ভুল
[kodex_post_like_buttons]
রানু ভট্টাচার্য
ইস্, খুব দেরী হয়ে গেল আজ। অ্যালার্মটাও বাজেনি।
আর রিমাকেও বলিহারি। বলে না দিলে একটা কাজও
যদি নিজের থেকে করে।
ভাবতে না ভাবতে রিমা চা
নিয়ে হাজির। ব্রেকফাস্টের কথা বলে দিয়ে তৈরী হতে থাকে অনীক। এই দু’হাজার
আশী সালেও একত্রিশে মার্চ
সেই পঞ্চাশ একশ’ বছর
আগেকার মতই চলছে। সেই
ক্লোজিং আর সেই ফাইনাল
অ্যাকাউন্টস্ আর সেই
লেনদেনের হিসেব।
ব্রেকফাস্ট রেডী।মাপমতো সেঁকা রুটি, জুস্,
আর কফির উষ্ণতা সেই প্রথম দিনেই যা বলে দেওয়া
ছিল, তাই। নাঃ সেবাযত্নে
রিমার জুড়ি নেই।
বেরোবার মুখে দেখে রিমা
দরজায় দাঁড়িয়ে নেই। উঃ, ঘড়ি ওলটপালট তো সব ওলটপালট। তারও, রিমারও।
রিমা, রিমা, আমার পাম্ টপটা
কোথায়?
রিমা এসে একবার তাকিয়ে শোবার ঘরে গিয়ে
নিয়ে আসে পাম্ টপটা আর
তক্ষুনি অনীক সপাটে লাগায়
কষে একখানা চড়। দেরী হয়ে
যাবার রাগটা রিমার গালেই
আছড়ে পড়ে।
রিমা তো সেইখানেই স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে। অনীক ছাদে
গিয়ে স্কাইকারের অটোফুয়েল
অন্ করে। গত পনেরোকুড়ি
বছর আগেই ঠিক হয়েছে, নীচে রাস্তা দিয়ে যাবে পাব্লিক
কার আর আকাশ ছুঁয়ে যাবে
প্রাইভেট স্কাইকার। নিজের
স্কাইকারে বসামাত্র লাল আলোটা বিপ্ বিপ্ করতে
থাকল। কি হ’ল এটা? কোনো
কাজ কি ভুলে গেছে,, নাকি
কিছু একটা ফেলে এসেছে?
তড়িঘড়ি ফ্ল্যাটে ফিরে দেখে রিমা সেখানেই স্থানুবৎ
দাঁড়িয়ে। ওঃ রিমা, বলে অনীক যেই না রিমার পিঠে
হাত রেখেছে, তক্ষুনি চারশ’
চল্লিশ ভোল্টের বিরাট এক
ধাক্কা, আর অনীক তার
অন্তিম মূহুর্তটিতে উপলব্ধি
করে কি বিরাট ভুলটাই না
করেছে। তখন চড় মারতে
গিয়ে বেকায়দায় রিমার
অটোওয়েপন বাটনটা চালু
করে দিয়েছিল সে।
রিমা, গ্রেড ওয়ান যন্ত্র-
মানবী, তার স্ত্রী। একটা
সময়ে নির্বিচারে কন্যাভ্রূণ
নষ্ট করে৷ দেবার ফলে আজ
স্ত্রী হিসেবে যন্ত্রমানবীদের
বিরাট চাহিদা। প্রজনন এখন
হয় শুধুমাত্র ল্যাবে, হিসাবমত,
প্রয়োজনমত। এজন্য সমস্ত
মানবমানবীদের নির্দিষ্ট সময়ে
নিয়মিত প্রজনন ব্যাংকে
যাওয়া বাধ্যতামূলক।
রেসকিউ পার্টি এসে
প্রথমেই রিমাকে অকেজো
করে দিল। রিপেয়ারিংএর
পর ব্রাইডলিষ্টে পাঠাবে।
তারপর অনীকের শবের
দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে নিজের বাঁ কপালের
বাটনটা টিপে দিল, নির্ভুল!!