ভাগ্য ফেরাতে অবাক কাণ্ড!
কলকাতা টাইমস :
যুগে যুগে মানবজীবনের সঙ্গে মিশে রয়েছে কুসংস্কার। টালমাটাল অবস্থা বা অনিশ্চয়তা থেকেই মানুষ অন্ধবিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে পরিস্থিতিকে নিয়্ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিচিত্র সব সংস্কার সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। এখানে দেখুন এমনই কিছু ভিত্তিহীন বিশ্বাসের কথা। তারা ভাবেন, এগুলো ভাগ্য ফেরাতে সহায়তা করে।
১. নতুন বছরে ভাগ্য ফেরাতে কলম্বিয়ানরা অন্তর্বাসকেই বেছে নিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে হলুদ রংয়ের আন্ডারওয়্যার উল্টো করে পরলে বছরটা সৌভাগ্য, ভালোবাসা ও উন্নতিতে পরিপূর্ণ থাকবে। একই বিশ্বাস ছড়িয়ে রয়েছে স্পেনে। তবে তারা লাল রংয়ের অন্তর্বাস বেছে নিয়েছেন।
২. শিশু জন্মের পর কয়েক বছর বেশ ঝুঁকির মধ্যে থাকে তারা। চীনাদের বিশ্বাস, ভাগ্য ভালো থাকলে শিশুটি বেড়ে উঠবে। আর ভাগ্যবিধাতাকে সুপ্রসন্ন করতে তারা এক অদ্ভুত উপায় বেছে নেন। আদর করে তারা শিশুকে অপনামে ডাকেন। যেমন ‘দুর্গন্ধযুক্ত শুকর’ বা ‘কুকুরের বিষ্ঠা’ ইত্যাদি। এসব নামে ডাকলে নাকি দুর্ভাগ্য বিদায় নেয়।
৩. বেশ কয়েক ধরনের পুরুষ মামালের যৌনাঙ্গে হাড় আছে। একে বলা হয় ব্যাকুলাম। এর কারণ নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার দক্ষিণের কিছু অঞ্চলে এই হাড়কে ভাগ্যের চাবিকাঠি বলে বিশ্বাস করা হয়। মানুষ তার পকেটে এসব মামালের ব্যাকুলাম রাখেন। আবার অনেকে গলায় পরেন।
৪. ষোড়শ শতকের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়। নারীদের গর্ভকালীন বেদনা কমাতে হবু বাবারা বিশেষ ধরনের ‘গ্রোনিং চিজ’ বানাতেন। সন্তান জন্মের পর বাবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল, চিজটি কেটে বাড়ির সবার মাঝে ভাগ করে দেওয়া। এর গোলাকার একটি অংশ ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্যে রাখা হতো। এর মাধ্যমেই শিশুটি দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পেত বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা হতো।
৫. দুর্ভাগ্যের ধারণাটি সংক্রামক। কিন্তু যদি আপনি এমন কারো সংস্পর্শে থাকেন যিনি অভিশম্পাত করা হয়েছে, তখন কি করবেন? যদি আপনি আর্জেন্টিনা বা উরুগুয়ের অধিবাসী হয়ে থাকেন, তবে অদ্ভুত এক কাজ করতে হবে। নইলে যেন বিপদ। আশপাশের কোনো মানুষ অভিশপ্ত জানান পর পরই পুরুষরা তার বাম পাশের অণ্ডকোষ এবং নারীরা তার বাম পাশের স্তন স্পর্শ করেন।
৬. পুরনো ব্রিটিশ কিংবদন্তি বলছে, গুড ফ্রাইডেতে যে হট ক্রস বানগুলো বানানো হয় তা কখনো নষ্ট হয় না। এগুলো পরবর্তী ইস্টার পর্যন্ত রাখা হলে বছরটি খারাপ যাবে না।
৭. কোনো নারী খালি একটি পাত্র নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তার মুখোমুখি হওয়াটাকে রাশিয়ায় খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করা হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রাশিয়ার রাস্তার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তাদের ময়লার পাত্রে অন্তত একটি পাতা ও ঝাড়ু নিয়ে বের হন।
৮. গাড়ির রেস প্রতিযোগিতা নাসকার ইভেন্টে বাদাম খাওয়াটাকে দুর্ঘটনার কারণ বলে বিশ্বাস করা হয়। ১৯৩৭ সালে দুটো দুর্ঘটনা ঘটে। এর পেছনে কোনোভাবেই বাদামকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেই দায়ী করা হয়।
৯. গাছে বা তারে পাখি বসে রয়েছে। তার নিচে দাঁড়ালে আপনার কাপড় বা জুতো নোংরা করে দিতে পারে। কিন্তু রাশিয়ায় বিশ্বাস করা হয়, এতে আপনার ওপর অভিশাপ নেমে আসলো।
১০. স্পেনে নতুন বছর ভাগ্যটাকে সুপ্রসন্ন করতে মানুষ মধ্যরাতে ১২টি আঙুর খেয়ে থাকেন। এগুলোকে বলা হয় ‘ভাগ্যের আঙুর’। যদি একযোগে ১২টা বড় আকারের আঙুর মুখে পুরে খাওয়া যায়, তবে সৌভাগ্য নিশ্চিত। কিন্তু যদি ব্যর্থ হন, তবে হাসপাতালে ছুটতে হয় অনেককে।
১১. ধরুন আপনি কোনো চাকরির ইন্টারভিউয়ে যাচ্ছেন। আর আপনি আছেন সার্বিয়াতে। এ সময় শুভাকাঙ্ক্ষীরা আপনার যাত্রার শুরুতে পথে পানি ছিটিয়ে দেবেন। এতে যাত্রাপথ মসৃণ ও তারল্যপূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস তাদের।
১২. বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মাছ শিকারের নেশা রয়েছে আমেরিকান স্পোর্ট ফিশারদের। কিন্তু তাদের বিশ্বাস, এ যাত্রায় কলা নিয়ে বেরোলে সমুদ্রের মাঝে জাহাজ ডুবে মারা পড়তে হবে। বিষয়টি কঠিনভাবে মেনে চলেন তারা।
১৩. থাইল্যান্ডে যাবতীয় সৌভাগ্য ফেরাতে ‘পালাদ খিক’ বা ‘ডেপুটি পেনিস’ ঝোলানো হয় গলায়। এই দ্বিতীয় পুরুষাঙ্গটিকে সৌভাগ্যের মাপকাঠি বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। মূলত হিন্দুদের দেবতা শিবের বিষয়টি মাথায় রেখে এ সংস্কার ছড়িয়েছে থাইল্যান্ডে।
১৪. অস্ট্রেলিয়ার যে সকল ব্রিটিশরা নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাদের মধ্যে অদ্ভুত কুসংস্কার ছড়িয়ে রয়েছে। তারা অশুভ শক্তিতে বিতাড়িত করতে বাচ্চাদের সকল জুতা, পোশাক এবং তাদের যত জিনিসপত্র আলমারিতে লুকিয়ে রাখেন।
১৫. নেদারল্যান্ডসের এক বিদঘুটে কুসংস্কার এটি। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা মাকড়সা দেখতে চান। এতে নাকি দিনটি ভালো যায়। আর দুপুরে দেখলে সৌভাগ্য কিছুটা কমে আসে।