November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

কুফল সত্ত্বেও জনপ্রিয় হচ্ছে সারোগেসি, কারণ অবাক করবে ?

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
জকাল অবশ্য Surrogate motherhood বা মাতৃভূমিকা পালন কথাটা ব্যবহার করা হয় একটি বিশেষ প্রসঙ্গে- সেটা হল নিঃসন্তান দম্পতির জন্য নিজের গর্ভে তাদের সন্তান ধারণ করে জন্মের পর তাদের সেই সন্তানকে দিয়ে দেওয়া।
এক্ষেত্রে ‘তাদের’ কথাটি ব্যবহার করা হচ্ছে একটু ব্যাপক অর্থে। অনেক সময়ে সেই নিঃসন্তান দম্পতির ইংরেজি surrogate কথাটা ল্যাটিন surrogo থেকে এসেছে- যার অর্থ কারুর পরিবর্তে। surrogate mother বলতে বোঝায় আসল মায়ের অবর্তমানে যে মায়ের ভূমিকা নিয়েছে।

স্বামীর শুক্রাণু কৃত্রিম উপায়ে surrogate mother বা মাতৃভূমিকা পালিকা নারীর গর্ভে স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ, সেই পুরুষের সন্তান মহিলা ধারণ করে। সন্তানের জন্ম হলে নিঃসন্তান দম্পতি সন্তানটি লাভ করে। এক্ষেত্রে সন্তানটির সঙ্গে মাতৃভূমিকা পালিতা নারীর একটি জৈবিক যোগ থেকে যাচ্ছে, কারণ সন্তানটি তারও সন্তান। এইসব ক্ষেত্রে ‘নিজের’ সন্তান পরিত্যাগ করার সময়ে একটি প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে মহিলাটিকে যেতে পারে।

তবে আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই নিঃসন্তান দম্পতির নিজেদের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কাজে লাগানো হয়। যদি সেগুলোর কোনো একটিতে অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে তৃতীয় কোনো মহিলা বা পুরুষের ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ব্যবহৃত হয়। শুক্রাণু দিয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করা হয় একটি টেস্ট টিউব-এ। এই পদ্ধতিকে IVF বা in vitro fertilization বলা হয়।

স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহৃত হলে টেস্ট টিউব-এ যে ভ্রুণের সৃষ্টি হয়, সেটি এই দম্পতিরই আপন সন্তান। এই ভ্রুণকে পরে surrogate mother-এর গর্ভাশয় বা জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে surrogate mother-এর জরায়ুটা বা গর্ভাশয়কে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যের সন্তানকে বড় করতে দেওয়ার জন্য। সেইজন্য অনেক সময়ে womb for rent কথাটা ব্যবহার করা হয়।

অনেক দেশেই এইভাবে সন্তান লাভ আইন-সঙ্গত নয়। সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইত্যাদি ইউরোপের কতগুলি দেশে surrogate mother-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিছু কিছু দেশে এটির ব্যাপক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ ছাড়া এ বিষয়ে লেনদেনকে বে-আইনি ঘোষিত করা হয়েছে।

এই পদ্ধতি সন্তানহীন দম্পতিকে আপন সন্তান লাভের সুযোগ দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, পরিবর্তে অন্য একটি নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব ফেলছে – তা মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। যে নারী surrogate মায়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তার নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এতে বিপন্ন হতে পারে- গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে এবং সন্তানকে হস্তান্তর করার সময়ে।

ভারতবর্ষে surrogate mother-এর ব্যাপারে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়নি। Indian Council of Medical Research-এর কিছু নির্দেশিকা এ ব্যাপারে আছে, কিন্তু সেটি মেনে চলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

নির্দেশাবলীর মধ্যে রয়েছে- যেসব ক্লিনিক-এই ব্যাপারে জড়িত তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। surrogate মায়ের নাম এবং যে দম্পতির সন্তান সে বহন করছে – তাদের দু’জনের নামই রেজিস্ট্রিতে রাখতে হবে। কোনো নারীই তিনবারের বেশি surrogate মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারবে না, surrogate মায়ের গর্ভ সংক্রান্ত সমস্ত খরচা সন্তানের আইন-সম্মত পিতামাতাকে বহন করতে হবে। surrogate মা-কে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে, ইত্যাদি।

surrogate মায়েদের টাকা নেবার অধিকার আমেরিকাতেও রয়েছে। সেখানে সাধারণতঃ ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার থেকে ৯ লক্ষ টাকা এই দায়িত্বের জন্য surrogate মায়েরা পায়। তারওপর আনুষঙ্গিক ডাক্তারি খরচাতো আছেই। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়ার খরচা ষাট হাজার ডলার বা ২৭ লক্ষ টাকার মতো হওয়া বিচিত্র নয়।

ভারতবর্ষে সেই তুলনায় অনেক কম পয়সায় surrogate মা পাওয়া যায়। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী surrogate মায়েদের জন্য এই খর্চা ভারতবর্ষে ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষের মধ্যে। ক্লিনিক ইত্যাদির খরচ নিয়ে পুরো ব্যাপারটা পাঁচ সাড়ে পাঁচ লক্ষের মধ্যেই চুকে যায়।

এর অর্থ ‘রিপ্রোডাক্টিভ ট্যুরিজম’ ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে বাড়বে। সেটা কতটা বাঞ্ছনীয় সেটা অবশ্যই একটা প্রশ্ন। সানন্দে এই কাজ খুব অল্প নারীই নেয়। এই দায়িত্ব পালন করতে স্বীকৃত হন সাধারণভাবে দুস্থ নারীরা, যাদের অর্থের বিশেষ প্রয়োজনে। গরীব দেশে যেখানে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর, লোকে অপুষ্টিতে ভুগছে, সেখানে কোনো দুঃস্থ নারীর গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা-সঙ্কুল।

এছাড়া সামাজিক ও মানসিক চাপের ব্যাপারটাও উপেক্ষণীয় নয়। পয়সার বিনিময়ে গর্ভধারণ এবং পরে সেই সন্তানকে ‘পরিত্যাগ’ করা বহু নারীর পক্ষেই একটি তীব্র মানসিক ধাক্কা। রিপ্রোডাক্টিভ ট্যুরিজম-এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এলেও বিদেশি দম্পতিদের সুবিধার্থে দেশের দুস্থ নারীদের শরীরকে এভাবে ব্যবহার করতে দেওয়ার বিরুদ্ধে একটা জনমত গড়ে উঠছে।

Related Posts

Leave a Reply