November 12, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

অবাক হবেন : চাকরিতেই বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ !

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
পনি শুনে অবাক হবেন যে, কিছু কাজের অভ্যাস আপনার মধ্যে বয়স্কতার ছাপ ফেলতে পারে। আপনি কাজের যে অভ্যাসটাকে নিরীহ মনে করছেন সেটিই হতে পারে আপনাকে অল্পবয়সে বয়স্ক দেখানোর কারণ। এ প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে ত্বকের বয়স দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ৭টি কারণ আলোচনা করা হলো।
* ডেস্কে সারাদিন বসে থাকা
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন আক্ষরিক অর্থে বয়স্ক করতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ১,৫০০ পোস্ট-মেনোপজাল নারীর টেলোমিয়ারস (প্রত্যেক কোষে প্রাপ্ত দৃঢ়ভাবে পেঁচানো প্রান্ত) পর্যবেক্ষণ করেন। যেহেতু আমাদের কোষ বিভাজিত ও বয়স্ক হয়, ফলে টেলোমিয়ারসের বিটস হারাতে থাকে- এর মানে হচ্ছে, বয়স্ক কোষের খাটো টেলোমিয়ারস রয়েছে। শারীরিক সক্রিয়তা পরিমাপ করতে প্রত্যেক নারীকে অ্যাকসেলারোমিটার পরানো হয়েছিল, কারণ গবেষকরা দেখতে চেয়েছিল যে এক্সারসাইজ কোষের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে কিনা। নিষ্ক্রিয় নারীদের (গবেষণায় অংশগ্রহণকারী যেসব নারী সুপারিশকৃত ৩০ মিনিটের এক্সারসাইজ করেনি) মধ্যে যারা দৈনিক দশ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসেছিল তাদের টেলোমিয়ারস যারা এর চেয়ে কম সময় বসেছিল তাদের তুলনায় খাটো ছিল। যেসব নিষ্ক্রিয় নারী বেশি সময় বসেছিল তাদের কোষের বয়স যারা অল্প সময় বসেছিল তাদের তুলনায় ৮ বছর বেড়ে গিয়েছিল। কতটুকু বসা নিরাপদ এবং বসার সম্ভাব্য বয়স্কতার প্রতিক্রিয়া কমাতে কতটুকু এক্সারসাইজ প্রয়োজন তা জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।
* বেশি ঘণ্টা কাজ করা
যেসব লোক সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করে তারা নিজেদেরকে বিভিন্ন রোগ ও স্বাস্থ্য দশার ঝুঁকিতে রাখে। ২০১২ সালের একটি রিভিউ পেপার অনুসারে, পর্যবেক্ষণ গবেষণায় পাওয়া গেছে যে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক লোক সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করেছিল তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। অন্য একটি গবেষণায় (এ গবেষণায় ৩২ বছরের কাজের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করা হয়) পাওয়া গেছে, যে যেসব নারী সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় কাজ করেছিল তাদের হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও নন-স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল। রাতে দীর্ঘ সময় অফিসে থাকা ঘুম বিঘ্নিত করতে পারে- এর ফলে আপনার ব্রেইন পাওয়ার বাধাপ্রাপ্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি কমে যাবে ও মনোযোগ হ্রাস পাবে। এনওয়াইইউ ল্যানগোনের সহকারী অধ্যাপক আজিজি সেইক্সাস সিএনএনকে বলেন, ‘যে দুইটি বিষয় অ্যালঝেইমার’স রোগ ও ডিমেনশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেলুলার ডেব্রিস ও প্রোটিন দূর করার প্রক্রিয়াকে কার্যকর রাখে তার একটি হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে শারীরিক সক্রিয়তা, কিন্তু প্রধান বিষয়টি হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম।’
* অফিস চেয়ারে বসে ঝুঁকে কাজ করা
যদি আপনি ৮০ বছরের বয়স্ক মানুষের মতো ব্যথায় ভুগতে না চান, তাহলে আপনার বসার ভঙ্গি ঠিক করুন। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সিডারস-সিনাই কেরলান-জোব ইনস্টিটিউটের ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিশিয়ান কেন্টন ফিবেল ইউ.এস নিউজকে বলেন, ‘বসার ভুল ভঙ্গি আপনার স্বাস্থ্যের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অসঠিক ভঙ্গি কিছু মাংসপেশি ও জয়েন্টের ওপর অধিক চাপ ফেলে তাদেরকে অতিকাজে ব্যস্ত রেখে ক্লান্ত করে তোলে। ক্রনিক ব্যথায় ভুগছে এমন অনেক লোক বসার ভঙ্গি সঠিক করে ব্যথা হ্রাস করতে পারে।’ সারাদিন অসঠিক ভঙ্গিতে বসে থাকলে আপনার শরীর তার ফাংশনের জন্য পর্যাপ্ত রক্ত সংবহন পাবে না, যার ফলে অল্পবয়সে ভেরিকোস ভেইন দেখা দিতে পারে- ভেরিকোস ভেইন হচ্ছে বর্ধিত শিরা যা সাধারণত বয়স্ক লোকদের ত্বকের নিচে দেখা যায়।
* দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকা
