সুইস চকোলেট, সুইস ঘড়ি আর সুইস ব্যাঙ্ক-এর গল্প শুধু সুইজারল্যান্ডের
সম্প্রতি প্যারিস থেকে ফ্রান্সের দ্রুততম ট্রেন টিজিবি ডুপ্লেক্সে (যা ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩১৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে থাকে) করে সুইজারল্যান্ডের সুন্দর ও ছবির মত চমৎকার শহর জেনেভায় মাত্র ৩ ঘন্টায় পৌঁছে যাই। টুরিষ্ট বাসে করে জেনেভা শহর ঘুরতে লাগে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা। বলে রাখা ভাল, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো’র ৩৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়াম ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই।
টিজিভি ট্রেনে আমার এই প্রথমবারের মত সফর ছিল। দ্রুতগামী এ ট্রেন সংযুক্ত করেছে ফ্রান্সের প্রধান শহরগুলো ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের রাজধানীগুলোকে। এ ট্রেন তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম। ফলে ওজন কমেছে। প্রতিটি বগি এতটাই শহনশীল, সর্ব্বোচ গতিতে চলাচলের সময় একটি টিজিভি ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত হয়; তাহলে এর বগিগুলো একেবারে দুমরে মুচড়ে যাবে না।
ফ্রান্সের এসএনসিএফ কোম্পানিরে তত্ত্বাবধানে এ ট্রেন ২০১১ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করছে।
বর্তমানে প্রচুর ঠান্ডার শহর জেনেভা। পরিস্কার পরিছন্ন এবং জাঁকজমকপূণ এ শহরটিতে মানুষের আতিথিয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে থাকবে। সুইস চকলেট, সুইস ঘড়ি এবং সুইস ব্যাংকখ্যাত সুইজারহল্যান্ড সত্যিই অভূতপূর্ব। জেনেভা শহরে প্রায় ২ থেকে আড়াই লক্ষ লোকের বসবাস। আর এদের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শত বাংলাদেশির অবস্থান সেখানে।
এদের প্রায় সকলেই রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা, শপিং মল দোকানে কর্মরত এবং অনেক বাংলাদেশি ভাল চাকরির খোঁজে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তবে আমজাদ চৌধুরী (টেলিফোন : +৪১(০)৭৯২২১৯৮৮৪) নামে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের অধিবাসী জেনেভা শহরে বোম্বে রেস্টুরেন্ট, বোম্বেজি প্লাস ও কারি হাউজ নামে বেশ কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা’র পাশাপাশি তিনি সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রধান হিসেবে দেশী মানুষের কল্যাণে অভূতপূর্ব সহযোগিতা করে থাকেন।
লেক লেমন জেনেভা শহরের পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা। তবে এখন জেনেভাতে প্রচন্ড শীত এবং স্নো পরছে। চোখে দেখে এসেছি গুড়ি গুড়ি বরফের বৃষ্টি পরছে আবার নিমিষেই শেষ। এ সময় রৌদ্র বেশ উপভোগ্য। দেশটিতে কোন ক্রাইম বলে কিছু নেই। শান্তির দেশ তবে অবৈধদের থাকার তেমন কোন সুযোগ নেই।
সারা সুইজারল্যান্ডে ৫ থেকে ৬ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। আশার আলো এই যে জেনেভা শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্থাপিত ‘বাংলা পাঠশালা’ নামে সোনামনিদের একটি স্কুল রয়েছে। যার তত্ত্বাবধানে প্রবাসী মাহবুবুর বহমান, শাহাদাত, রিয়াজুল হক ফরহাদ এবং হোসেইন প্রমুখ রয়েছেন। বাংলায় লেখাপড়া ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি এ স্কুলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়ে থাকে।
জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ডে কোন দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। ফ্রান্সের আলমাস শহর জেনেভার নিকটতম সীমান্ত শহর। তবে গ্রীস্মকালে সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করা চমৎকার সময়। বলে রাখা ভাল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে সুন্দর্যময় দেশ। এর প্রাকৃতিক দৃশ্য ইউরোপের সকল দেশকে হার মানায়।
পাহাড়, পর্বত, লেক, ভ্যালি এবং আলপাইন বনাঞ্চল ঘেরা এই দেশটিকে আল্লাহ্ যেন সব কিছু উজার করে দিয়েছেন। জেনেভা-শহর থেকে তিন-চার ঘন্টার মধ্যে জুরিখ, বার্ণ, বাসেল, লজান শহর থেকে ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি, অষ্ট্রিয়ার যে কোন শহরে বাস-ট্রেনে যাতায়াত করা সহজ।
জেনেভা শহরের চারদিকেই হচ্ছে মনোরম। প্রতিটি প্রান্ত চোখ জুড়ানো। ভ্রমণের ক্ষেত্রে দর্শনীয় স্থানগুলো বাছাই করা মুশকিল। জেনেভার লেক চমৎকার ও বিশাল। এছাড়াও প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে ভরপুর জেনেভা শহর। ভ্রমণ যেন শেষ হতে চায় না। যদি কোন সময় জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ড সফরে আসেন তবে গ্রীস্মকালে ভ্রমণের জন্য ভাল সময়। সুযোগ ও সময় করে দেখে আসুন না জেনেভা শহর বা গোটা সুইজারল্যান্ড। তবে দেশটি কোন ভাবেই ভুলে থাকার নয়।