November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

‘নেট’ যেখানে জাল, চার্জ দিতে পেরোতে হয় দুই নদী সেখানে অনলাইন পড়াশুনা …

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

গ্রামের নিচু ফসলি জমি এখন জলের নিচে। স্কুলের প্রাচির ঘেঁষে বানে জল । বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের পরাশপুর চরের সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেলিম রেজা অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারে কথা শুনে হাসি থামাতে পারেননি। তিনি বলেন, অনলাইন? আমার ছাত্ররা ‘নেট’ বলতে বোঝে মাছ ধরার জাল! জলজ চরে ‘নেট’-এর অন্য কোনো অর্থ হয় না।

ভারতের পরাশপুর, উদয়নগর খণ্ড, নির্মলচর- পদ্মার কোলে মাথা তুলে রয়েছে একের পর এক চর। সেখানে প্রায় পাঁচটি স্কুল রয়েছে। সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীর কাছে ‘নেট’ যেমন অচেনা শব্দ, তেমনই  চর পরাশপুরের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আকাশ মণ্ডল জানায়, মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেলে মূল পদ্মা ও তার শাখা, দুই নদী পেরিয়ে ঘোষপাড়া  বাজারে যেতে হয়। মোবাইল তো চরের লোকদের কাছে খেলনা, তার ওপর আবার স্মার্ট ফোন!

মালদহের হবিবপুরের সজল সিংহ অবশ্য চরের ছাত্র নয়। নিতান্তই ছাপোষা ঘরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সজলের পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম তার দিনমজুর বাবা। তার বাড়িতে সাধারণ একটা মোবাইল আছে বটে, তবে স্মার্টফোন স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু য়।

ইংরেজবাজারের রূপালি সরকার স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, টানাটানির সংসারে মোবাইল থাকলেও নেটের টাকা ভরা তার কাছে ‘বিলাসিতা’। কোচবিহারের ঘুঘুমারি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ধনজিৎ বর্মনের পারিবারিক অবস্থাও একই সুরে বাঁধা। তার বাবা নন্দ বর্মন বলেন, প্রতিমা তৈরি করে সংসার চালাই। এবার প্রতিমার বায়না কোথায়, স্মার্টফোন কিনব কী করে!

করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে লকডাউনের মধ্যে অনলাইন পাঠদান তাই সোনার হরিণ হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রান্তিক বাংলার অনেক গ্রামে। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গৌতমচন্দ্র মাল বলেন, ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের হাতে স্মার্টফোন নেই। সরকারিভাবে বাংলা শিক্ষা পোর্টালে পাঠ্য বিষয় আপলোড করা থাকলেও তারা দেখতে পাচ্ছে না। বহু স্কুলই নিজস্ব উদ্যোগে ই-ক্লাস করছে, কিন্তু মোবাইল না-থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না।
প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও পূর্ব কিংবা পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি কিংবা নদিয়াতেও একই সমস্যা রয়েছে। বর্ধমানের কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার বলেন, এপ্রিল মাসে নবম এবং দশম শ্রেণির দেড়শ ছাত্রকে নিয়ে অনলাইন ক্লাসের ভাবনা ছিল। ৮০ জন শিক্ষার্থী সায় দিল বটে, কিন্তু মে মাসে এক ধাক্কায় ছাত্রসংখ্যা নেমে এল ৫০-এ। এখন ১৫ জন ছাত্র অনলাইনে ক্লাস করছে। বেশির ভাগেরই মোবাইল রিচার্জ করানোর সামর্থ্য নেই।

Related Posts

Leave a Reply