সফলতা নয় শিশুদের শেখান কিভাবে ব্যর্থ হতে হয়
এ বছরের ‘আর্কিবাল্ড প্রাইজ’ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারলেন না চিত্রশিল্পী জেমস পোডিচ। তার কাছে বিষয়টি ব্যর্থতা। যেকোনো মানুষ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন জেতার জন্য। ব্যক্তিগত, পরিবার বা সমাজে আমরা ব্যর্থতাকে বাজে কোনো বিষয় বলেই গণ্য করে থাকি।
ব্যর্থতার দায় নিয়ে পোডিচ তার ক্যারিয়ারের ধূসর দিকটি দেখলেন। সাংবাদিকদের বললেন, আমার ক্যারিয়ার কোনো দিকেই যাচ্ছে না।
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে আত্মমুগ্ধতাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে গণ্য করা হয়। সোশাল মিডিয়ায় মানুষ ক্রমাগত নিজেদের নিঁখুত জীবনযাপনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ছুটির দিনে পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়াসহ নিজের স্মার্ট ছবি দিয়ে তুষ্ট থাকছি আমরা। তবে এসব বিষয়কে বেশ ফালতু বলে মনে করা হয়। আধুনিক যুগে বিষয়টি পরিপক্কতা পাচ্ছে এবং এখান থেকে বেরিয় আসার পথ ক্রমশই কঠিন হয়ে উঠছে।
আবার মুখোশটা অনেক সময় খুলে যায়। সোশাল মিডিয়া তারকা জো ফস্টার ব্লেক সম্প্রতি তার পরিবারের ছবি ইন্সটাগ্রামে দিয়েছেন। তাদের আদরের সন্তান নিয়ে ইতালিতে ছুটি কাটাচ্ছেন। সেখানে কমেন্টে লেখা হয়েছে, ফস্টারের জীবনে এখনো পরিপূর্ণ নয়।
বহু গবেষণায় উঠে এসেছে যে, তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের বেহাল দশা সোশাল মিডিয়ার কারণে ঘটেছে। দৈহিক ও বাহ্যিক সফলতার ছবি মানুষে পরিচয় তুলে ধরছে। কোথাও শিশুদের ব্যর্থতা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয় না। কোথাও বলা হয় না যে, ব্যর্থতা প্রতিদিনের জীবনের ছোট এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
গত বছর আমেরিকার এক স্কুলের শিক্ষিকা জেসিকা লাহে ‘দ্য গিফট অব ফেউলুর’ নামে একই বই লিখেছেন। তিনি তুলে এনেছেন বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা। তিনি দেখেছেন, বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের ক্রমাগত ব্যর্থতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমনও বাবা-মা আছেন যারা শিশুর অ্যাসাইনমেন্ট নিজে করে দেন। স্কুলে সে খাবার খেতে ভুলে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় থাকেন। অথচ শিশুরা নিজের ভুল শুধরে নিয়ে আবারো ঠিকঠাক কিভাবে হবে, সে শিক্ষার বোনো সুযোগ রাখেন না।
অযোগ্য অভিভাবক তারাই যারা শিশুকে শুধুমাত্র সফলতার শিক্ষা দেন। তারা ব্যর্থতা থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চান। তাদের শিশুরা কখনো স্বাভাবিক ব্যর্থতার শিক্ষা পায়নি। অথচ বড় হয়ে তারা যখন ব্যর্থ হবে, তখন তাকে বাঁচাতে ছুটতে পারবেন না বাবা-মা। এ ধরনের শিশুরা সব সময় অন্যের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকবে।
ব্যর্থতার খুব কাছের বিষয় হলো অনুতাপ। কিছু ব্যর্থতা মানুষকে সমাধানের পথ খুঁজতে উৎসাহী করে। এটি মানুষকে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। ব্যর্থতা মানুষকে স্থিতিস্থাপক হতে শেখায়।
২০১৩ সালে গার্ডিয়ান প্রকাশ করে ব্যর্থতা বিষয়ে ৭ জন লেখকের চিন্তা-ভাবনার কথা। ডায়ানা অ্যাথিল তার ২২-৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যর্থতার ইতিহাস তুলে ধরেন। মার্গারেট অ্যাটউড প্রশ্ন রেখেছেন, যেকোনো মূল্যে সফল হতে কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? সফল হওয়ার হাজানো উপায়ের জানান দেওয়া হাজারো বইয়ের কথা তুলে ধরেছেন লিওনেল শ্রিভার। কিন্তু কোথাও বলা হয় না, ব্যর্থতাকে কিভাবে কাজে লাগাতে হবে?
তাই স্কুলে শিশুদের ব্যর্থতার শিক্ষা দিতে হবে। সোশাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে কথা বলতে হবে।