প্রায় ৮০ শতাংশ আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্ক দৈনিক ২ ঘন্টারও বেশি সময় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে, ভিশন কাউন্সিলের (ভিশন কেয়ার প্রোডাক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেসের একটি ট্রেড গ্রুপ) প্রতিবেদন অনুসারে। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান লোক রিপোর্ট করেছে যে তাদের ডিজিটাল আই স্ট্রেইনের উপসর্গ (যেমন- শুষ্ক চোখ, চোখে চাপ পড়া, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং ঘাড় ও কাঁধ ব্যথা) রয়েছে। শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আই হচ্ছে পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকদের একটি কমন সমস্যা, কারণ বয়স্ক হতে থাকলে চোখের পানি উৎপাদন কমতে থাকে। দীর্ঘসময় কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখে চাপ না বাড়ানোর জন্য উপায়ও রয়েছে। আপনি ‘২০-২০-২০’ নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন, এটি একটি ভালো পদক্ষেপ: প্রতি ২০ মিনিটে ডিজিটাল ডিভাইস থেকে চোখ সরিয়ে ২০ ফুট দূরের কেনোকিছুর দিকে অন্তত ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন।
* যানবাহনে দীর্ঘ ভ্রমণ
আপনি হয়তো অনুধাবন করছেন না যে, যানবাহনে দৈনিক দুই ঘণ্টা ভ্রমণ সময় পরিক্রমায় আপনার শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নরওয়ের রেলরোড দিয়ে যাতায়াতকারী চাকরিজীবীদের ওপর চালানো সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব লোকের কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতে (কর্মস্থলে আসতে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় এবং কর্মস্থল থেকে যেতে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময়) দুই ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লেগেছে তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা যারা কম ভ্রমণ করেছে তাদের তুলনায় বেশি ছিল। যেসব চাকরিজীবী ১০ বছর ধরে দীর্ঘ ভ্রমণ করেছে তাদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ও মাস্কুলেস্কেলেটাল সমস্যা (যেমন- পাকস্থলি ব্যথা ও নিম্নস্থ পিঠ ব্যথা) যারা কম ভ্রমণ করেছে তাদের তুলনায় বেশি ছিল। অন্যান্য গবেষণায়ও পাওয়া গেছে যে, চাকরিতে আসা-যাওয়া করতে দীর্ঘ ভ্রমণের সঙ্গে ঘুমের বিঘ্নতা, প্রতিদিনকার স্ট্রেস, ক্লান্তি এবং স্বাস্থ্যের নিম্ন রেটিংয়ের সংযোগ রয়েছে। অন্য একটি গবেষণার লেখকদের মতে, ‘গণপরিবহনে চড়ে চাকরিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে, যা চাকরিজীবী মানুষদের মধ্যে যানবাহন-সম্পর্কিত স্ট্রেস সৃষ্টি করে।’
* বেশি সময় রোদে থাকা
আপনি মনে করতে পারেন যে, ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অফিসের ইনডোরে থাকার ফলে আপনি স্কিন ক্যানসার ও বলিরেখা থেকে সুরক্ষিত। কিন্তু ইনডোরেও আপনার কাছে সূর্যরশ্মি পৌঁছানোর উপায় রয়েছে, যেমন- জানালা। গাড়ির জানালা ইউভিবি রশ্মি প্রতিরোধ করতে পারে, কিন্তু বার্ধক্য ও স্কিন ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইউভিএ রশ্মির অধিকাংশ ধরনই জানালার মধ্য দিয়ে আপনার সংস্পর্শে আসতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ি চালানোর সঙ্গে স্কিন ক্যানসারের বর্ধিত ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে, এর কারণ হচ্ছে জানালার মাধ্যমে সূর্য এক্সপোজ করা। এটি ট্রাক চালকদের জন্য দুঃসংবাদ। একটি গবেষণায় স্কিন ক্যানসারের ৮৫,০০০ কেইস বিশ্লেষণ করা হয় এবং এতে দেখা গেছে যে অধিকাংশ ট্রাক চালকদের বাম বাহু ও মুখের বামপাশে স্কিন ক্যানসার হয়েছে। জেএএমএ ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, এমনকি পাইলট ও কেবিন ক্রু মেম্বারদের মেলানোমা (স্কিন ক্যানসারের সর্বাধিক বিপজ্জনক ধরন) হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ লোকদের তুলনায় দ্বিগুণ। এর কারণ হতে পারে- এয়ারপ্লেন উইন্ডশিল্ড ও কেবিন উইন্ডো গাড়ির জানালার মতোই ইউভিএ রেডিয়েশন তেমন একটা ব্লক করতে পারে না। এছাড়া ইউভি রেডিয়েশনের তীব্রতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রতি ৯০০ মিটার উচ্চতায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
* কর্মস্থলে কলহ
ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অন্তর্গত পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সাইকিয়াট্রি বিভাগের ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জোডি ফোস্টার বলেন, ‘কর্মস্থলে কারো সঙ্গে কলহ হলে তা অমীমাংসিত থেকে যায় এবং এটি আপনার ভেতরটাকে নাড়া দিয়ে আপনার দিন, আপনার কর্মস্থলের বাইরের জীবন ও ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব বিষয় একজন মানুষকে অসুস্থ করতে পারে।’ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় গবেষকরা এর সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন- গবেষণায় পাওয়া গেছে যে যেসব কর্মীরা সহকর্মীদের কাছে বাজে ব্যবহার পেয়েছিল তারা শারীরিক উপসর্গে (যেমন- মাথাব্যথা ও ঘুমহীনতা) ভুগেছিল। এর ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা হারাতে পারে এবং সময় পরিক্রমায় বলিরেখা ওঠতে পারে, কারণ আপনার শরীর কোষের মেরামত ও আরোগ্যলাভের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পাচ্ছে না।

Related Posts

Leave a Reply