অপরাধ-আইন থেকে ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নতুন ভাবনা রাজ্যের, ইউনিসেফের
কলকাতা টাইমস :
শিশু, নাবালক, নাবালিকারা অনেক সময়ই গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে অল্প বয়সেই তাদের বাকি জীবন ঘোর অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে যায়। আইনি জটিলতায় থমকে যায় বিচার প্রক্রিয়া। ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রবল চাপ তৈরি হয়। পরিবার, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তারা।
অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া এমন অপ্রাপ্ত বয়স্কদের আইন-আদালতের বেড়াজাল থেকে বের করে আনার উপায় খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়েছে রাজ্যে।
রবিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন এবং ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় এই বিষয়ে আলোকপাত করলেন শিশু স্বার্থে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘এখন অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুর বিরুদ্ধে এফআইআর করার প্রয়োজন নেই। আগের মতো বিশেষ শিশু সুরক্ষা সংস্থায় তাদের পাঠানোরও দরকার নেই।।পরিবারের কাছেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কল্যাণমূলক প্রকল্পে যুক্ত করে শিশুকে শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সবল রাখার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ জন্য পুলিশ, প্রশাসন ও শিশু স্বর্থে কাজে করা বিভিন্ন সংস্থা সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।’
শশীর কথায়, ‘ছোটখাটো অপরাধ করেও বিচারের নামে শিশুকে যন্ত্রনাদায়ক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ঠেলে দেওয়া অনুচিত।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া শিশুদের হোমে আটকে রেখে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় ঠেলে না দিয়ে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে রেখেই শোধরানোর সুযোগ দিতে হবে।
ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান মহম্মদ মহিউদ্দিনের কথায়, ‘শিশুদের পুলিশি বিচার প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজন বিভিন্ন পরিষেবা, নজরদারি এবং পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী লঘু অপরাধে অভিযুক্ত শিশুকে দীর্ঘ আইনি বিচারের প্রক্রিয়ার বাইরে মুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
কারণ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ও বন্দি জীবনে শিশুদের সংশোধনের পথ থমকে থাকে। তারা নতুন অপরাধে জড়িয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপরি অনান্যা বন্দোপাধ্যায় বলেন, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের উচিত শিশু অপরাধীদের মামলাগুলি সহানুভুতির সঙ্গে দ্রুত বিচার করার পথ খোঁজা।
ইউনিসেফ ও রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে, জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাইলট প্রজেক্ট শুরু করবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপারসন সুদেষ্ণা রায়।