কর্মীদের হিরে-গাড়ি-বাড়ি উপহার দেওয়া হিরে ব্যবসায়ীর ছেলে ২০০ টাকার মজুর
কলকাতা টাইমস :
৪ ছেলেমেয়েকে নিয়ে তখন টানাটানির সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, পড়াশোনা করাবেন কি! সাবজির বয়স তখন ১৪ বছর। তার উপরেই কোপ পড়ল আগে। সংসারের খরচ যোগাতে পড়াশোনা ছাড়িয়ে দেওয়া হল। মামার বাড়ির ব্যবসায় যোগ দিলেন সাবজি। এক এক করে আরও দুই ভাই যোগ দিল সেই ব্যবসায়। তারপর কেটে গেছে ৫ দশক। এর মধ্যে শুধু নিজেদের ব্যবসা তৈরি হয়েছে, তাই নয়। সেই ব্যবসার হাত ধরেই সাবজি ধানজি ঢোলাকিয়া আজ সুরাতের সবচেয়ে বিত্তশালী মানুষ। ভারতের হিরে রফতানিকারকদের মধ্যে প্রথম সারিতেই আসবে তাঁর নাম। কিন্তু তাঁরই ছেলের নাকি দৈনিক আয় মাত্র ২০০ টাকা। নিজের খরচ জোটাতে কখনও কাজ করেছেন জুতোর দোকানে, কখনও বা নামী ফুড চেনে অন্যের এঁটোকাঁটা পরিষ্কার করেছেন। কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর জানলে চমকে যাবেন।
সাবজি ধানজি ঢোলাকিয়া ভারতের অন্যতম নামী হিরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। হরিকৃষ্ণ এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান তিনি। এই সংস্থাটি ভারতের সেরা হিরে প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারক সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। মুম্বইয়ের বান্দ্রার কুরলা কমপ্লেক্সে ‘দ্য ক্যাপিটাল’ নামে ১৯ তলা বিল্ডিংটি সাবজির কোম্পানির হেডকোয়ার্টার।
গৌরীবেন ঢোলাকিয়ার সঙ্গে সাবজির সুখের সংসার। দম্পতির ৪ ছেলেমেয়ে রয়েছে। ১২ হাজার কোটি টাকার মালিক সাবজি ব্যক্তিগত জীবন যাপন করেন একেবারে নিভৃতে। জনসমক্ষে খুব একটা আসেন না তাঁরা কেউই। শুধু তাই নয়, বিপুল টাকা এবং সম্পত্তির মালিক হলেও নিজের শিকড় ভুলে যাননি তিনি। যে সংগ্রাম তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে করতে হয়েছিল, তিনি চান তাঁর সন্তানরাও তা বুঝুক। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে তারা তাঁর এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেও তাদের তা অর্জন করার মূল্যটুকু বুঝতে দিতে চেয়েছেন সাবজি।
ছেলেমেয়েদের প্রত্যেককেই দেশ-বিদেশের নামীদামি স্কুলে ও কলেজে পড়িয়েছেন সাবজি। শোনা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্যাতনামা কলেজ থেকে এমবিএ পাশ করে দেশে ফেরেন তাঁর ছেলে দ্রব্য। তারপরেই মাত্র তিনটি জামা এবং কয়েক হাজার টাকা নগদ দিয়ে দ্রব্যকে কেরলে পাঠিয়ে দেন সাবজি। তাকে সেখানেই কাজ খুঁজে নিতে বলেন তিনি। সাবজি এটুকু নিশ্চিত করেছিলেন, বন্ধুরা কেউ দ্রব্যকে কোনও আর্থিক সাহায্য করছে না। তিনি চেয়েছিলেন দ্রব্য পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করার মূল্য বুঝুক। সেই মতোই কোচিতে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে একটি বেকারিতে কাজ নেন দ্রব্য। এছাড়া ম্যাকডোনাল্ডস এবং একটি জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থাতেও তিনি কাজ করেছেন। ছেলের মূল্যবোধের শিক্ষাগ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে বোঝার পরেই নিজের হীরের ব্যবসায় তাঁকে যোগদান করার অনুমতি দিয়েছেন সাবজি।
একটা সময় ছেলের প্রতি কঠোর আচরণ করলেও সংস্থার কর্মীদের প্রতি তিনি নাকি অত্যন্ত সদয়। দীপাবলিতে যোগ্য কর্মচারীদের ফ্ল্যাট এবং গাড়ি উপহার দিয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন সাবজি। এছাড়া হিরের গয়না, নগদ টাকা, ফিক্সড ডিপোজিটও তিনি বোনাস হিসেবে দান করেছেন। ২০১৮ সালে তাঁর সংস্থায় কর্মরত ৬০০ জনকে গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন সাবজি। তার আগে ২০১৬ সালে ৪০০টি ফ্ল্যাট এবং ১২৬০টি গাড়ি দীপাবলির বোনাস হিসেবে কর্মীদের দিয়েছিলেন এই ব্যবসায়ী। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, প্রত্যেকটি মানুষেরই স্বপ্ন থাকে নিজস্ব একটা বাড়ি এবং গাড়ির। সেই স্বপ্নটুকু পূরণে তিনি শুধু তাঁর কর্মীদের সাহায্য করছেন মাত্র।