November 12, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

শিরদাঁড়ার সমস্যা কোন রোগটা স্পন্ডিলাইটিস না স্পনডাইলোসিস?

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

স্পনডিলাইটিস আর স্পনডাইলোসিস। দুটোই শিরদাঁড়ার সমস্যা। তবে অনেকেই জানেন না যে দুটোর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেকসময় ডাক্তারেরাও রীতিমতো দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সঠিক চিকিৎসার জন্য এটি জানা খুব জরুরী। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অরুনাংশু তালুকদার

স্পনডিলাইটিস

স্পনডিলাইটিস সাধারণত কম বয়সে (৪০ বছরের কম) হয়। এ রোগের ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠে সবচেয়ে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। পা ফেলতে গেলে পায়ের পাতায় অসহ্য ব্যথা বা ভোররাতের দিকে কোমরে প্রবল যন্ত্রণা এর প্রধান লক্ষণ। আস্তে আস্তে কাজের মধ্যে ফিরে এলে ব্যথা কমতে থাকে। বিশ্রাম নিলে শিরদাঁড়ায় রস জমে ইনফ্ল্যামেশন হয়। নড়াচড়া করলে রসালো পদার্থ শিরদাঁড়া থেকে সরে যায় ও রোগীর ব্যথাও কমতে থাকে। কোমর, কোমরের দুপাশ, পায়ের তলা ছাড়াও এ ব্যথা ঘাড়ে বা পাঁজরের শিরদাঁড়ায় হতে পারে। আঙুল, কবজি বা ঘাড়ের জয়েন্টেও হতে পারে। তবে এসব জায়গায় ব্যথার সম্ভাবনা তুলনায় কম। স্পনডিলাইটিস আসলে একধরনের বাত। এই বাতের সঙ্গে কারওর কারওর শরীরের অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখ লাল হতে পারে, হার্টের সমস্যা হতে পারে, ফুসফুসের সমস্যা, খাবার হজম কম হতে পারে ইত্যাদি। এই অসুখ অনেকটাই বংশানুক্রমিক। এই অসুখের ক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে কোন পেনকিলার দেওয়া হবে, সেটা অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পেন কিলার খেতে হতে পারে। অনেকে পেন কিলার খেয়েও ভাল থাকেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে আরও কিছু ওষুধ (বায়োলজিকস) ও ইনজেকশন দেওয়া হতে পারে। স্পনডিলাইটিস হলে বেশিক্ষণ বিশ্রাম নেবেন না বা এক জায়গায় বসে থাকবেন না। এক্সারসাইজ়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এক্ষেত্রে আছে। সাঁতারও খুব কাজে আসে।

স্পনডাইলোসিস

আমাদের শিরদাঁড়ায় যে হাড়গুলো আছে, তারা সামনে-পিছনে ও দুপাশে নড়াচড়া করে। দুটো শিরদাঁড়ার মাঝে স্পঞ্জের মতো যে জিনিসটি থাকে তাকে আমরা ডিস্ক বলি। এই ডিস্ক থেকে জেলির মতো ফ্লুইড বেরোয়। এই ফ্লুইডের সাহায্যেই আমরা বিভিন্ন দিকে ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করতে পারি। শিরদাঁড়ার হাড়ে ঘর্ষণ হয় না। কিন্তু যদি এই লুব্রিকেশন যদি কমে যায়, তাহলে হাড়ে-হাড়ে ঘষা লাগবে। বিশ্রাম নিলে এই রোগীরা ভাল থাকেন। কিন্তু হাঁটাচলা বা পরিশ্রম করলেই শিরদাঁড়ায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। স্পনডিলাইটিসের সঙ্গে এই অসুখের মূল তফাত্ এখানেই। স্পনডাইলোসিস সাধারণত ৬০-এর কাছাকাছি বয়সে বেশি হয়। অনেকে সারভাইকাল কলার বা কোমরে বেল্ট ব্যবহার করেন, এই ঘর্ষণের সম্ভাবনা কমানোর জন্যই। এতে ওই জায়গায় মুভমেন্ট আটকে রাখা যায়। কম বয়সে স্পনডাইলোসিস সাধারণত হয় না যদি না, তার আগে কোনও দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। কারওর শরীরে যদি আগে থেকেই কোনও কারণে হাড়ের ক্ষয় হয়ে থাকে, তাহলে কম বয়সেও হতে পারে স্পনডাইলোসিস। এই অসুখে এক্সারসাইজ় করলে ব্যথা আরও বাড়বে। তাই, বেল্ট, সারভাইকাল ট্র্যাকশন বা কোমরের হাড়ে ট্র্যাকশন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এঁদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাড়ের ক্ষয় হয় ক্যালশিয়ামের অভাবে। এঁদের ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়। যদি স্পনডাইলোসিস বিভিন্ন নার্ভে চেপে বসে, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে নার্ভের ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবা হতে পারে। স্পনডাইলোসিসের ব্যথা সাধারণত ঘাড়ে আর কোমরেই হয়। পাঁজরের হাড়ে তুলনায় ব্যথা হয় কম। স্পনডাইলোসিসের প্রতিরোধ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রথম থেকেই সেন্ট্রাল ওবিসিটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে শিরদাঁড়া বেঁকে যাবে না। অল্প বয়স থেকে সাঁতার কাটতে পারেন। ওজন কমানো দুক্ষেত্রেই জরুরি। সূর্যের আলো গায়ে লাগানো জরুরি। ক্যালশিয়ামযুক্ত খাবার ডায়েটে রাখুন।

Related Posts

Leave a Reply