November 25, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

লেবু খাওয়ার পর যে বড় ভুলটি আমরা প্রায় সকলেই করি

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
মাদের দেশে ভিটামিন-সি এর সবচেয়ে ভালো উৎস হিসেবে ধরা হয় লেবুকে। আর বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস মহামা’রির কালে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বারবার বলছে বেশি বেশি ভিটামিন সি গ্রহণ করতে। তাহলে কি লেবুর রস বের করার পর তার খোসা ফেলে দেওয়া হবে?  লেবু খাওয়ার পর একটি বড় ভুল আমরা প্রায় সকলেই করে থাকি। আপনার স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্য লেবুর খোসা কতটুকু দরকারি তা জানার পর আপনি নিশ্চিত খোসা ফেলে দেওয়ার অভ্যাস বদলে ফেলবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, লেবু ও খোসার উপকারিতা ও ব্যবহার সর্ম্পকে।

পুষ্টি সরবরাহ: লেবুর রসের মতো খোসাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন। এক কথায় বলা যায়, রসের চেয়ে এর খোসা প্রায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। প্রায় ১০০ গ্রাম লেবুর খোসায় ১৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ১২৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি এবং ১০.৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

হাড় মজবুত করে: আপনার হাড় মজবুত ও হাড়ের স্বাস্থ্যগত উন্নতি করতে পারে ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়াম। লেবুর খোসার এই পুষ্টিগুলো প্রদাহজনিত পলি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগও প্র’তিরোধ করতে সহায়তা করে।

ক্যানসার প্র’তিরোধক: লেবুর রসের মতো লেবুর খোসাতেও সাইট্রাস বায়োফ্লাভোনয়েড সমৃদ্ধ। যা জারণ চাপের মাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। পাশাপাশি দেহের ভেতরকে ক্ষারীয় করে তোলে। লেবুর খোসা ক্যানসারও প্র’তিরোধ করতে পারে। লেবুর খোসা দেহের ভেতরে ক্যানসার কোষগুলোর বেড়ে ওঠার বিরুদ্ধে ল’ড়াই করার মতো উপাদান লিমোনিন এবং সালভস্ট্রোল কিউ৪০ সরবরাহ করে থাকে।

ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া প্র’তিরোধ: ভিটামিন-সি’র অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা নাড়িভুঁড়ি/ অন্ত্রের ভেতরে থাকা কৃমি এবং পরজীবী জীবাণু মে’রে ফেলে। এছাড়াও দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে বিভিন্ন ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সং’ক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে।

কীভাবে খাবেন লেবুর খোসা?

লেবু থেকে খোসা ছাড়ানোর পর এটি আপনি শুকিয়ে রাখতে পারেন। যাতে এগুলোকে ভালোভাবে গুড়ো করা যায়। খোসা শুকনোর সহজ একটি উপায় হলো, ওভেন ব্যবহার করে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় তা ভাজাভাজা করা নিতে পারেন এবং সেঁকা খোসাগুলোকে গুঁড়ো করে নিন। এরপর সেই গুঁড়ো বিভিন্নভাবে প্রতিদিনকার খাবার, পানীয়, অর্গানিক চা বা স্যুপের মধ্যে মিশিয়ে খেতে পারেন।

কতটা নিরাপদ?

লেবুর খোসা অক্সালেটের এক বড় উৎস। দেহে প্রতিদিন ৮০ মিলিগ্রামের বেশি অক্সালেট গ্রহণ করলে কিডনি এবং পিত্তথলিতে পাথর তৈরি করতে পারে। আর ১ চা চামচ লেবুর খোসাতে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম অক্সালেট থাকতে পারে। তাই, প্রতিদিন সর্বাধিক ৩ চা চামচের বেশি লেবুর খোসা গ্রহণ করা উচিত হবে না।

ত্বকের যত্নে লেবু খোসা: খাবারের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও বেশ উপকারি লেবুর খোসা। এক মুঠো লেবুর খোসার সঙ্গে ১-২ কাপ চিনি দিয়ে ভালো ভাবে পেস্ট তৈরি করুন। এরপর আপনার ত্বকের ধরন বিবেচনা করে তাকে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের চেয়ে শুষ্ক ত্বকে বেশি তেল দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি তৈরির পর তা ভেজা ত্বকে আলতোভাবে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন। এবার পরিষ্কার জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ স্ক্রাব ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখাবে এবং ত্বকের মৃ’ত কোষগুলোকে জীবিত করে তুলবে। এই স্ক্রাবটি শুকনো কনুইকেও নরম করতে সহায়তা করবে। সপ্তাহে একবার লেবুর খোসার স্ক্রাব লাগাতে পারেন।

ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার: এক চিমটি লেবুর খোসার গুঁড়োর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চালের গুড়ো মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি ঠাণ্ডা দুধ দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকের মৃ’ত কোষগুলোকে জীবিত করতে এই পেস্টটি মুখের ভেজা ত্বকে সমানভাবে মেখে দিন। ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার জল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এ ফেস প্যাকটি আপনার ত্বক-কোষকে চাঙা করে তুলবে।

পা ফাটার চিকিৎসা: এক কাপ লেবুর খোসা গুঁড়ো করে নিন এবং তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার তৈরি করা পেষ্টটি ফাটা পায়ে লাগিয়ে নিন। এরপর পায়ে মোজা পড়ে নিন ও কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। পা ধুয়ে ফেলার পর পায়ের ত্বক নরম এবং স্বাস্থ্যকর দেখাবে।

পায়ে ছত্রাকের সং’ক্রমণ রোধ: তিন কাপ লেবুর খোসা, ৬ থেকে ৭ কাপ পানি দিয়ে আধা ঘণ্টা সিদ্ধ করুন। এরপর সিদ্ধ পানি একটি পাত্রে ছেঁকে নিন। সেখানে দুধ বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিন এবং ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। নিয়ম করে এই কাজটি করলে সং’ক্রমণ দূর করতে সহায়তা করবে।

নখ সাদা রাখতে: যারা নখ বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য লেবুর খোসা বেশ উপকারি। এক মুঠো লেবুর খোসা পেস্ট করে নিন এবং তা কয়েক মিনিটের জন্য বিবর্ণ নখগুলোতে ব্যবহার করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ ধরনের যত্ন আপনার নখগুলোকে স্বাভাবিক রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

গৃহস্থালির কাজে লেবুর খোসার ব্যবহার: সব ধরনের পরিচ্ছন্নতায়: জীবাণুমুক্ত রাখতে পরিষ্কারক হিসেবেও লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন। যা করতে হবে, প্রথমে লেবুর খোসাগুলোকে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন এবং ছেঁকে নিন। এবার অ-বিষাক্ত ডিআইওয়াই ক্লিনার তৈরি করতে এই পানির সঙ্গে প্রয়োজন মতো ভিনেগার বা বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এরপর এ পানি দিয়ে ঘরের আসবাবপত্র, মেঝে এবং অন্যান্য ব্যবহার্য তৈজসপত্র পরিস্কার করুন। লেবুর খোসায় থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলোর দাগ তুলে ফেলার ক্ষমতাও রয়েছে।

দুর্গন্ধ দূর করতে: ফ্রিজ, বদ্ধ ড্রয়ার কিংবা ট্র্যাশ ক্যান ইত্যাদির ভেতরে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করতে লেবুর খোসা বেশ কার্যকর। লেবুর খোসা মাইক্রোওয়েভ, কাটার বোর্ড এবং অন্যান্য ব্যবহার্য পাত্র পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে যাদুর মতো কাজ করে থাকে। বাটির পানিতে কয়েকটি লেবুর খোসা দিয়ে কিছু সময়ের জন্য মাইক্রোওয়েভের ভেতরে রেখে দিন। এটি মাইক্রোওয়েভের ভেতরের দুর্গন্ধকে সতেজ গন্ধে পরিণত করবে। আর কাটার বোর্ডকে জীবাণুমুক্ত করতে লেবুর খোসার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ঘষুন। তারপরে ধুয়ে ফেলুন।

রুম ফ্রেশনার হিসেবে: লেবুর খোসা ব্যবহার করে ঘরেই তৈরি করুন প্রাকৃতিক রুম ফ্রেশনার। শুকনো ফুল এবং প্রয়োজনীয় তেলের সঙ্গে লেবুর খোসা মেশান। এবার এ সাইট্রাস-সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণটি পরিষ্কার একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। এভাবে আপনি ঘরকে সবসময় সুবাসিত রাখতে পারেন।

পোকা-মাকড় তাড়ায়: বাড়িতে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে বিকল্প হতে পারে লেবুর খোসার ব্যবহার। বিশেষ করে পিঁপড়া, তেলাপোকা ইত্যাদি লেবুর গন্ধ সহ্য করতে পারে না। সুতরাং, আপনি আপনার ঘরের কোণে বা যেখানে পোকামাকড়ের উপদ্রব আছে সেখানে লেবুর খোসা ছড়িয়ে রাখতে পারেন। মশার মতো পোকার হাত থেকেও আপনার ত্বককে বাঁচাতে পারে লেবুর খোসার ব্যবহার।

Related Posts

Leave a Reply