ট্যাটু দেখাতে মাথা কেটে রাখা হল আজব সংগ্রহে
এই ট্যাটুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর এক বিচিত্র সংগ্রহের ইতিহাসও। ‘মোকোমোকাই’ বা মৃত মানুষের কাটা মাথার আজব সংগ্রহের কথা কি শুনেছেন কখনো?
সময় তখন ১৮৬৪ সাল। কর্মসূত্রে নিউজিল্যান্ডে যান ব্রিটিশ মেজর জেনারেল হোরাশিও গর্ডন রবলে। সেখানে বেশ কিছু বছর কাটাতে হয় তাকে। এই সময় মাওরি উপজাতিদের গোটা মুখ জুড়ে আঁকা অদ্ভুত সব আঁকিবুকি নজর কাড়ে গর্ডন রবলের। এখনও নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায় বসবাস করে মাওরি উপজাতির মানুষরা।
এই উপজাতির মানুষেরা নিজেদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করার জন্য, তাদের ধর্ম বিশ্বাস বা সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী সারা শরীরে আর মুখে উল্কি বা ট্যাটু করে থাকেন। ‘টা মোকো’ নামে পরিচিত এসব ট্যাটু তাদের মুখে চিরস্থায়ী চিহ্ন তৈরি করে।
মাওরি উপজাতিদের ‘টা মোকো’ জেনারেল গর্ডনকে এতটাই আকৃষ্ট করে যে, তিনি ওই ট্যাটুগুলি নিজের নোট বইতে এঁকে তা নিয়ে লেখালেখি শুরু করে দেন। কিন্তু নিজের হাতে আঁকা ছবি দিয়ে বিষয়টি তিনি পরিষ্কার করে সবাইকে বোঝাতে পারছিলেন না কিছুতেই। বিরবণেও বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছিল না। তাই বিকল্প উপায় ভাবতে শুরু করেন তিনি।
শেষমেশ অদ্ভুত এক পরিকল্পনা আসে তার মাথায়। তিনি ঠিক করেন মৃত মাওরিদের উল্কি করা মাথা কেটে রাখবেন নিজের সংগ্রহে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ! মৃত মাওরি উপজাতিদের কাটা মাথা বিশেষ উপায়ে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ শুরু করেন জেনারেল গর্ডন। তার সংগৃহীত ‘টা মোকো’ অঙ্কিত এই মাথাগুলোকেই বলা হয় ‘মোকোমোকাই’।
অবসরের পর যখন ইংল্যান্ডে ফিরে জেনারেল গর্ডন রবলে, তখন তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি ‘মোকোমোকাই’ বা উল্কি করা কাটা মাথা। কিন্তু পরবর্তীতে বেশির ভাগই সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গার অভাবে আর অযত্নে নষ্ট হয়ে যায়।
বর্তমানে গর্ডন রবলের ‘মোকোমোকাই’-এর কয়েকটি ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’তে সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে।