বিয়ে করতে হলে বরকে মাস খানেক কনের উঠান ঝাঁট দিতেই হবে
কলকাতা টাইমস :
বিয়ে সবার জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বিয়ে যেমন উৎসবের আমেজ তৈরি করে, তেমনি সামাজিক বন্ধন গড়ে। দুটি মানুষের সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতির সঙ্গে দুটি পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। আমাদের দেশে তো বটেই সামাজিক এই উৎসব নিয়ে পুরো বিশ্বেই আছে নানান সংস্কৃতি। হলুদ, মেহেদি, বিয়ে, বৌভাত কত আয়োজন এক বিয়েকে কেন্দ্র করে।
এই দিনটিকে নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে রয়েছে নানান রীতিনীতি, যা নতুন দম্পতির জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি কোথাও নেই।
এমনই কয়েকটি দেশের বিয়ের রীতি নিয়েই আজকের আয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কঙ্গো, চীন, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিয়ের দিনের বিভিন্ন রীতি-
কঙ্গো
কঙ্গোতে বিয়ের রীতিনীতির মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, বর-কনেকে বিয়ের দিন হাসতে দেওয়া হয় না। যদিও এই নিয়ম শুধুই বর-কনের জন্য। বিয়েতে আগত অতিথি, আত্মীয়-স্বজন সবাই হাসতে পারবেন। তারা মনে করেন বিয়ের দিন বর-কনে হাসলে তাদের দাম্পত্য জীবন দুঃখে কাটবে। এজন্য তাদের বিয়ের পুরো দিন, অনুষ্ঠান থেকে রিসেপশন পর্যন্ত দুজনকে হাসতে দেওয়া হয় না। যদি কোনো বর-কনে আসেন তাহলে ধরে নেওয়া হয় তারা এই বিয়ে নিয়ে মোটেই সিরিয়াস না। এমনকি বয়স্করা দুশ্চিন্তায় পরে যান নব দম্পতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
চীন
চীনে বিয়ের একটি রীতি হচ্ছে হবু বর কনের দিকে ধনুক দিয়ে তীর ছুড়বেন। এরপর কনে সেগুলো কুড়িয়ে এনে ভেঙে ফেলবেন। ধারণা করা হয়, এতে তাদের ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী হবে। এছাড়া চীনে আরও অনেক অদ্ভুত রীতি আছে বিয়ের। যেমন- বিয়ের কনে এক মাস আগে থেকেই কাঁদতে শুরু করেন। রোজ এক ঘণ্টা করে কাঁদতে হবে তাকে। আমাদের দেশে যেমন বিয়ের পর কনে বিদায়ের সময় কাঁদেন। তেমনই চীনা নারীরা এ কান্না শুরু করেন এক মাস আগে থেকেই।
চীনে বিয়ের আগে পালন করা হয় কান্না উৎসব। বিয়ের এক মাস আগে থেকে শুরু হয় এ উৎসব। চীনের তুইজা গোষ্ঠীর মেয়েরা এ রীতি পালন করেন। বিয়ের ঠিক ৩০ দিন আগে থেকে তাদের প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘণ্টা কাঁদতে হবে। এই কান্নার উৎসবে কনের সঙ্গে যোগ দেন কনের মা ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নারী সদস্যরা।
স্কটল্যান্ড
এদেশে পালিয়ে বিয়ে করাই রীতি। যা শুরু হয়েছিল কয়েক শতাব্দী আগে। আসলে সেসময় ২১ বছরের কম বয়সী তরুণ তরুণীর বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল। সেসময় এক তরুণ তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন গ্রেটনা গ্রিন নামক এক গ্রামে। সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। এরপর থেকে সেদেশে অনেকেই এই গ্রামে গিয়ে বিয়ে করেন।
জার্মানি
জার্মানিতে বিয়ের আগে বরকে কনের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করতে হয়। এই রীতি যেমন অদ্ভুত তেমনি মজারও। নিয়ম হচ্ছে বিয়ের আগের রাতে কনের বান্ধবীরা ঘরের কাপ, থালা-বাসন সব ছুঁড়ে ফেলবে বাড়ির সামনে। চারদিক থাকবে ভাঙা কাচের টুকরোতে ঢাকা। থালা-বাটি-গ্লাস থেকে ফুলদানি, বাদ যাবে না কোনো কিছুই। ঘরে যত কাচ, সিরামিকের থালা-বাসন আছে সব ভাঙতে হবে। এই ভেঙে যাওয়া কাচের জিনিসপত্র সৌভাগ্য আনতে সাহায্য করে বলেই বিশ্বাস জার্মানিদের। এরপর এই সব কাচের ভাঙা টুকরো পরিষ্কার করবে বর। সঙ্গে কনেও থাকবে। সাহায্য করবে হবু বরকে। একে বিয়ের অংশ বলেই মনে করা হয় সেখানে। জার্মানির প্রায় সব বিয়ের ক্ষেত্রেই এই পল্টারবেন্ড পালন করা হয় বেশ উৎসবের আমেজেই।
দক্ষিণ কোরিয়া
এদেশে বিয়েতে বরের পায়ে মাছের হাড় দিয়ে আঘাত করার অদ্ভুত নিয়ম আছে। বিয়ের মধ্যে বর তার জুতা মোজা খুলে শুয়ে পরে আর তার বন্ধুরা তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে শূন্যে ঝুলিয়ে দেয় তারপর তারা পায়ের পাতায় লাঠি বা হলুদ গরবিনা দিয়ে মারতে থাকে। হলুদ গরবিনা হলো এক প্রজাতির মাছের কাটা আর তারা বিশ্বাস করে যে এটা করলে বিয়ের প্রথম রাতের জন্য বর আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। প্রকৃতপক্ষে এটা বরের জন্য একটু কষ্টসাধ্য হলেও এখানকার উপস্থিত মানুষ বিষয়টা খুব উপভোগ করে।
ইন্দোনেশিয়া
বিয়ের পর তিনদিন শৌচালয় ব্যবহার করেন না এদেশের নবদম্পতিরা। ইন্দোনেশিয়ার টিডং নামের আদিবাসী সম্প্রদায় এমন প্রথাতেই বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, বিয়ের পর প্রথম তিনদিন নবদম্পতির শৌচালয় ব্যবহার করা উচিত হয়। তেমনটা করলে জীবনে নেমে আসবে দুর্ভাগ্য। ভেঙে যেতে পারে বিয়ে। এমনকি অল্প বয়সে প্রাণ হারাতে পারে তাদের সন্তানও।