অন্তঃসত্ত্বা শ্রীদেবীকে সেদিন মেরেই ফেলছিলেন এনার মা!
কলকাতা টাইমস :
বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবন বলতে সাধারণত কিছু থাকে না। কারণ তাদের ফ্যানরা তাদের নিয়ে এতটাই কোতুহলে থাকেন যে সবকিছুই জানতে চান। সবসময় তাদের ধাওয়া করে বেড়ান। তবুও কিছু কিছু ঘটনা অন্তরালে থেকে যায়। এমনি একটি ঘটনা শ্রীদেবী-বনি কাপুরের প্রেম কাহিনী। বলিউডের যারা জানেন, তারা মানেন- এই জুটির কাহিনী যে কোনো হিট রোমান্টিক সিনেমার চেয়ে কম নয়। একদিকে পাঁচবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতা শ্রীদেবীর প্রেমে বনি কাপুর তার ধন-সম্পদ আর পরিবারকে তুচ্ছজ্ঞান করেছেন আর অপরদিকে শ্রীদেবীকে সইতে হয়েছে হাজারো পদের অপমান আর শত্রুতা।
এমনকি নির্মম জিঘাংসার শিকারও হতে হয়েছিল- তবে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান অভিনেত্রী অর্চনা পুরন সিংয়ের তৎপরতায়। শ্রীদেবীর মা রাজেশ্বরী মারাত্মক অসুস্থ হলে তাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। যেখানে বনি কাপুরও শ্রীদেবীর সঙ্গে ছিলেন। রাজেশ্বরী শেষপর্যন্ত মারা যান। ওই সময়টায় দীর্ঘদিন ধরে শ্রীদেবীর ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন নায়ক অনিল কাপুর ও সঞ্জয় কাপুরের বড় ভাই বনি কাপুর।
শ্রীদেবী বনির এই আত্মনিবেদনে খুব প্রভাবিত হন। এরপর যা হবার তাই হয়। একটা সময় বাঙালি বাবু বিবাহিত মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া হাজারো পুরুষের স্বপ্নকন্যা শ্রীদেবী ধরা দেন আরেক বিবাহিত পুরুষ বনি কাপুরের প্রেমের বন্ধনে। বলিউড জগৎকে লাজওয়াব করে দেওয়া এই প্রেম যখন গলি গলিতে গল্পের পর গল্প রচনা করছে তখন পর্দার অন্তরালে ঘটতে থাকে ‘ঘর ঘর কি কাহানির’ মতো একের পর এক পর্ব।
বিবাহিত বনি কাপুরর ঘরে ছিল দুই সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে বনির স্ত্রী মোনা কাপুরের মা সাত্তি শৌরি শ্রীদেবীকে পিটিয়েছিলেন বেধরক। তখন শ্রীদেবী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ওই সময়টায় মিঠুনের সঙ্গে শ্রী’র সম্পর্কটা ফিঁকে হয়ে যাচ্ছিল। যদিও বলা হয় লুকিয়ে মিঠুন-শ্রীদেবী বিয়েও করেন ১৯৮৫ সালে এবং ডিভোর্স হয় ১৯৮৮ সালে)।
বনি কাপুর মুম্বাইর খ্যাতিমান প্রযোজক এবং একসময়ের হিট নায়ক অনিল কাপুরের বড় ভাই। অনিলের সঙ্গে শ্রীদেবীর মিস্টার ইন্ডিয়া ছবি তখন ছিল সুপার-ডুপার হিট। এসব ছাপিয়ে বনি যখন শ্রীদেবীর মায়ের মৃত্যুর পর তার সব ধরনের খেয়াল রাখা শুরু করলেন, তখন শ্রীদেবী বাস্তবেই দুর্বল হয়ে পড়লেন বয়সে অনেক সিনিয়র বনির প্রতি। মারা যাওয়ার আগে শ্রীদেবীর মায়ের অনেক ঋণ ছিল। সেইসব ঋণ পরিশোধ করে দেন বনি। মোট কথা, মায়ের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা পরম্পরায় শ্রীদেবী কখন নিজেকে বনির হাতে সঁপে দেন তা ঠিক ঠাহর করতে পারেননি।
সবই ঠিকঠাক ছিল এ যাবত। কিন্তু হাঙ্গামা বেঁধে যায় যখন ‘অবিবাহিত শ্রীদেবী অন্তঃসত্ত্বা’ এমন খবর মিডিয়ায় লিক হয়ে যায়। স্ত্রী মোনার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে বনির বাড়িঘর, পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় পারিবারিক এক পার্টিতে বনি কাপুরের ছেলে অর্জুন কাপুরের দিদিমা সাত্তি শৌরি শ্রীদেবীর ওপর হামলে পড়েন। প্রেগন্যান্ট শ্রীদেবীর ওপর লাথি আর ঘুঁসির ঝড় বইয়ে দেন বনির শ্বাশুড়ি।
এ ঘটনায় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন অনিলসহ কাপুর খান্দানের অপরাপর সদস্যরা। সবাই যেন তামাশা দেখছিলেন। এসময় নড়ে চড়ে ওঠেন পার্টিতে উপস্থিত অর্চনা পুরন সিং। একসময়ের নায়িকা এবং পরে সনি টিভির হিট শো কমেডি সার্কাসের অ্যাংকর অর্চনা সর্বশক্তিতে সাত্তি শৌরিকে টেনে-হিঁচড়ে শ্রীদেবীর থেকে আলাদা করেন।
বনির শ্বাশুড়ি যেভাবে শ্রীদেবীকে ঘুঁসি মারছিলেন তাতে স্পষ্ট ছিল যে তিনি আসলে কী চাইছেন। তিনি চাইছিলেন তার মেয়ের ‘হতে চলা’ সতীন অন্তঃসত্ত্বা শ্রীদেবী সেখানেই মারা যাক। সতীনের মা মেরেই ফেলছিলেন অন্তঃসত্ত্বা শ্রীদেবীকে! তবে অর্চনার তাৎক্ষণিক তৎপরতায় কোনোমতে বেঁচে যাওয়া শ্রীদেবীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। এবং নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান শ্রীদেবী। অন্যরা তামাশা দেখছিলেন!
এ ঘটনার পর স্ত্রী মোনা সিংকে নিয়ে মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলেন বনি। তিনি শ্রীদেবীকে বিয়ে করছেন- এমন ঘোষণায় বিপক্ষের সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে শ্রীদেবীকে বিয়ে করেন বনি। এরপর ৫৪ বছর বয়সে দুবাইতে শ্রীদেবীর মারা যাওয়া পর্যন্ত টানা ২২ বছর তারা সুখ-শান্তি আর স্বস্তিতে সংসার করে যান।