঙ্গে যে ক্যালসিয়াম শরীরের মধ্যে ঢোকে, সেগুলো শরীরের অন্য জরুরি কাজে খরচ হয়ে যায়। হাড়ে পৌঁছনোর মতো ক্যালসিয়াম শরীরে অনেক সময়েই থাকে না।

গবেষকরা দেখিয়েছেন, এই সময়ে খাবারে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য হাড় থেকে ক্যালসিয়াম একটু একটু করে চলে যায়। ফলে হাড় আরও দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে। একমাত্র ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারই ওই সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারে। তা ছাড়া, যে সব খাবার শরীরে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম-শোষণে সাহায্য করে, সেগুলোও খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

গবেষক দলের প্রধান ইমানুয়েল বিভার তার গবেষণাপত্রে লিখেছেন, “তিন বছরের সমীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখেছি, মেনোপজে পৌঁছে যাওয়া যে সব মহিলা রোজ খাবারের সঙ্গে এক কাপ দই খান, তাদের হাড় অন্যদের থেকে বেশি শক্তিশালী হয়। সামান্য চোট লাগলেই তা ভেঙে যায় না।” বিভার আরও বলেন, “আমাদের গবেষণায় এমন বেশ কিছু মহিলাও ছিলেন, যাঁরা তিন বছর ধরে খাবারের সঙ্গে দই খাননি। এই দুই ধরনের মহিলার হাড়ের গঠন আমরা নিয়মিত পরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।”

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যে সব মহিলা নিয়মিত দই খেয়েছেন, তাদের হাড়ের ঘনত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি কমেছে শরীরে চর্বির পরিমাণ।

কী ভাবে দই হাড়ের ক্ষয় রোধ করে?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, দইয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। তা ছাড়া, জমাট বাঁধার জন্য দইয়ে যে সব ব্যাকটেরিয়া থাকে সেগুলো এক দিকে যেমন খাদ্যনালীতে ক্যালসিয়ামের শোষণ প্রক্রিয়া তরান্বিত করে, তেমনই হাড়ের ক্ষয়ও রোধ করে। গবেষকরা বলছেন, খাদ্যনালীর মধ্যে বেশ কিছু এমন ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দইয়ের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এই সব ‘ভালো’ ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় করে, যা আবার হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার পক্ষে উপযোগী।

কেন এই গবেষণাপত্রটিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন এন্ডোক্রিনোলজিস্টরা? এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ঋতুবন্ধের পরে মহিলাদের হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা (অস্টিওপোরোসিস) পুরুষদের তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে সামান্য চোট লাগলেই কোমর, মেরুদণ্ড বা কবজির হাড় ভেঙে যায়। হার্ট অ্যাটাকের পরে এক বছরের মধ্যে যত লোক মারা যান, কোমর ভাঙার এক বছরের মধ্যে তত লোকই মারা যান। অথচ হৃদরোগ নিয়ে আমাদের মধ্যে যে সচেতনতা দেখা যায়, অস্টিওপোরোসিস-জনিত কোমর ভাঙার ক্ষেত্রে তার ১০ শতাংশও দেখা যায় না।

এখন অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা কী ভাবে হয়?
এন্ডোক্রিনোলজিস্টেরা জানাচ্ছেন, হরমোন (ইস্ট্রোজেন) রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দিয়েই এখন মূলত এই রোগের চিকিৎসা হয়। তবে ইস্ট্রোজেন ব্যবহার নিয়ে এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের মধ্যেই ভিন্নমত রয়েছে। কারণ, ইস্ট্রোজেন ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই অস্টিওপোরোসিস থেকে  মুক্তি পাওয়া সংক্রান্ত গবেষণাই এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের  দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সতীনাথবাবু বলেন, ‘‘যে কোনও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার দিকেই আমরা বেশি ঝুঁকতে চাই। দই খেলে হাড় মজবুত হয় এবং ওজন কমে। তাই মহিলাদের খাদ্য তালিকায় এটা থাকা খুবই জরুরি।’’

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক প্রদ্যোৎ শূরও বলেন, “মহিলাদের খাদ্যতালিকায় দুধ বা দুধের তৈরি জিনিস রাখতে আমরা বার বার পরামর্শ দিই। এ ক্ষেত্রে দইয়ের কথা প্রথমেই বলা হয়। কারণ দইয়ে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি, দুই-ই পাওয়া যায়।” তবে প্রদ্যোৎবাবুর মতে, “হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির গুরুত্বটাও অস্বীকার করা যায় না। এটা ঠিকই যে এই থেরাপির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই নিয়মিত চেকআপটাও জরুরি।”

অর্থোপেডিক কুণাল সেনগুপ্ত আবার বলছেন, “শুধু ওষুধ খেয়ে কিছু হয় না। আসল হলো খাবার। দই এ ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।” তার পরামর্শ, “মেয়েদের কম বয়স থেকেই প্রচুর দুধের তৈরি খাবার, বিশেষত দই খাওয়া উচিত। যদি তা না হয়, তা হলে মেনোপজের পর তো খেতেই হবে। কারণ দই-এ ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। পাশাপাশি ভিটামিন ডি-র জন্য শরীরে সূর্য়ের আলো লাগানোটাও জরুরি।” একই কথা বলেছেন ফিজিক্যাল মেডিসিন এর চিকিৎসক মৌলিমাধব ঘটক। তবে তিনি ভিটামিন ডি-র ওপরেই জোর দিয়েছেন। তার কথায়, “হাড়ে ক্যালসিয়াম জমানোর জন্য ভিটামিন ডি-র বড় ভূমিকা রয়েছে। সেটা আসে সূর্যের আলো থেকে। তাই দুধ বা দই-এর মতো ক্যালসিয়াম-যুক্ত খাবার আর শরীরচর্চা- এই দুইয়ের যোগফলই মেয়েদের হাড়ের শক্তি বাড়াতে পারে।”

Related Posts

Leave a Reply