রূপমতী একলামতী
[kodex_post_like_buttons]
রানু ভট্রাচার্য
সপ্তগিরিনগরীর রাজকন্যা রূপমতী দীপ্তাংশু ভানুদেবের পূজো দিয়ে ফিরছিল প্রিয়সখী মনিকঙ্কনার সাথে। মনিকঙ্কনা দ্রুতপায়ে ফিরে গেল প্রপাসত্রে, অতিথি পথিকদের জলদান করতে হবে। রূপমতী চলল ধীর পায়ে। পথের পাশে কিছু রাধাপদ্ম আর সর্বজয়া ফুটে আছে। কিয়ৎকাল পূর্বেই প্রপাতলিকার গন্ধলি বান্ধুলি আর অর্কপ্রিয়পুষ্প দিয়ে মহামার্তণ্ডদেবকে অঞ্জলি দিয়েছে রূপমতী। কই, কখন তো এই
পুষ্পগুলি চোখে পড়েনি। যত্ন করে রূপমতী পুষ্পপত্র দিয়ে নৌকা বানায়, রাধাপদ্মপুষ্প দিয়ে সাজায় তাকে। তারপর, পাশেই কুলুকুলু রবে ভেসে যাওয়া ভীমায় ভাসিয়ে দেয় সেটা আর নিজেও যেন সেই সাথে ভেসে পড়ে তরী বেয়ে।
সে, রাজকন্যা রূপমতী, রাজা চন্দ্রকেতুর একমাত্র কন্যা, শৈশবে মাতৃহারা, নানা বিদ্যায় পারদর্শী,সুন্দরীশ্রেষ্ঠা, সুবর্ননগরীর বাগদত্তা বধূ, ভেসে চলল ভীমায় নৃত্যপরা লহরীর মাথায় চড়ে সজ্জিত পত্রতরীটি বেয়ে। জীবনটা বড্ড মাপা, ভাবে রূপমতী। এই রাজপুরী, তার অবরোধ, কঞ্চুকীর বিধিনিষেধ, সুবর্ননগরীর সাথে রাজকীয় লেনদেন – কেন, কেন এই সমস্ত কিছু শুধু রূপমতীর জন্যই
নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকবে? নিজের ভালো লাগা, নিজের ইচ্ছে, নিজের খুশী – এসব কি কোনোটাই তার প্রাপ্য নয়? হাঁপিয়ে ওঠা নিজেকে নিয়ে এই অন্য এক ভেসে যাওয়া- এই তো বেশ! এই মুক্ত স্বাধীন বাতাসে যেন এক ভিন্নতর গন্ধভেসে আসে। অচেনা, নূতন,
চিত্তচাঞ্চল্যকর।
ত্বিষাম্পতি মরিচীমালীর কিরণটিও তীব্রতর হয়ে ওঠে। ভানুদেব তাঁর ঝল্লিকায় রূপমতীকে আজ যেন দগ্ধ৷ করে দিচ্ছেন। স্রোতের গতি আরো তীব্র হয়ে উঠল। ছোট্ট তরীটি টাল-মাটাল করে, আশঙ্কায় মলিন রূপমতী ভাবে কি যেন একটা হতে চলেছে, ভয়ংকর কিছু। ঠিক তক্ষুনি ভীমা জলপ্রপাত হয়ে আছড়ে পড়ে অনেক নীচে, আর রূপমতীর তরীটিও স্রোতে ওলটপালট খেতে খেতে কোথায় যে হারিয়ে যায়, রূপমতী আর তার কোনো হদিসই পায় না। ভেসে যাওয়া একলামতী নিজমতী মনটিকে রূপমতী তাই আবার ফিরিয়ে নেয় নিজের কাছে। পাতার তরী কিনা, তাই বেশী দূর যাওয়া গেল না। কিন্তু একদিন ঠিক যাবে………… এজন্মে না হলে পরের জন্মে। এই রূপমতী না হলে আরেকজন রূপমতী….নয়তো আরো একজন…কিন্তু যাবেই।