তোতলামিও সেরে যাবে, এভাবে…
[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :
একটি শব্দ বার বার বের হয় কিংবা কথা আটকে যায় বা বাক্য পুরোপুরি আসেনা৷ এছাড়া টেলিফোনে বলা কথাও বোঝা যায় না৷ এরই নাম তোতলামি৷ তোতলা সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা না গেলেও এর চিকিৎসা সম্ভব৷ জেনে নিন কিভাবে৷ তোতলানো কি? জার্মানির গ্যোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মার্টিন সমার তোতলানোকে রেডিও শোনার সঙ্গে তুলনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া, দূরত্ব বা অন্য কোনো কারণে রেডিও শোনার সময় কথা পরিষ্কারভাবে শোনা না গেলেও বিষয়টা বোঝা যায়৷ তাই আমি তোতলানোকে রেডিও শোনার সাথে তুলনা করি৷’ গাড়ি যখন… ‘গাড়িতে যখন রেডিও শুনি তখন গাড়ি মোড় নেওয়ার সময় বা ব্রীজের ওপর চলার সময় বা খুবই সরু রাস্তায় চলার সময় মাঝে মাঝে রেডিওর আওয়াজে বাড়তি শব্দ আসায় আসল কথা ঠিকমতো শোনা যায়না৷ তোতলানো আমার কাছে সেরকই,’ বলেন ডাঃ সমার৷ জার্মানিতে তোতলার সংখ্যা জার্মানিতে তোতলাদের সংখ্যা প্রায় আটলাখ অর্থাৎ জার্মানির মোট জনসংখ্যার আনুমানিক একভাগ৷ এদের মধ্যে ডা. সমারও একজন৷ নিউরোলজিস্ট সমার বলেন, ‘এই সংখ্যা প্রায় সব দেশেই সমান৷
তবে এর মধ্যে ৬০ থেকে ৮০ ভাগ শিশুর তোতলানো নিজে থেকেই একসময় চলে যায়৷’ ডাঃ মার্টিন সমার তোতলারা কথা শুরুর সময় ঠিক এভাবেই কিই…কিই…কি ই বার বার বলেন৷ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মাঝে মাঝে তোতলাদের স্পিচ অর্গান পুরোপুরি ব্লক হয়ে গেলে হয়তো অতটুকুও বলতে পারেন না৷ যা বলতে চান তা কিছুতেই মুখ দিয়ে বের করতে পারেন না৷ বলা বাহুল্য, তুলনামূলকভাবে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যেই তোতলার সংখ্যা বেশি৷ তোতলাদের অবশ্য তোতলামি নিয়েই বেঁচে থাকা শিখতে হয়৷ তোতলামির কারণ এর সঠিক উত্তর গবেষকরা আজও পুরোপুরি খুঁজে বের করতে পারেননি৷ তবে ১৫ বছর আগে এমআরটি-র সহায়তায় করা এক গবেষণায় তোতলাদের মস্তিস্কের সামনের বাঁ দিকে খানিকটা পরিবর্তন বা মস্তিস্ক অন্যরকম দেখা যায়৷ কথা না, গান গাওয়া! তোতলাদের মস্তিস্কের সামনের বাঁদিকে খানিকটা ঘাটতি রয়েছে৷ তবে গান গওয়ার সময় সাধারণত বেশিরভাগই মস্তিস্কের ডানদিকের অর্ধেক সচল হয়৷ সোজা কথায় বলা যায়, কথা বলতে মানুষের মস্তিস্কের বাঁদিক আর গান গাইতে ডান দিকের প্রয়োজন৷ অর্থাৎ তোতলাদের গান গাইতে তেমন কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷ তাই গানের মধ্য দিয়ে তোতলাদের মস্তিস্কের দুদিকের মধ্যে একটা সমন্বয় আনার চেষ্টা করা হয়৷ জেনেটিকও হতে পারে তোতলামির কারণ স্নায়বিক বা মানসিক হতে পারে, যা বিভিন্ন চাপের কারণে আরো বেড়ে যায়৷ তবে সমীক্ষায় জানা গেছে, তোতলাদের মধ্যে ৭৫ ভাগেরই কারণ জেনেটিক বা বংশগত৷ জার্মানির ট্যাক্স কনসালটেন্ট রাইনার ননেনব্যার্গের দাদা ছিলেন তোতলা, তার বাবাও তোতলাতেন৷ তিনি নিজেও তোতলান, আর তাঁর ১৮ বছর বয়সি ছেলে, সেও কথা বলতে তোতলায়৷
জার্মানিতে তোতলাদের উৎসাহ দিতে এবং সহজভাবে কথা বলায় সাহায্য করতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে৷ আছে বিভিন্ন কর্মশালা, ভিডিও এবং টেলিফোনে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা৷ ফ্রিভাবে কথা বলারও নানা রকম ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে পারে৷ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও সেখানে যান৷ ১৯৭৪ সালে কোলন শহরে শুরু হওয়া স্কুলের সেরকম একটি কোর্সে প্রথম থেকেই নিয়মিত অংশ নেন রাইনার ননেনব্যার্গ৷
বিশেষ পদ্ধতি : তোতলাদের জন্য বিশেষ কোর্সগুলোতে চেষ্টা করা হয় সহজ কথা দিয়ে বাক্য গঠন করা এবং আস্তে আস্তে বলা, যাতে করে ভয় দূর হয়ে যায়৷ তাছাড়া ছোট ছোট বাক্যগুলো বার বার বলা, যদিও তা অনেকটা রোবটের মতো শোনায়৷ তোতলাদের জন্য এই বিশেষ পদ্ধতি যারা বের করেছেন তাঁদের একজন চার্লস ফন রিপার৷ তিনি বলেন, ‘তোতলামি করার জন্য আমরা নিজেরা দায়ী নই তা ঠিক, তবে তোতলানোটাকে আরো সহজ ও বোধগম্য করতে কিন্তু আমরা নিজেরাই পারি৷’ খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব যারা তোতলা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন বা আছেন যারা তোতলা হলেও জীবনে সফল অর্থাৎ তোতলামো তাদের সাফল্যের পথে বাধা হতে পারেনি৷ এরকম কয়েকজন হলেন, ব্রিটিশ সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ্য, বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন, অভিনেতা ব্রুস উইলিস, গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল৷